কোভিড আবহে প্রথম রাজনৈতিক সভাতেই রণংদেহী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-বাম-দুই শিবিরকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন। হুঙ্কার দিয়ে বললেন, 'বাঁকুড়ার একটি একটি করে আসন বুঝে নেব। একটাতেও বিজেপি থাকবে না। একটাতেও সিপিএম থাকবে না।' তাঁর চ্যালেঞ্জ, 'তোদের ক্ষমতা থাকলে আমাকে গ্রেফতার কর। আমি জেলে থাকব। আমি জেলে থেকে বাংলাকে জেতাব।'
বুধবার বাঁকুড়ার শকুনপাহাড়ীর মাঠে সভা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেখানেই সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনকালের সমালোচনা করতে শোনা যায় তাঁকে। একই সঙ্গে বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি ভয় ও টাকার লোভ দেখিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকে বিব্রত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি 'সিপিএমের হার্মাদই আজ তৃণমূলের হার্মাদ। শুধু রঙ বদল হয়েছে। আগে যারা সিপিএম ছিলল এখন তারাই বিজেপি।'
ঠিক কী বলেছেন মমতা?
বাম-বিজেপিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘বাঁকুড়ার প্রতিটি জায়গা শান্তিতে রয়েছে। আর তা দেখে খুব রাগ হয়েছে সিপিএম, বিজেপি আর কংগ্রেসের।’ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘তিনটে জদাই, মাধাই, গদাই এক হয়েছে। আর এক হয়ে তৃণমূলকে হারানোর জন্য লোকসভা নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করেছে। একসঙ্গে টাকা নিয়েছে, একসঙ্গে ভোট দিয়েছে। যে সিপিএমের হার্মাদ এক সময় মানুষের ওপর অত্যাচার করেছিল সেই হার্মাদ বিজেপি–র হার্মাদে পরিণত হয়েছে। রঙটা শুধু পাল্টে গিয়েছে। হৃদয়টা একই আছে।’
এরপরই বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা। বলেন, 'ওরা বলছে হয় ঘরে থাকো-নয় জেলে থাকো। মনে রাখবেন, এই সব চমকানি, ধমকানি, টাকার কাছে আমি ভয় পাই না। আমি বলছি পারলে আমাকে জেলে ভরো। চ্যালেঞ্জ করছি জেল থেকে আমি বাংলাকে জিতিয়ে দিব।'
তাঁর কথায়, ‘লালুপ্রসাদ যাদবকে তো অনেকদিন ধরে জেলে পুরে রেখেছ। তাতে আটকাতে পেরেছ? ওখানে ম্যানুপুলেশন হয়েছে।’ বিহারে বিধানসভা ভোটে বিজেপি–র জেতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিহারে ওটা জেতা? ওটা হারাই, ওটা জেতা নয়।’
এরপরই তাঁর হুঙ্কার, 'বাঁকুড়ার একটি একটি করে আসন বুঝে নেব। একটাতেও বিজেপি থাকবে না। একটাতেও সিপিএম থাকবে না।' সিপিএম–কে মমতার কটাক্ষ, ‘সিপিএম–কে দেখে আরও লজ্জা হয়। সব নির্লজ্জ। এরা বিজেপি–র পায়ে পড়েছে নিজেদের চুরি থেকে বাঁচানোর জন্য। সারদা–নারদা কিন্তু ওরাই করেছে।’
রাজ্যে ভোটের আগে পদ্ম বাহিনী তৃণমূলের বিধায়ক কিনতে লোভ দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তৃণণমূল নেত্রী। বলেন, 'অনেক টাকা হয়েছে না? হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা। আগে খেতে পেত না। একটা বিড়ি তিনবার টানত। আর এখন, টাকার অফার। ফোন করে তৃণমূলকর্মী, বিধায়কদের লক্ষ, কোটি টাকার অফার দিচ্ছে। এটা একটা রাজনৈতিক দল? বলতে লজ্জা হয়।' তবে এদিনও জনগণের উদ্দেশে নেত্রী পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, 'টাকা দিলে সেই টাকা নিয়ে নেবেন। মনো রাখবেন ওগুলো আপনাদেরই।'
ভোটের আগে সিপিএম ও বিজেপিকে এক সূত্রে গাঁথতে মরিয়া মমতা। দলীয় কর্মীদের বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, 'দলীয় কর্মীদের লোভী হলে চলবে না। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস করতে হলে ত্যাগী হতে হবে।' তাঁর দাবি, ' রাজনীতিতে তিন ধরনের লোক থাকে। লোভী, ভোগী আর ত্যাগী। সিপিএম হচ্ছে আজ সবচেয়ে বড় লোভী। বিজেপি হল ভোগী। আর তৃণমূল দল যদি করতে হয় তবে আপনাদের হতে হবে ত্যাগী। ওই লোভের পাল্লায় পড়বেন না।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন