ফের 'দলবদলু'দের কড়া বার্ত দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। একই সঙ্গে দলত্যাগীদের 'চোর', 'ডাকাত' বলেও সম্বোধন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেসব বিধায়ক দল বদল করেছেন তাঁদের এবার ভোটে টিকিট দেওয়া হত না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন নেত্রী। ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ক্ষমতার লোভেই অন্য দলে নাম লেখাচ্ছেন ওই সব 'দলবদলু'রা।
রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভায় এদিন হাজির হয়ে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই গত দশ বছরের রাজ্য সরকারের কাজের সাফল্যের খতিয়ান পেশ করেন তিনি। একই সঙ্গে কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প ও বিজেপির 'অপপ্রচারে'র বিরুদ্ধে সরব হন। গেরুয়া শিবির টাকা দিয়ে যাতে ভোট কিনতে না পারে সেবিষয়ে সচেতন করেন মমতা। তাঁর হুঁশিয়ারি, 'নির্বাচনের সময় অনেক কথা বলা হয়। কিন্তু কার্যকরী হয় না। আমরা করে বলি। ওরা যা বলে করে না। যে টাকা ওরা দেবে সেটায় খেয়ে ফেলুন। টাকা দিয়ে যেন ভোট করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।'
বক্তব্যে দলত্যাগের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, 'কয়েকটা চোর ডাকাত হঠাৎ করে প্রচুর টাকা করেছে। ওগুলো রক্যা করার জনব্য গোবর্ধনের কাছে জমা রাখতে যাচ্ছে। বিজেপি ওয়াশিং মেশিনে কালো হয়ে যাচ্ছে, সাদা হয়ে ফিরবে। চিন্তার কোনও কারণ নেই। ওমি ওদের টিকিট দিতাম না। খারাপ কাজ করলে আমি দেব কেন বলুন। সেই জায়গায় নতুনদের দিলে মানুষ খুশি হবে।' দল ছাড়ার হিড়িক লাগলেও তৃণমূলই ফের বাংলার মসনদে বসবে বলেই আত্মবিশ্বাসী তিনি।
অর্থাৎ, তৃণমূলে থাকলে হলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়েই যে রাজনীতি করতে হবে তা এদিন পরিষ্কার করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ভোট এলেই কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-ইডি দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে বিজেপি। কিন্তু এতে তৃণমূল কংগ্রেস মাথা নত করবে না ফের স্পষ্ট করেন মমতা।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। একই পথ অনুসরণ করেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়ারা। সম্প্রতি গত দেড় মাসে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক, এক সাংসদ ও দলের বেশ কিছি নেতা পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। রবিবার জুমুরজলার সভা থেকে ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় 'তৃণমূল কংগ্রেস কোম্পানি'কে সাফ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু। 'চল পাল্টাই'য়ের ডাক দিয়েছেন রাজীব। ইঙ্গিত স্পষ্ট, ভোটের আগে তৃণমূলে আরও ভাঙন ধরাতে মরিয়া গেরুয়া বাহিনী।
দল পরিবর্তনের এই ঝড়ে স্বস্তিতে অমিত শাহ। গতকালই মমতাকে নিশানা করে তিনি বলেছেন, 'তৃণমূলের ভালো নেতারা একে একে বিজেপিতে আসছেন। পরিবর্তনের ঝড় বইছে। দিদি একসময় দেখবেন আপনি একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন।'
এই পেক্ষাপটে এদিন তৃণমূল নেত্রীর দলত্যাগীদের হুঁশিয়ারি তাৎপর্যবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, লকডাউনে রেশন দুর্নীতি নিয়েও মমতা সরকারকে কড়া আক্রমণ শানাচ্ছেন বিরোধিরা। দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'কোভিডের সময় আমি নিজেও রেশন দোকানে ঘুরেছি। ঠিকমতোই সব চলেছে। একটা-দুটো রেশন দোকানে গন্ডগোল হয়েছে। তা নিয়ে অনেকে মিথ্যা কথা রটিয়ে দেওয়াও হয়েছে। হামলাও করা হয়। যাদের কোনও কাজ নেই তারাই হিংসুটের মতো কাজ করছে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন