শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, বাংলাকে মডেল করে সৈকত রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নই তৃণমূলের লক্ষ্য। গোয়ায় দাঁড়িয়ে প্রথম ভাষণেই এই বার্তা দিলেন তৃণমূলে সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঋজু কণ্ঠে বললেন, 'গোয়ার মানুষ ভোটে তৃণমূলের উপর আস্থা রাখলে বিজেপির কাছে মাথা নত না করে আপসহীন লড়়াই করব।' মুখ খুললেন তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির 'বহিরাগত' তকমা নিয়েও।
বাংলার মাটিতে আটকে থাকা নয়, এবার দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে সচেষ্ট জোড়া-ফুল শিবির। ত্রিপুরা, অসমের পর তৃণমূলের নজরে গোয়া। ইতিমধ্যেই আরব সাগরের তীরে পৌঁছে গিয়েছেন দলের নেত্রী। সেখানেই শুক্রবার দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার ভোটের সময় প্রচারে আসা ভিন রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বকে 'বহিরাগত' বলে দেগে দিয়েছিল ঘাস-ফুল শিবির। সেই তত্ত্বেই এবার মমতার গোয়া যাত্রাকে বিঁধছে গেরুয়া শিবির। তাদের দাবি গোয়ায় মমতা 'বহিরাগত'। এ দিন সেই কটাক্ষের জবাব দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, 'আমি আপনাদের সংস্কৃতিকে ভালোবাসি। বাংলা আমার মাতৃভূমি হলে গোয়াও তাই। আমি ভারতীয় যেখানে খুশি যেতে পারি।'
গোয়া পৌঁছাতেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানো হয়। এক্ষেত্রে তৃণমূলের নিশানায় বিজেপি। এ সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে বিঁধে বলেন, 'ওরা আমাকে কালো পতাকা দেখিয়েছে। পাল্টা আমি ওদের নমস্কার জানিয়েছি। এটা ভালো ইঙ্গিত যে ওরা ভয় পেয়েছে। গোয়ার মানুষ খুব তাড়াতাড়ি বিজেপিকে ব্ল্যাক-লিস্টেড করে দেবে।'
এরপরই আপসহীন লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পদ্ম বাহিনীকে কড়া বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী। কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন হাত শিবিরকেও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'অনেক দলই বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আমরা মাথা নোয়াবো না। তৃণমূল সাইবোর্ড হওয়ার জন্য বা আমি মুখ্যমন্ত্রী হতে গোয়ায় আসিনি, এই ছোট্ট সুন্দর রাজ্যের উন্নয়ন, মানুষের কাজ করতে গোয়ায় এসেছি। এই রাজ্যে নতুন সকাল আসছে, শক্তিশালী গোয়া দেখতে চাই।'
রেশ বজায় রেখে এ দিন কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। বলেন, 'গতবার কংগ্রেস এ রাজ্যে একক শক্তিশালী দল হয়েছিল। কিন্তু, সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ তারা। নিজেদের বিধায়ককে ধরে রাখতে পারেনি। ওরা সরকার গঠনে বিজেপিকে স্বাগত জানিয়েছে। আমরা কথা দিলান, আপনারা তৃণমূলের প্রতি আস্থা রাখলে আমরা আপসহীন লড়াই করব।'
গোয়াবাসীর উন্নয়নে একবার তৃণমূলকে সুযোগ দেওয়ার জন্যও এদিন আর্জি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন মডেলে হবে সৈকত রাজ্যের উন্নয়ন? তারও পথ বাতলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, 'বাংলায় গত ১০ বছরে উন্নয়েনর অনেক কাজ হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে দেশের মধ্যে সেরা বাংলা। কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, দরিদ্র কমেছে, নারী ক্ষমতায়ণ হয়েছে, কন্যাশ্রী, রূপোশ্রী, স্বস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডা, গতি ধারায় মানুষ উপকৃত। তৃণমূল জিতলে এসব এখানেও হবে।'
অর্থাৎ, একদিকে বিজেপি, কংগ্রেসকে নিশানা। অন্যদিকে আপসহীন লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উন্নয়নে বাংলার মডেলকে হাতিয়ার করে গোয়াবাসীকে স্বপ্ন দেখানোর চেষ্টা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তেথাকুন