মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে সময় যত এগোচ্ছে, ততই একবছর আগের শিবসেনার ভাঙনের দৃশ্যগুলো পুনরাবৃত্তির মত সামনে চলে আসছে। এবার অবশ্য বিরোধী শিবিরের শিবসেনা নয়। দল ভাঙার জন্য গেরুয়া শিবিরের চাঁদমারি জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পাটি বা এনসিপি। যার অন্যতম শীর্ষ নেতা অজিত পাওয়ার শীর্ষস্থানীয় অন্য নেতাদের নিয়ে গেরুয়া শিবিরে পাশে রবিবারই চলে গিয়েছেন। সরকারে যোগ দিয়েছেন। এবার এনসিপি অধিকারের পালা চলছে। যেখানে অজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর অশীতিপর কাকা তথা একসময়ের মারাঠা রাজনীতির 'পাওয়ারফুল ম্যান' বলে পরিচিত শরদ পাওয়ার।
তবে, একবছর আগে শিবসেনার ভাঙনের সময় উদ্ধব ঠাকরেদের বিরুদ্ধে শিণ্ডেদের গলা থেকে যে ধরনের বা যে ভঙ্গিমায় হুমকি বেরোয়নি, এবার কিন্তু এনসিপি ভাঙনের ক্ষেত্রে তা শোনা যাচ্ছে। আর, সেটা শোনা যাচ্ছে অজিত পাওয়ারের গলা থেকে। কারণ, ইতিমধ্যেই তাঁর অশীতিপর কাকাকে শাসিয়ে অজিত পাওয়ার বলেছেন, 'সব বিধায়করা আমার সঙ্গে। তোমার ৮৩ বছর বয়স হয়ে গেল। থামবে কি না বল!' তার আগে শরদ পাওয়ার অবশ্য নিজের পুরনো ফর্ম তুলে ধরতে রবিবার থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু, এবার জানা যাচ্ছে যে অজিত পাওয়ারের গোষ্ঠীর লোকজন আগে তারও আগে থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন। গত ৩০ জুন, তাঁরা এক প্রস্তাবে শরদ পাওয়ারকে সরিয়ে অজিত পাওয়ারকে এনসিপির নেতা নির্বাচিত করেছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনের সূত্রে প্রকাশ যে অজিত পাওয়ার ৩০ জুন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখেছিলেন, যাতে তাঁর দলকেই আসল এনসিপি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কমিশনের কাছে তিনি দলের প্রতীক চেয়েও আবেদন জানিয়েছেন সেই সময়ই। নির্বাচন কমিশনকে লেখা চিঠিতে মহারাষ্ট্রের বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গেই এনসিপির সমস্ত বিধায়কদের সমর্থন আছে। বান্দ্রায় দলের ২৯ জন বিধায়কের সকলেই তাঁকে সমর্থন করেছেন। তাঁরা অজিত পাওয়ারের সমর্থনে মুম্বই এডুকেশন ট্রাস্টের সভায় হাজিরাও দিয়েছেন।
তবে, শরদ পাওয়ারও হাল ছাড়ছেন না। তিনি যশবন্তরাও বলবন্তরাও চহ্বান অডিটোরিয়ামে এনসিপির পালটা সভা ডেকেছেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত আছেন ১৪ জন এনসিপি বিধায়ক। যে যুক্তিকে সামনে রেখে অজিত পাওয়ারদের প্রতীক ও দলের নাম পাওয়ার বিরোধিতা করেছে শরদ পাওয়ারের গোষ্ঠী। তাঁদের বক্তব্য দলের দুই তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন না-থাকলে আইন অনুযায়ী বিদ্রোহীরা কিছুতেই দলের নাম ও প্রতীক পেতে পারে না। এনসিপির দুই তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন মানে হল ৩৬ জন বিধায়কের সমর্থন। কিন্তু, অজিত পাওয়ারদের কাছে মাত্র ২৯ জন বিধায়কের সমর্থন আছে। এই পরিস্থিতিতে শরদ পাওয়ার তাঁর অনুষ্ঠানে এনসিপি কর্মীদের নতুন প্রজন্মের নেতা গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
তাঁর মধ্যেই কার্যত নিজের কাকাকে শাসিয়েছেন অজিত পাওয়ার। বান্দ্রার সভায় তিনি বলেছেন, 'আপনার বয়স এখন ৮৩। আপনি সেদিন যশবন্তরাও দাদার স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। আপনি কি কোনওদিন থামবেন নাকি? আমাদের আশীর্বাদ দিন, আমাদের এটি প্রয়োজন। আপনি আমাদের নায়ক। আমি সুপ্রিয়া সুলেকেও বলেছিলাম যে পাওয়ার সাহেবকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু, তিনি (অজিত পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে) আমাকে বলেছেন যে তিনি (শরদ পাওয়ার) একগুঁয়ে। কথা শুনবেন না। সমস্ত বিধায়কদের সমর্থন কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছে। এমনকী যে বিধায়করা অন্য বৈঠকে (শরদ পাওয়ারের বৈঠক) গিয়েছেন, তাঁরাও যোগাযোগ করেছেন।'
আরও পড়ুন- জানেন কি বিমান চলাচলের নিয়মাবলি বেশ জটিল, কর্মীদের জন্য আছে বিশেষ ছাড়?
এই পরিস্থিতিতে অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি বিধায়কদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে শিণ্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা দলের বিধায়কদের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। সেই অসন্তোষ চাপা দিতে একনাথ শিণ্ডে আজ শিবসেনা বিধায়ক এবং দলের অন্য নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন নিজের সরকারি বাসভবন বর্ষা বাংলোয়।