রাজ্যে শিল্পে বিনিয়োগ টানতে মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী। দুপুরে যে সময়ে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে তাবড় শিল্পপতিদের সামনে দেউচায় শিল্প ও কর্মসংস্থানের কথা জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী , ঠিক সেই সমই দেউচায় গিয়ে রাজ্য সরকারকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সাফ গুঁশিয়ারি, 'দেউচার আদিবাসীরা চাইছে না যে কয়লা খনি হোক। তাও জোর করে জমি নিলেই কঠিন প্রতিরোধ হবে।'
কী বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী?
পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনেই বুধবার দুপুরে বিজেপির ৯ জ বিধায়ককে নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী দেউচা পাঁচামিতে যান। প্রস্তাবিত খনি এলাকায় মিছিল করে প্রবেশ করেন বিজেপি বিধায়করা। গত প্রায় দু'মাসের কাছাকাছি প্রস্তাবিত কয়লা খনির প্রতিবাদ জানিয়ে সেখানে বিক্ষোভ, ধরনা মঞ্চ তৈরি করেছে আদিবাসী ও স্থানীয়রা। তাঁদের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছে। জানিয়েছেন তাঁদের প্রস্তাবিত খনি তৈরির বিরোধীতার কারণ। ভেস্তে গিয়েছে চেক বিলির কর্মসূচি। বিক্ষোভকারীদের তাড়া খেয়ে ছুটে পালাতে দেখা যায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে।
এবার আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রিতি দিলেন রাজ্যের বিরোদী দলনেতা। বললেন, 'এখানকার মানুষ অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে আন্দোলন করছে। তাঁরা যে ভাবে আমাদের সাহায্য চাইবেন আমরা সেভাবেই করব।'
পাশাপাশি রাজ্ সরকাকে শুভেন্দগুর হুঁশিয়ারি, 'জোর করে জমি নেওয়া যাবে না। এখানে কেউ চাইছে না কয়লাখনি হোক। সরকার যদি জোর করে জমি দখল করতে চায় তাহলে এখানে কঠিন প্রতিরোধ হবে। দেউচা ক্লোজড চ্যাপটার।'
অন্যদিকে এ দিন সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, 'কয়লাখনি বা কর্মসংস্থান নয়, তৃণমূলের লক্ষ্য অন্য। কয়লার স্তর পর্যন্ত পৌঁছনোর আগে যে বিপুল সম্পদ মাটির নীচে রয়েছে সেটাই এখন তৃণমূলের টার্গেট।'
তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, দেউচা নিয়ে কোনও পার্টি বাজি চলবে না। মহাসভার ঘোষিত নীতি হল যে, 'রাজনৈতিক পার্টিবাজী চলবে না। এই ধরণের রাজনৈতিক দল লক্ষ লক্ষ আদিবাসীদের জঙ্গল জমি জীবন কেড়ে নিয়েছে। এখনও নিচ্ছে। এদের কুমিরের কান্নায় আমরা ভুলছি না। আমাদের বাঁচার লড়াই নিয়ে ভোট রাজনীতি করতে দিচ্ছি না, দেবো না।'
গত বুধবারই নবান্নে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। জোর করে জমি নেওয়া হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী ওই প্রতিনিধি দলকে আশ্বাস দিয়েছেন বলে তাঁদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি সুরাহা চেয়ে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যাচার ও পুলিশি কেসের কথাও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। ধরনা মহাসভার আহ্বায়ক গণেশ কিস্কু 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'কে বলেছিলেন, ‘আমরা তো সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইছিলাম উনি কী বলতে চাইছেন। আমাদের এখানকার কথা মুখ্যমন্ত্রী শুনেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথা আমাদের প্রতিনিধিরা শুনেছে। আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বোঝা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন গ্রামের লোকেদের ইচ্ছা না থাকলে কয়লাখনি হবে না। জোর করে জমি নেবে না সরকার।’