Advertisment

‘হিজাব থেকে শুরু করে সংরক্ষণ’ বিজেপির বিড়ম্বনায় 'বড় ফ্যাক্টর' ৩১ বিধানসভা আসন

সামনেই বিধানসভা নির্বাচন, তার আগেই কর্নাটকে সংরক্ষণের আওতা থেকে বাদ গেলেন মুসলিমরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Karnataka elections, Karnataka assembly elections Hindutva, BJP Karnataka, BJP Hindutva ideology, Dakshina Kannada, Karnataka news, Elections 2023, indian express

হিজাব থেকে টিপু সুলতান এবং দুর্নীতি, এমন অনেক ইস্যু রয়েছে যা সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে আসন্ন নির্বাচনে।

কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ইতিমধ্যেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের মোট ২২৪ টি বিধানসভা আসনের জন্য ১০ মে একক পর্বে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং ১৩ মে রাজ্যে ভোট গণনা। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমা্র বলেন, যে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে ১৩ এপ্রিল, মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২০ এপ্রিল এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৪ এপ্রিল।  

Advertisment

বর্তমান কর্ণাটক বিধানসভার মেয়াদ ২৪ মে শেষ হচ্ছে। এর মধ্যেই এবারের কর্ণাটক নির্বাচন বিজেপির কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ কারণ সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে কর্নাটক নির্বাচন দলের কাছে এক বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কর্ণাটকে বিজেপি সরকারের কাছে পাঁচটি জেলায় ৩১টি বিধানসভা আসননে ‘হিন্দুত্ব ফ্যাক্টর’ নির্বাচনের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

বিজেপি ২০০৮ সালের নির্বাচনে পাঁচটি জেলায় ৩১ টি আসনের মধ্যে ১৯ টি আসন জিতেছিল। ২০১৩ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যা নেমে আসে ৫-এ। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির প্রসঙ্গকে টেনে এনে নির্বাচনের ময়দানে নেমে পড়েছে বিরোধী শিবির। পাশাপাশি গোহত্যা নিষিদ্ধ হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে প্রভাবিত করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে "লাভ জিহাদ"ধর্মান্তরকরণ এবং আন্তঃধর্মীয় বিবাহে নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।

কর্ণাটক প্রোটেকশন অফ ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন অ্যাক্ট, ২০২২ বিরোধী দল এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির প্রতিবাদ সত্ত্বেও গত বছর পাস হয়। এই আইন কট্টোর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দুটি প্রধান দাবিকে তুলে ধরে। এক,ধর্মান্তরকরণের উপর বিধিনিষেধ আরোপ এবং দুই, আন্তঃধর্মীয় বিবাহ নিয়ন্ত্রণ।

ক্ষমতাসীন বিজেপি থেকে কংগ্রেস এবং জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এবার কর্ণাটকে নির্বাচনে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। হিজাব থেকে টিপু সুলতান এবং দুর্নীতি, এমন অনেক ইস্যু রয়েছে যা সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে আসন্ন নির্বাচনে।  

বিজেপি বিধায়ক মাদল বিরূপাক্ষপ্পা কর্ণাটকে কিছুদিন আগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন। এর আগে ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়েছিল বিধায়কের ছেলে। এই মামলাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই দুর্নীতি ইস্যুতে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এই ইস্যু বিজেপিকে আসন্ন নির্বাচনে অনেকটাই ব্যাকফুটে নিয়ে এসেছে, অন্যদিকে কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি তাদের দাবিগুলিকে আরও জোরালো ভাবে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে। কংগ্রেস এবার দুর্নীতিকে ভোট প্রচারের প্রধান থিম করেছে। গত পাঁচ বছরে, রাজ্যে বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারির নিয়ে কংগ্রেস ক্রমাগত সরকারকে ঘেরাও করেছে।

সামনেই বিধানসভা নির্বাচন, তার আগেই কর্নাটকে সংরক্ষণের আওতা থেকে বাদ গেলেন মুসলিমরা। কর্নাটকে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বরাদ্দ সংরক্ষণে এতদিন অন্তর্ভু্ক্ত ছিলেন রাজ্যের মুসলিম নাগরিকরাও। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির অন্তর্গত মুসলিমদের জন্য ৪ শতাংশ সংরক্ষণ তুলে নেওয়া হয়েছে সেখানে, যা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। রদবদলের পর ভোক্কালিগাদের জন্য বরাদ্দ সংরক্ষণ বাড়িয়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। পঞ্চমশালী, বীরশৈব এবং লিঙ্গায়তদের ক্ষেত্রেও ৫ থেকে সংরক্ষণের হার বেড়ে হয়েছে ৭ শতাংশ।  এর মধ্যে ভোক্কালিগারা বরাবরই কংগ্রেস সমর্থক। তাঁদের নিজেদের দলে টানার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই রাজ্যে সক্রিয় বিজেপি। ভোক্কালিগাদের নিয়ে রাজনীতি বহুদিনের।

গত বছরের শুরুতে কর্ণাটকে হিজাব ইস্যু নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হিজাব ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার। এর পর কর্ণাটক হাইকোর্টও নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে। এরপর বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। ২০২২ সালের অক্টোবরে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলায় ২ বিচারপতির বেঞ্চ ছিল। আর দুই বিচারপতি একে অপরের থেকে পৃথক রায় দিয়েছিলেন। কয়েকজন পড়ুয়ার করা সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২২ অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের রায় দ্বিধাবিভক্ত থাকার নিরিখে ফের আবেদন যায় সুপ্রিম কোর্টে। তখনই দেশের শীর্ষ আদালত নতুন ৩ বিচারপতির বেঞ্চ গঠনের কথা বলে।

টিপুর মৃত্যু নিয়ে আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে কর্ণাটকে বিপাকে বিজেপি, ক্ষুব্ধ ভোক্কালিগারা। কর্ণাটকের বিজেপি নেতারা, বিশেষ করে ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের বিজেপির নেতৃত্ব এই দাবিতে অনড় যে, ভোক্কালিগা সর্দার উরি গৌড়া এবং নাঞ্জে গৌড়াই ১৮ শতকে মাইসুরুর শাসক টিপু সুলতানকে হত্যা করেছিলেন। যদিও সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতা নির্মলানন্দ স্বামী জানিয়েছেন যে বিষয়টি উত্থাপন করা উচিত নয়। কারণ, এর ঐতিহাসিক প্রমাণের অভাব আছে। নির্মলানন্দ স্বামীর এই কথা বলার পরও ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের বিজেপি নেতৃত্ব কিন্তু, নিজের বক্তব্যে অনড়। এই অনড় নেতাদের অন্যতম হলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সিটি রবি।

শিবকুমার শুধু একথা বলেই ক্ষান্ত হননি। তিনি টিপুর মৃত্যুর সঙ্গে ভোক্কালিগা সম্প্রদায়কে জড়িয়ে প্রমাণহীন মন্তব্যের জন্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে নির্মলানন্দ স্বামীকে আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কর্ণাটকে প্রভাবশালী ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের বৃহত্তম সংগঠন কর্ণাটক রাজ্য ভোক্কালিগারা সংঘ গোটা ঘটনায় বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেছে। ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের নেতাদের একাংশের অভিযোগ, এই অবান্তর দাবি বিজেপি ভোটের দিকে তাকিয়ে করছে। দুই ভোক্কালিগা মিলে টিপুকে হত্যা করেছে। এই দাবি করে বিজেপি আসলে আসন্ন নির্বাচনে লাভের হিসেব কষছে।

এ ছাড়াও ‘মসজিদে লাউডস্পিকারের’ মতো বিষয় নির্বাচনে ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে। লাউডস্পিকার বিতর্কে, কর্ণাটক হাইকোর্ট গত বছর রায় দিয়েছিল যে এটি মসজিদে আজানের জন্য লাউডস্পিকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে পারে না। এবিষয়ে কর্নাটকে ডেপুটি সিএম এস ঈশ্বরাপ্পা একটি বিতর্কিত বিবৃতি দেন তা নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য-রাজনীতি।

karnataka elections
Advertisment