রামের পাল্টা দুর্গা। আপাতত বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের দুর্গা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকেই প্রচারের হাতিয়ার করে তুলতে চাইছে তৃণমূল। বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পুজো। কিন্তু সেই দুর্গা নিয়েই দিলীপ ঘোষের মন্তব্যেক ঘিরে জোর শোরগোল। সেই দুর্গা অস্ত্রেই বিজেপির বিরুদ্ধে 'বহিরাগত' তকমা পোক্ত করতে তৎপর জোড়া-ফুল শিবির। পদ্ম বাহিনীর নেতারা যে বাংলার সংস্কৃতির বোঝে না সেকথাই প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে।
১২ই ফেব্রুয়ারি এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের কনক্লেভে দিলীপ ঘোষ রাম ও দুর্গাকে নিয়ে বিজেপির ভাবনার কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, রাম হলেন 'আদর্শ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রতিমূর্তি' এবং 'আদর্শ পুরুষ'। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন যে, 'দুর্গা কোথা থেকে এসে গেলেন কেউ জানি না।'
মেদিনীপুরের সাংসদের এই মন্তব্যেকেই হাতিয়ার করতে মরিয়া তৃণমূল। তবে, ভোটের আগে বিতর্ক মাথাচাড়া দিক তা চাইছেন না গেরুয়া নেতারা। তাই দিলীপের কথায় কোনও বিতর্ক নেই বলেই মনে করেন তাঁরা।
তবে, মেরুকরণের এই ভোটে বিজেপির রাম নিয়ে প্রচারের বিরুদ্ধে দুর্গাকেই তরুপের তাস হিসাবে ব্যবহারে উদগ্রীব জোড়া-ফুল শিবির।সোশাল মিডিয়া থেকে মাঠে ময়দানে কর্মরত শাসক দলের কর্মীরা উঠে পড়ে লেগেছেন। দিলীপ ঘোষের ওই দিনের মন্তব্যের পর পরই সোশাল মিডিয়ায় 'বিজেপিইনসাল্টদুর্গা' হ্যাসট্যাগ ব্যবহার শুরু করে তৃণমূল।
ঘোস-ফুলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, 'প্রচারে প্রথমে দিলীপ ঘোষ দুর্গা নিয়ে কী বলেছেন তা বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে। ভাল করে শুনলেই বোঝা যাচ্ছে উনি দুর্গাকে উপহাসের পাত্রী করেছেন। প্রথমবার তিনি বলেছেন, রামের ১৪ পুরুষের খোঁজ পাওয়া যাবে কিন্তু দুর্গার নয়। আরেকবার বলেছেন, দুর্গা কোথা থেকে এলেন কেই জানেন না।'
গরুর দুধে সোনা কীভাবে মেলে তার জবাব দিয়েছিলেন দিলীপ। দুর্গা নিয়ে তাঁর মন্তব্যে যখন তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি তখনও নিজের বক্তব্যের সপক্ষে সাফাই দিতে পিছপা হননি রাজ্য বিজেপি সভাপতি। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে সাক্ষাৎকারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেছেন, 'এবার রাজনৈতিক স্বার্থে কারা দুর্গাকে ব্যবহার করছে? যারা সরস্বতী পুজোয় নিয়ন্ত্রণ জারি করেন সেই দল হিনম্মতাবোধে ভুগছে। তাই এখন অথীত মুছতে দুর্গা নিয়ে পড়েছে।' একই সঙ্গে তাঁর দাবি, 'আমাদের কাছে দুর্গাদেবী হলেন আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় আইকন। রামকে পুজো করলেও উনি আমাদের চোখে রাজনৈতিক আইকন। বিজেপি রাম রজত্বের কথা বলে। সেটাই দলের চূড়ান্ত লক্ষ। তৃণমূলের কোনও আদর্শ নেই, আইকনও নেই। তাই রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতে দুর্গাকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে।'
ঠিক কী বলেছিলেন দিলীপ ঘোষ?
ইন্ডিয়া টুডে-র কনক্লেভে ১২ ফেব্রুয়ারি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, 'রাজনীতির বদলে কোনও কোনও দল ধর্ম নিয়ে কথা বলে। আমরা প্রকাশ্যেই রাজনীতি করি। ভগবান রাম রাজা ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন উনি অবতার। তাঁর ১৪ পুরুষের খোঁজ রয়েছে। কিন্তু কেউ দুর্গার পরিবারের বিগত পুরুষদের খোঁজ দিতে পারবেন? রাম হলেন রাজা, আদর্শ পুরুষ ও প্রশাসক।'
'বাঙলায় রামায়ণ রয়েছে। গান্ধীজির কথাতেই রাম রাজ্যের উল্লেখ আছে। দুর্গা কোথা থেকে এলেন আমি জানি না। রাবণকে মারতে দুর্গার উপাসনা করা হয়েছিল। সেটা অন্য বিষয়। বুঝতে পারি না রামের পাল্টা কীভাবে দুর্গাকে দাঁড় করানো হচ্ছে। কয়েকজন লোক এতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে যে বাংলায় রাম দেবতা নয়। কেমন করে এই ধারণা হল তা আমার জানা নেই।'
এর পাল্টা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, 'শুধু বাংলায় নয়, বিজেপি গোটা ভারতে দুর্গার শক্তি বুঝতে ব্যর্থ। কয়েক শতক ধরে পূর্ব ভারতে দুর্গা পুজো খুবই জনপ্রিয়। রাম নবমী উত্তর ভারতের পুজো, উৎসব। রাম-দুর্গার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই, উভয় দেব-দেবীকেই মানুষ ভর্কি-বিশ্বাস করেন। এই দুটো বিষয়কে পৃথক করা ও দ্বন্দ্ব বাঁধানো অনুচিত।'
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, এবার ভোটে দুর্গা একটি উল্লেখযোগ্য ইস্যু হতে চলেছে। রাজ্যের শাসক দল বিজেপির 'জয় শ্রীরাম' স্লোগানের বিরুদ্ধে সরব। তার সঙ্গে যুক্ত হল দিলীপ ঘোষের দুর্গা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য। রামের বিরুদ্ধে প্রচারে তাই দুর্গা অস্ত্রেই শান দিচ্ছে জোড়া-ফুল শিবির।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন