ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ৩১ জুলাই, ২০২১-এ হায়দ্রাবাদে আইপিএস পরীক্ষার্থীদের এক সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উল্লেখ করেন, 'জনসাধারণের চোখে সম্মান কীভাবে আদায় করে নিতে হয় তা পুলিশ বাহিনীকে অবশ্যই জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ) থেকে শিখতে হবে'। মোদী তাঁর ভাষণে বলেন, “এনডিআরএফ দুর্যোগের সময় আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। মানুষ মনে করে এনডিআরএফ এলেই বাঁচা সম্ভব। এনডিআরএফ এই দক্ষতা তার কাজের মাধ্যমে এই আস্থা ও সম্মান অর্জন করেছে" ।
মঙ্গলবার, উত্তরাকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলে ১৭ দিনের জন্য আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে বের করে আনতে আগ্রণী ভূমিকা নেয় এনডিআরএফ। পাহাড় খুঁড়ে শ্রমিকদের উদ্ধার করে আনা ত্রাণ ও উদ্ধার কার্য্যে ভারতবর্ষের অগ্রগতি যে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০১৪ থেকে ২০২৩- এর মধ্যে এনডিআরএফ-কে ঢেলে সাজাতে কেন্দ্র তহবিল বরাদ্দ প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে ২৫,০৩৬ কোটি টাকা থেকে ৭৭,৭৩১ কোটি টাকা হয়েছে।
এই যাত্রাপথটি তৈরি হয় গুজরাটের ভয়াবহ ভুমিকম্প থেকে। মোদী ২০০১ সালের ভুজ ভূমিকম্পের পরে উদ্ধারভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল। গুজরাট ২০০৩ সালে রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রবর্তনকারী প্রথম রাজ্য হয়ে ওঠে। ২০০৬ সালে, এনডিআরএফ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে ওঠে। এর পর থেকে এনডিআরএফ তার শক্তি কয়েক বছর ধরে দ্বিগুণ করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেছেন, “ভুজ ভূমিকম্পের সময় এই বিষয়ে একটি পাঠ নেওয়া হয়েছিল কীভাবে ত্রাণ পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তৎকালীন রাজ্য সরকার ভুজ পুনর্নির্মাণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণে নেতৃত্ব দিয়েছিল। যা দ্রুত, সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছিল। পরবর্তীকালে দুর্যোগ মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের আইন ও প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়। সমান্তরালভাবে, কেন্দ্রও এটি নিয়ে কাজ করছে। মোদী যখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব সহকারে নেন এবং এই নিয়ে কাজ করেছেন"।
২০১৯ সালে, সরকার দুর্যোগ ও ত্রাণ কাজের জন্য নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আপদা প্রবন্ধন পুরস্কার নামে একটি বিশেষ পুরস্কারও চালু করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, মোদী নিজেই প্রচুর সংখ্যক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সম্মেলন এবং ইভেন্টে যোগদান করেছেন। তার প্রায় সব বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কথা বলেছেন।
২০১৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বন্যা, পরের বছর নেপালের ভূমিকম্প, ২০২২ সালের ঝাড়খণ্ড রোপওয়ের ঘটনা, বা এই বছর তুরস্কের ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ের সময় দেশে বা বাইরে ত্রাণ ও উদ্ধার প্রচেষ্টায় ভারতের অংশগ্রহণ সারা বিশ্বের সামনে ভারতের মাথা উঁচু করেছে। .
প্রধানমন্ত্রী সিল্কিয়ারা টানেল উদ্ধারকে একটি "আবেগঘন মুহূর্ত" হিসাবে বর্ণনা করেন। এমনকি তিনি উদ্ধারকর্মীদের সাহসিকতার প্রশংসা করেছিলেন। গত বছর তুরস্ক থেকে এনডিআরএফ দল ফিরে আসার পরে, মোদী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সমস্ত কর্মীদের সাথে দেখা করেন। মঙ্গলবার, যখন সুড়ঙ্গে উদ্ধার কাজ পুরোদমে চলছে, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী ভারতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একটি "দৃষ্টান্ত গড়তে" মোদীর প্রচেষ্টার উপর একটি বই প্রকাশ করেছেন।