সুপ্রিম কোর্ট সোমবার ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে ২০১৯ সালে গৃহীত কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্তকে সমর্থন করার পর, দলীয় অবস্থান বদলাল কংগ্রেসও। আগে উপত্যকায় পুনরায় ৩৭০ ধারা লাগু করার পক্ষে থাকলেও গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি সোমবার তা থেকে সরে এসেছে। বদলে, কংগ্রেস নেতাদের গলায় এখন আদালতের সুরেই জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি। দলের তরফে সাংবাদিক বৈঠকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দুই আইনজীবী নেতা পি চিদাম্বরম ও অভিষেক মনু সিংভি।
৩৭০ নিয়ে কংগ্রেসে বিভাজন
তার মধ্যে চিদাম্বরম জানিয়েছেন, রায় পুরোপুরি না-পড়ে তিনি মন্তব্য করতে নারাজ। তবে, ৩৭০ ধারা বাতিলের পদ্ধতির সঙ্গে তাঁরা একমত নন। যদিও উপত্যকায় অবিলম্বে নির্বাচন প্রয়োজন। সেই রায়কে স্বাগত জানান। নির্বাচনের জন্য আদালতের বেঁধে দেওয়া ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন নেই বলেও বিজেপি তথা কেন্দ্রের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেন চিদাম্বরম। তিনি বলেন, 'আমরাও হতাশ যে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে (জম্মু-কাশ্মীর) দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার এবং এর মর্যাদা হ্রাস করার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।'
সাংবাদিক বৈঠকে চিদাম্বরম যা-ও বা ৩৭০ সম্পর্কে বলেছেন, সিংভি তার ধারেও যাননি। তিনি উপত্যকার নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, 'জম্মু-কাশ্মীরের প্রতিটি নাগরিকের দাবি গণতন্ত্র, স্বৈরাচার নয়। কেন বিজেপি নির্বাচিত সরকারকে ভয় পাচ্ছে?' কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওরা বলেছেন, এই রায়ে কাশ্মীরে পর্যটন বাড়বে। পরিকাঠামো উন্নত হবে। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়বে। বিশেষত নারীরা উপকৃত হবেন।
কংগ্রেসের আগের অবস্থান
কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ ধারা বাতিলের একদিন আগে ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট, পিডিপি এবং কংগ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি দল, শ্রীনগরের গুপকার রোডে ন্যাশনাল কনফারেন্স সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহর বাসভবনে বৈঠক করেছিল। তারা ৩৭০ ধারা রক্ষায় একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। ৩৭০ ধারা বাতিলের একবছর পরে, কংগ্রেস-সহ এই দলগুলির নেতারা আবার গুপকার ঘোষণাকে সমর্থন করার জন্য বৈঠক করেছিল। জানিয়েছিল, ৩৭০ এবং ৩৫ ধারা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে। পরে, সাত দলের এই জোট- পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকার ঘোষণা নামে ২০২০ সালের অক্টোবরে, জেলা উন্নয়ন পরিষদের নির্বাচনে একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে কংগ্রেস জানায় যে তারা গুপকার জোটের অংশ নয়।
আরও পড়ুন- চাণক্যের নীতিবাক্য মানেননি হরি সিং-আবদুল্লারা, সেই কারণেই উপত্যকার এই হাল?
রায়পুর অধিবেশন
শুধু তাই নয়, রায়পুরে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি (এআইসিসি)-র পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে কংগ্রেস নেতৃত্ব যে রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছিল, তা-হল ক্ষমতায় এলে জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনতে চেষ্টা করবে। যা আসলে সংরক্ষণেরই প্রস্তাব। কিন্তু, রায়পুরের প্রস্তাবে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা পুনরায় লাগু করা নিয়ে একটি কথাও বলা হয়নি। শুধু তাই নয়, ৩৭০ ধারার উল্লেখই করা হয়নি।
আরও পড়ুন- মতাদর্শের লড়াইয়ে ফের জয় বিজেপির, এবার কী?
ইন্ডিয়া জোটে ৩৭০ বিভাজন
কংগ্রেস যখন ৩৭০ ধারা নিয়ে ধীরে অবস্থান বদলেছে, কথার মারপ্যাঁচ রেখেছে, সেই পরিস্থিতিতে সোমবারের সুপ্রিম রায়কে ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ইন্ডিয়া জোট। শিবসেনার উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে গোষ্ঠী রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। দলের নেতা উদ্ধব ঠাকরে আশা প্রকাশ করেছেন, 'পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরকে মোদী সরকার ছিনিয়ে আনতে পারবে। ভারতের অংশ করতে পারবে। আর, বৃহত্তর কাশ্মীরে নির্বাচন করাতে পারবে।' ইন্ডিয়ার অন্য শরিক সিপিএম জানিয়েছে, রায়টি বিরক্তিকর আর সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় গুরুতর প্রভাব ফেলবে।