সংসদে তাঁর প্রথম ভাষণেই নজর কাড়লেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি তাঁর তোপ, দেশ ফ্যাসিবাদের দিকে এগিয়ে চলেছে। ট্রেজারি বেঞ্চের সাংসদদের উদ্দেশ্যে মহুয়া মঙ্গলবার বলেন, "যদি আপনারা চোখ খোলা রাখেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দেখতে পাবেন যে, গোটা দেশ ফ্যাসিবাদের দিকে এগিয়ে চলেছে। বিভাজনের রাজনীতির হাত ধরে দেশ কার্যত ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সর্বত্র এর চিহ্ন দেখা যাচ্ছে।"
মহুয়া তাঁর এদিনের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, কবি রামধারী সিং দিনকর এবং রাহাত ইন্দৌরিকে উদ্ধৃত করেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মাচরণের অধিকার, সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রের শাসকদলকে একটানা আক্রমণ করেন তিনি। মহুয়া বলেন, "ভারতের সংবিধান এই মূহুর্তে হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ,আমরা যারা সংসদের সদস্য, তারা প্রত্যেকেই সংবিধান রক্ষার জন্য দায়বদ্ধ।" এরপরই শাসক শিবিরের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, "আপনারা হয়তো আমার সঙ্গে একমত হবেন না, হয়তো আপনারা দাবি করবেন, আচ্ছে দিন এসে গিয়েছে, সেক্ষেত্রে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, ফ্যাসিবাদের পূর্বলক্ষণগুলি আপনাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে।"
আরও পড়ুন, ‘জরুরি অবস্থা’ স্মরণ করিয়ে টুইট মমতার
কৃষ্ণনগরের সাংসদ এদিন জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মিউজিয়মে একটি পোস্টার রয়েছে। তাতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের সময়কে কোন কোন ঘটনাবলীর দ্বারা চিহ্নিত করা যাবে, তার একটি তালিকা রয়েছে। বর্তমান ভারতেও সেই লক্ষণগুলি প্রকট হয়ে উঠছে। অন্য সাংসদদের প্রতি মহুয়ার বার্তা, এই সংকটলগ্নে প্রত্যেককেই পক্ষ নিতে হবে। ব্যক্তি হিসাবে সাংসদেরা ঠিক করুন, তাঁরা ফ্যাসিবাদের পক্ষে থাকবেন না বিপক্ষে।
মহুয়া এদিন জানান, দেশে একধরনের উদ্র জাতীয়তাবাদের চর্চা শুরু হয়েছে, যা আদতে সংকীর্ণ এবং বিদ্বেষপ্রবণ। এহেন জাতীয়তাবাদ দেশজুড়ে ঘৃণার রাজনীতিকে শক্তিশালী করছে। এনআরসি বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এই দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাঁদের গ্রাজুয়েশনের ডিগ্রির স্বপক্ষে নথি দেখাতে পারেন না। অথচ দাবি করা হচ্ছে যে দরিদ্রতম মানুষটিকে তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণে নথি দাখিল করতে হবে!" মহুয়ার কথায়, "বিশেষত নাগরিকত্বের ইস্যুতে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।"
প্রাক্তন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কারের অভিযোগ, এনডিএ আমলে দেশজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটছে। অপরাধের সংখ্যা আগের আমলের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। মহুয়া দাবি করেন, দেশে এমন কিছু শক্তি সক্রিয় রয়েছে, যারা এই সংখ্যাকে আরও বাড়াতে চাইছে। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও এদিন দাবি করেন মহুয়া।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম না করে মহুয়া এদিন বলেন, "দেশের সেনাবাহিনীর যাবতীয় কৃতিত্ব একজন ব্যক্তির নামে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে! এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার।" তাঁর কথায়, "জাতীয় নিরাপত্তার নামে এক ধরনের উন্মাদনা সৃষ্টির চেষ্টা শুরু হয়েছে। পাাপাশি চলছে যাকে-তাকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দাগিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া।"
কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, এই মূহুর্তে দেশের সামনে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদ হল সংগঠিতভাবে সব রকমের বিরোধী মতের কণ্ঠরোধের আপ্রাণ চেষ্টা। বুদ্ধিজীবীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপরে চরম আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। দেশজুড়ে একটি একমাত্রিক সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
Read the full story in English