সব্যসাচী, আভিধানিক অর্থ- যার দু'হাত সমান চলে। বঙ্গ রাজনীতির সব্যসাচীও দুই হাতে সমান তালে মেয়র এবং বিধায়কের গুরু দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি সব্যসাচী দত্ত। বিধাননগরের মেয়র এবং রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক। কিন্তু, আর কতদিন এই পরিচয়গুলি ব্যবহার করা যাবে তাঁর সম্পর্কে? দোলের দিন এই প্রশ্নটা তুলে দিলেন স্বয়ং তিনিই।
বিধাননগরে মারোয়াড়ি সমাজের ডাকে হোলি উৎসবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন সব্যসাচী দত্ত। আবাঙালি সম্প্রদায়ের এই অনুষ্ঠানে মাথার পাগড়ি থেকে আবিরের রঙ নির্বাচন এবং সবশেষে বক্তৃতা- সবতেই রীতিমতো চেনা ছকের বাইরে হেঁটেছেন বিধাননগরের মেয়র। এদিন সব্যসাচী বলেন, "মেয়র থাকি বা না থাকি, আপনাদের মনে থেকে যেতে চাই"। হঠাৎ মেয়র না থাকার কথা উঠছে কেন? সব্যসাচীর কৌশলী জবাব, "মেয়র হয়ে জন্মাইনি, মেয়র হয়ে মরবও না"।
সব্যসাচীর গলায় অর্জুনের সুর
মারোয়াড়ি সমাজের অনুষ্ঠানে সব্যসাচী দত্তের মুখে দেশের অখণ্ডতা রক্ষার কথা শোনা যায়। এদিন বক্তৃতার শেষে উল্লেখযোগ্যভাবে তিনি স্লোগান দেন, "জয় ভারত। ভারতমাতাকি জয়"। দেশের অখণ্ডতা রক্ষা এবং সেনাবাহিনীর বিক্রমের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যে শত্রু সমনাসামনি লড়াই করে, সে অনেক ভাল। কিন্তু, পাশে বসে যে পিছন থেকে আঘাত হানে, সে ভয়ঙ্কর। এ কথা বলে সব্যসাচী ঠিক কী ইঙ্গিত করতে চাইলেন তা তিনি স্পষ্ট করেননি। উল্লেখ্য, ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংও বিজেপি-তে যোগ দিয়ে দেশের অখণ্ডতার কথাই বলেছিলেন। মুকুল রায় ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র মাঝে বসে দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়ে তিনি সেদিন বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ৩০ বছর কাটিয়েছেন। কিন্তু, দেশের অখণ্ডতার প্রশ্নে (সাম্প্রতিক পুলওয়ামাকাণ্ড ও তৎপরবর্তী ঘটনাবলী) মমতার অবস্থান সমর্থনযোগ্য নয় বলে জানিয়েছিলেন অর্জুন। এদিন, সব্যসাচী দত্তের গলাতেও সেই দেশের অখণ্ডতার কথা শোনা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে সব্যসাচীর বাড়িতে লুচি-আলুর দম খেতে গিয়েছিলেন বর্তমানে বিজেপি নেতা তথা একদা ‘তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর’ মুকুল রায়। এরপরই সব্যসাচীর দল বদল নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। পরে অবশ্য ববি হাকিম সব্যসাচীকে পাশে নিয়ে জানান, বিধাননগরের মেয়র তৃণমূলেই রয়েছেন। তবে ববি হাকিমের সেদিনের বিবৃতির পরও ‘লুচি-আলুরদম’ প্রসঙ্গে ফের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন সব্যসাচী দত্ত। তিনি বলেছেন, তাঁর বাড়িতে যে আসবে, তাঁকেই তিনি খাওয়াবেন। মুকুল রায়ও আসতেই পারেন, শুধু খাবার তৈরির সময়টুকু দিতে হবে। ‘লুচি-আলুরদম’-এর আতিথেয়তায় তিনি যে এখনও অনড় সে কথা এদিনও জানিয়ে দিয়েছেন সব্যসাচী দত্ত।