বুধবার বাংলা বনধে রাজ্যবাসীর নজর ছিল বিহার ঘেঁষা ইসলামপুরের ওপর। দিনের শেষে বোঝা গেল, ১২ ঘণ্টার ম্যাচে ইসলামপুরে উতরে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। এদিন দাড়িভিট গ্রামে পুলিশ ঢোকার সাহস পর্যন্ত করেনি। দিনভর ইসলামপুরের বুক চিরে যাওয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে পুলিশ ও দমকল বাহিনীকে ছুটিয়ে মেরেছে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা। এদিন বহু জায়গায় বনধের সমর্থনে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের দেখা গিয়েছে। একই সঙ্গে আদিবাসীদের একটা অংশ তীর-ধনুক. তরোয়াল, টাঙ্গি হাতে বনধ সমর্থকদের সঙ্গ দেওয়ায় অশনি সংকেত দেখছে শাসকদল। বাম রাজত্বের শেষের দিকে এই আদিবাসীরা তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে থাকায় বেগ পেতে হয়েছিল বামেদের।
এদিকে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে ইসলামপুরে পুলিশ আটক করে দলের যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিত সরকারকে। ফের বৃহস্পতিবার ইসলামপুরে ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট করতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এদিন উত্তর দিনাজপুরে বনধের ঘটনায় ১৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে জখম হয়েছেন দুজন পুলিশকর্মী।
২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিট গ্রামে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশের গুলিতে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বাংলা বনধের ডাক দেয় বিজেপি। যে দাড়িভিট গ্রামে বিজেপির চিহ্নমাত্র ছিল না, সেই গ্রামে পতপত করে উড়ছে গেরুয়া পতাকা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সারা দিন ধরে দাড়িভিট স্কুলের পাশে পথ অবরোধ করল বিজেপি। গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে পুলিশ ভ্যান দাঁড়িয়েছিল রাাস্তার পাশে। তবে তার বেশি আর এগোয়নি। গ্রামে দোকানপাট খোলার কোনও প্রশ্নই নেই। বনধের দিন দাড়িভিট ছিল একেবারে সুনসান।
আরও পড়ুন: বিজেপির ডাকা ১২ ঘন্টার বনধে উত্তপ্ত ইসলামপুর
এদিন সকাল থেকেই জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে, কাঠের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ করতে থাকে বনধ সমর্থকরা। শ্রীকৃষ্ণপুর, কলেজ মোড়, বিহারী মোড়সহ নানা জায়গায় চোর-পুলিশ খেলা চলে। পুলিশের সঙ্গে আগুন নেভাতে দৌড়ে বেড়ায় দমকলও। তিনটে বাসে ভাঙচুর করে বনধ সমর্থকরা। তার মধ্যে দুটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বনধ মোকাবিলায় পুলিশকে নেতৃত্ব দিতে চলে আসেন উত্তরবঙ্গের আইজি আনন্দ কুমার।
বনধ বিরোধিতায় পথে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বাস স্ট্যান্ডের পাশেই সভা করে তারা। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "দাড়িভিটের ঘটনায় তদন্ত হবে। দোষীদের শাস্তি হবে। দল ওই পরিবারগুলোর সঙ্গে আছে। বিজেপি বিহার থেকে দুষ্কৃতী এনেছে।" সাফাই দিতে গিয়ে তাঁর বক্তব্য, "আমি নন্দীগ্রামে দেখেছি, পুলিশ সাইলেন্সার লাগিয়ে গুলি করে না।" এদিকে উত্তর দিনাজপুর বিজেপির সাধারন সম্পাদক সুরজিত সেন বলেন, "বাসে আগুন লাগিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু দোকান-বাড়ি ভাঙচুর করেছে তৃণমূল। গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিত সরকার শিলিগুড়ি যাচ্ছিল, তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ইসলামপুরে।"
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে ইসলামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেসের জোট প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল জয়ী হয়েছিলেন ৪৩.৮৮ শতাংশ ভোট পেয়ে। দ্বিতীয় হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র সাড়ে বারো শতাংশ ভোট। এদিনের বনধের চেহারায় স্পষ্ট, ইসলামপুরের রাজনীতিতে গেরুয়া শিবির অনেকটাই পিছিয়ে দিতে চলেছে কংগ্রেস-বামেদের, যেখানে দুদিন আগেও পদ্ম শিবিরের তেমন জায়গা ছিল না ইসলামপুরে।