বুধবারের পর আবার বৃহস্পতিবার ইসলামপুরে ব্য়বসায়ীরা ১২ ঘণ্টার বনধ পালন করলেন। এদিন শহরের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ ছিল। বুধবার ইসলামপুরের জীবন মোড়-সহ কয়েকটি জায়গায় বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ ব্য়বসা বনধের ডাক দেয় ২৮টি ব্য়বসায়ী সংগঠনের সমন্বয় সমিতি। এদিকে পরপর দুদিনের বনধে এখানকার সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যায়। অন্য়দিকে দাড়িভিট এলাকায় সাতদিন পর খুলল দোকানপাট। তবে সামগ্রিক ভাবে ইসলামপুরের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
বাংলা বনধে বাসে ভাঙচুর, আগুন, বন্ধ দোকানে হামলা, কোনও কিছুই বাদ যায়নি ইসলামপুরে। যেহেতু দাড়িভিট স্কুলে গুলিতে দুই যুবকের মৃত্য়ুর ঘটনায় গেরুয়া শিবির বাংলা বনধের ডাক দিয়েছিল, স্বভাবতই ইসলামপুরে বনধ সফল হওয়াটা ছিল পদ্ম শিবিরের কাছে প্রেস্টিজ ইস্য়ু। ওই আতঙ্কের পরিবেশে দোকান খুলতে ভরসা পাননি কেউ। ব্য়বসায়ীদের দাবি, এতেই রুষ্ট হয় শাসক দল। কিন্তু সুরক্ষা না থাকলে কীভাবে দোকান খোলা রাখা সম্ভব? বুধবার এই এলাকার অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। অভিযোগ ওঠে, ওই বন্ধ দোকানেই হামলা চালিয়েছিল তৃণমূল। যদিও স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়াল এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ইসলামপুর মার্চেন্টস অ্য়াসোসিয়েশনের মুখপাত্র দামোদর আগরওয়াল বলেন, "আমাদের কোনও সুরক্ষা নেই। রাজ্য়ের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য়ের পর উত্তেজিত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা আমাদের দোকান ভাঙচুর করে, লুটপাট করে। তারই প্রতিবাদে আজ ২৮টি ব্য়বসায়ী সংগঠন একসঙ্গে ব্য়বসা বন্ধ রেখেছি। প্রয়োজনে জেলা জুড়ে ব্য়বসা বনধের ডাক দেওয়া হবে।" দামোদরবাবুর বক্তব্য়, "যে কোনও রাজনৈতিক দল ধর্মঘট ডাকলে আমরা দোকান বন্ধ করে থাকি। কারণ একদিন দোকানের ক্ষতি হলে ব্য়বসা বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিই, প্রশাসনের কাছে রাজস্ব জমা করি। তাহলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবো কেন? আক্রান্ত ব্য়বসায়ীদের বলা হয়েছে, ব্য়ক্তিগত ভাবে থানায় অভিযোগ জানাতে।"
এদিকে দাড়িভিট ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এদিন গ্রামের বেশ কিছু দোকান খুলেছে। কিন্তু মিষ্টির দোকান, কাপড়ের দোকান, স্টেশনারি দোকান খোলা থাকলেও, খদ্দের বড় একটা নেই। স্থানীয় মিষ্টি ব্য়বসায়ী বাবু সরকার বলেন, "ওই ঘটনার পর আজ দোকান খুললাম। তবে একেবারেই বেচাকেনা নেই। জানি না পরিস্থিতি কবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে। স্কুল না খুললে সেভাবে বিক্রিবাটাও হবে না। আর তো রোজগারের পথ নেই। কী করব কে জানে! গত সাত দিন ধরে স্কুলের আশপাশে গ্রামের মানুষের যে জটলা ছিল, আজ তাও উধাও।"
আরও পড়ুন: বনধের ইসলামপুর দেখল পদ্ম শিবিরের উত্থান
অন্যদিকে, জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডির হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছে জেলা পুলিশ। যদিও এর আগে দুই পরিবারের সদস্যরা সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। মৃত রাজেশ সরকারের ভাই সুজিত বলেন, "রাজ্য় পুলিশের গুলিতে দাদার মৃত্য়ু হয়েছে। রাজ্য়ের হাসপাতালে ভাল করে চিকিৎসা হয়নি। সেই রাজ্য়ের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির ওপর কোনও ভরসা নেই। সিআইডি তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই। আমাদের সম্পূর্ণ ভরসা সিবিআইয়ের ওপর।" শিক্ষক নিয়োগ-কাণ্ডে গুলিতে মৃত অপর যুবক তাপস বর্মনের বাবা বাদল বর্মনও জানিয়েছেন, তাঁদের ভরসা সিবিআইয়ের ওপর। তাঁরা সিআইডি তদন্ত চান না।
এই ঘটনার গ্রেফতার ব্য়ক্তিদের এরপর সিআইডি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। বিজেপির রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হবো। সিআইডি নয়, সিবিআই তদন্ত চাই দাড়িভিট হত্য়াকাণ্ডে। একইসঙ্গে আন্দোলনও চালিয়ে যাবে দল।"