তিনি ইতিহাসে স্থান পেলেন। বরাবরের বাম প্রভাবিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনিই প্রথম ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা করেছেন। তাঁর সঙ্গেই 'ক্লাস রেপ্রেজেন্টেটিভ' পদে লড়ছেন আরও শ'দেড়েক এবিভিপি সদস্য। ১৯ ফেব্রুয়ারি যাদবপুরের ছাত্র ভোট। লড়াইয়ের ময়দানে এসএফআই, আইসা, ডিএসও ডিএসএ, আরএসএফ, টিএমসিপি-র সঙ্গে রয়েছে নবাগত এবিভিপিও। কিন্তু, লাল রঙা যাদবপুরে কি গেরুয়া রঙ আঁচড় কাটতে পারবে? তিনি কি পড়তে পারছেন দেওয়ালের লিখন? এসব প্রশ্ন নিয়েই যাদবপুরের ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সন পদে এবিভিপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শামিল ফিল্ম স্টাডিজ-এর ছাত্র শুভদীপ কর্মকারের মুখোমুখি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
ভোটে তো দাঁড়ালেন, কিন্তু জিতবেন কি? কতটা আত্মবিশ্বাসী?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মুষ্টিমেয় কিছু পড়ুয়া রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের বাদ দিলে বাকিরা যে এখানে সবাই বামপন্থী, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি যখন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছি, নিশ্চই ইতিবাচক কিছু একটা দেখেছি। তাই আশা রাখছি আমি জিতব।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মানেই বামপন্থীদের আঁতুড়ঘর। সেখানে এবিভিপির প্রতিনিধি হয়ে প্রথম মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে ইতিহাসে ঠাঁই পেলেন। কেমন লাগছে?
উমর খালিদ, কানহাইয়া কুমারের সভা হতে পারে, কিন্তু বাবুল সুপ্রিয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারবেন না। এটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রিক অধিকার বুঝে নিতে আমি দাঁড়িয়েছি। তাই ভাল যে লাগছে তা বলতেই হবে।
বন্ধুবান্ধবের থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র নেই। তবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই বেশি পেয়েছি। আবারও বলছি, যাদবপুর মানেই পড়ুয়াদের মধ্যে বামপন্থী মতাদর্শ রয়েছে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়, তাঁরাও লেখাপড়া করেন এখানে। সেরকমই কিছু বন্ধু বান্ধবের থেকে এগিয়ে যাওয়ার ভরসা পেয়েছি। এরপর তো ফলাফল বেরোলে বুঝতে পারব সবটা।
যেদিন বাবুল সুপ্রিয়কে ঘেরাও করা হল, সেদিন আপনার কী ভূমিকা ছিল?
সেদিন আমি ক্লাস করতে ব্যস্ত ছিলাম। পরে অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে তাণ্ডব ঘটেছে, ভাঙচুর চলেছে তার সঙ্গে এবিভিপি জড়িত ছিল না। তবে সেই ঘটনাকে যাদবপুরের ছাত্র হিসেবে আমি একেবারেই সমর্থন করি না। এর তীব্র নিন্দা করি। বাম সংগঠনের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্ত ক্যাম্পাসে আমরা ছাড়া আর কেউ থাকবে না, বামপন্থীদের এই মনোভাবকে আমরা মানছি না।
বাবুল সুপ্রিয়র ঘটনাই কি যাদবপুরে এবিভিপির জন্ম দিয়েছে?
না, এবিভিপির উত্থান সকলেরই নজরে আসছে। এবার আমাদের ক্ষমতা দেখানোর সময় এসেছে। যাদবপুর বিশ্বববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয়র ঘটনা গেরুয়া শিবিরের ক্ষমতা প্রদর্শনের উদাহরণ বলা যেতে পারে।
গেরুয়া শিবির যাদবপুরকে নেশা করার জায়গা হিসেবে কটাক্ষ করে থাকে। যাদবপুরের পড়ুয়া শুভদীপও কি তাই মনে করেন?
কে কী বলেছে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাতে গেরুয়া শিবির বলে তকমা লাগিয়ে দেওয়া যায় না। যাদবপুরে গুটিকয়েক ছাত্র ছাড়াও একটা জগৎ আছে। সবাই এমন নয়।
আপনি চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হলে কাজের অগ্রাধিকার কী হবে?
আমি যদি চেয়ারপার্সন হতে পারি তাহলে ক্যাম্পাসিংয়ের দিকে জোর দেব। কারণ, কলা বিভাগে যেভাবে ক্যাম্পাসিং হয়, তাতে বহু ছাত্রছাত্রীর দক্ষতা থাকলেও পেরে ওঠেন না। সেভাবে দেখলে, খুবই কম প্লেসমেন্ট হয়। বলতে গেলে হয়ই না। এরকম একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেসমেন্ট নিয়ে সমস্যা হবে, সেটি কাম্য নয়। এই দিকটায় নজর দেব প্রথমে। এছাড়া ক্যাম্পাসের পরিবেশ উন্নত করা, বহিরাগতদের অগাধ প্রবেশ যাতে না হয়, সেদিকটাও দেখার ভাবনাচিন্তা আছে।