জলপাইগুড়িতে এবার চরমে উঠলো তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। গতকাল শহরে বেচারাম মান্নার সভায় আদি ও যুব তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হাতাহাতি হয়। সৈকত চ্যাটার্জী ঘনিষ্ঠ যুব তৃণমূল সদস্য কৌস্তুভ তলাপাত্রকে কৃষ্ণ দাস গোষ্ঠীর সদস্যরা বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ এসে ওই যুবককে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করে।
গতকাল অর্থাৎ বুধবার রাতে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ জমা পড়ার পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাতেই গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। তার জেরেই আজ সকাল থেকে কৃষ্ণ দাস গোষ্ঠীর প্রচুর পরিমাণ সমর্থক প্রায় ছ'ঘন্টা কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে রাখেন। সমস্যা মেটাতে থানায় আসেন সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মণ। থানার গেট বন্ধ করে ভেতরে চলে বৈঠক। ছ'ঘন্টা পর থানা থেকে বেরিয়ে বিজয়বাবু বলেন, "বড় ঘটনা নয়।" তবে কেন এতক্ষণ ধরে বৈঠক? তাঁর উত্তর, "ভুল লোককে ধরে এনেছে তাই আমি থানায় এসেছিলাম। এটা এমন কোনো বড় ঘটনা নয়।"
থানা ঘেরাওয়ের প্রেক্ষিতে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি জানান, "গতকালের ঘটনায় আমরা দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছি। এটি একটি মারামারির ঘটনা। ধৃতদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা ভাড়া করা গাড়িতে পাঠিয়েছি, পুলিশের গাড়িতে না পাঠিয়ে।" যার বিরুদ্ধে মূলত অভিযোগ, সেই কৃষ্ণ দাসকে কেন গ্রেফতার করলেন না? অমিতাভবাবু বলেন, "ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।"
কলকাতার ব্রিগেডে ১৯ জানুয়ারি তৃণমূলের সভা উপলক্ষ্যে বুধবার জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ হলে ছিলো বেচারাম মান্নার মিটিং, যেখানে সদলবলে উপস্থিত ছিলেন বারোপেটিয়ার দাপুটে নেতা তথা প্রাক্তন জেলা তৃণমূল প্রধান কৃষ্ণ দাস। অভিযোগ, মিটিং শেষে তৃণমূল যুব কর্মী কৌস্তুভকে ঘিরে ধরে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করেন কৃষ্ণ দাস ও তাঁর দলবল।
আক্রান্ত কৌস্তুভ তলাপাত্র
তৃনমূল যুবর একাংশ মনে করছে, গত নভেম্বর মাসে দলছুটদের দলে ফেরানো নিয়ে জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরে কৃষ্ণ দাসের অনুষ্ঠানে স্থানীয় যুব তৃনমূল নেতা লুৎফর রহমানের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। সেই সময় বেশ কিছু আদি তৃনমূল কর্মী নব্য তৃণমূলীদের হাতে প্রহৃত হন। সেই সময় ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কৌস্তুভ। কাল তাই সুযোগ পেয়ে তাঁকে মারা হলো।
কৌস্তুভ বলেন, "পাশেই আমার বাড়ি। বাড়ির সামনে গাড়ী রাখে। আমি বারবার বললেও শোনে না। দলের মিটিং একথা ঠিক, কিন্তু তাই বলে মানুষের অসুবিধা করে কেন? এই কথা বললেই আমার উপর চড়াও হয় কৃষ্ণ দাস ও তার ছেলেরা। আমাকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গিয়ে মাটিতে ফেলে মারে। আমার সন্দেহ, আমি এর আগে পাহাড়পুরে লুৎফরের ঘটনার প্রতিবাদ করি, তাই আমাকে মারে ওরা।"
কৌস্তুভ তলাপাত্রর বিরুদ্ধে থানায় নালিশ
কৃষ্ণ দাস জানান, "ব্রিগেডে যাওয়া নিয়ে বেচারাম মান্নার সভায় আমরা কৃষান ক্ষেত মজদুর এর পক্ষে এসেছি। এই ছেলেটি মাতাল। নেশার ঘোরে ছটি বাইকের পাম্প ছেড়ে দেয়। যাদের বাইক তারা মারধর করেছে। আমি পুলিশ ডেকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। থানায় অভিযোগ করেছি। আইন তো আমরা হাতে তুলে নিতে পারি না। আমাদের দলের সদস্য কিনা জানি না। আজকে আমাকে কিছু বাজে কথা বলেনি।"
জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আই সি বিশ্বাশ্রয় সরকার জানিয়েছেন, যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।