জম্মু কাশ্মীরের পুর নির্বাচন শুরু হচ্ছে ৮ অক্টোবর থেকে। কিন্তু গোটা উপত্যকায় কোনও প্রচার নেই। ঘরে ঘরে যাওয়া নেই, নেই মিছিল। এমনকি কারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, বা তাঁরা কোন দলের, এসবও জানানো হচ্ছে না।
আধিকারিকরা বলছেন, এই গোপনীয়তার কারণ নিরাপত্তাজনিত। বিশেষ করে উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে যেকানে সংঘর্ষ লেগেই থাকে। তাঁদের বক্তব্য, প্রার্থীদের নাম ধাম প্রকাশ করলে তাঁরা বিপদের মুখে পড়বেন, এমনকি তাঁদের প্রাণ সংশয় হতে পারে। !
এখনও পর্যন্ত উপত্যকার ৪০টি মিউনিসিপ্যাল বডি এবং ৫৯৮ টি ওয়ার্ডের জন্য ৮৫১ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। গোটা জম্মু কাশ্মীরে ৭৯টি মিউনিসিপ্যাল বডিতে ১১৪৫ টি আসনের জন্য ৩০০৫ জন প্রার্থী ভোটে লড়ছেন।
আরও পড়ুন, এলগার পরিষদ: গৌতম নওলাখার মুক্তির নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মহারাষ্ট্র সরকার
রাজ্যের দুই বৃহৎ দল, পিডিপি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স ভোট বয়কট করছে। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিজেপি, কংগ্রেস এবং সাজাদ লোন নেতৃত্বাধীন পিপলস কনফারেন্স। উপত্যকার ৬০ শতাংশ আসনেই সম্ভবত কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না।
উপত্যকার ৫৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭২টিতে কোনও মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি, এবং ১৯০টি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই ওয়ার্ড গুলিতে ভোট হওয়ার কোনও সম্ভবনাই নেই। উপত্যকার ৪০টি মিনিসিপ্যাল বডির মধ্যে ২১টিতে ভোট হবে না। তবে শ্রীনগর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ৭৪টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন শ্রীনগরের ওয়ার্ডগুলির জন্য ৩১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জম্মু কাশ্মীরের মুখ্য নির্বাচন অফিসার শালীন কাবরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন শেষ হয়ে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিস্তারিত বিবরণ রিটার্নিং অফিসারের অফিসের বাইরের নোটিসবোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক।
কিন্তু জনগণের অবগতির জন্য তালিকা টাঙানো তো দূরের কথা, রিটার্নিং অফিসাররা বলেছেন, তাঁদের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের নাম গোপন রাখার নির্দেশ আছে।
দক্ষিণ কাশ্মীরের এক রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে স্পষ্ট মৌখিক নির্দেশ রয়েছে। আমাদের বলা হয়েছে, তা নাহলে প্রার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।’’
বান্দিপুরের ডেপুটি কমিশনার শাহিদ চৌধুরী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, বান্দিপুর মিউনিসিপ্যালিটির প্রার্থীদের নামের তালিকা তিনি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘হাজিন ও সুম্বালের ক্ষেত্রে আমরা নাম প্রকাশ করিনি। সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণেই আমরা নাম প্রকাশ করতে পারিনি।’’
বারামুল্লার এক প্রার্থী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের একটু চুপিসাড়ে থাকতে বলা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ না খুলতে বলা হয়েছে আমাদের।’’
বারামুল্লার ডেপুটি কমিশনার নাসির নাকাশ বলেছেন, ‘‘নিরাপত্তার ইস্যু যেমন রয়েছে, তেমন আরও কিছু ইস্যুও রয়েছে।’’
নির্বাচন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সরকার চায় না প্রার্থীরা জঙ্গীদের হাতে আক্রান্ত হোন। ’’মনোনয়নপর্ব এখনও চলছে। এখন যদি কোনও প্রার্থী বা কোনও ব্যক্তি আক্রান্ত হন, তাহলে সে ঘটনা অন্য় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিরুৎসাহের কারণ হবে। উপত্যকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মীরের পরিস্থিতি মাথায় রাখলে প্রার্থীদের নিরাপত্তাই সর্বাগ্রাধিকারের বিষয়।’’
সোপোরের এক প্রার্থী নিজের নাম প্রকাশ চান নি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি গরিব মানুষ। দয়া করে আমার নাম প্রকাশ করবেন না। আমি জীবনে বহু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। আমি একবার সুযোগ পেলে গরিব নামুষের জন্য় কাজ করব। আমি জানি আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হব।’’
তবে সমাজকর্মী তৌসিফ রায়নার মত প্রার্থীও আছেন, যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর প্রকাশ্যে সে কথা জানাচ্ছেন।
বারামুল্লার প্রার্থী তৌসিফ রায়নার বক্তব্য,‘‘আমি স্পষ্ট কথায় বিশ্বাস করি। সত্যি বলতে কী, আমার ভোটে লড়ার কোনও ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু কিছু লোকজন আমায় রাজি করালেন। ওঁরা বললেন শিক্ষিত মানুষজন এগিয়ে না এলে দুর্নীতিবাজ লোকেরা ব্যবস্থাকে গ্রাস করে নেবে।’’ভোটে লড়ছেন তৌসিফ রায়নার মা এবং ভাইও।