এ এক বঞ্চনার ইতিহাস। যে ইতিহাসে জড়িয়ে আছে এক বিজেপি বিধায়কের কীর্তি। তখনও অবশ্য তিনি বিধায়ক হননি। কিন্তু, জাতপাতের রাজনীতিতে হাত পাকিয়ে ফেলেছিলেন। স্থানীয় এক দলিত পরিবারের বিয়ের শোভাযাত্রা জাঠদের এলাকা দিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। এমনই হুমকি দিয়েছিলেন চৌধুরি বাবুলাল। পুলিশ এসেছিল। নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিল দলিত পরিবারটিকে। কিন্তু, এলাকায় প্রভাবশালী চৌধুরি বাবুলালের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উলটে, উভয়পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চেয়েছিল। বৈঠকে আশ্বাসও মিলেছিল। কিন্তু, কোনও লাভের লাভ হয়নি। প্রথমদিন বিয়ের শোভাযাত্রা আটকে দিয়েছিল বাবুলালের নেতৃত্বাধীন জাঠ সম্প্রদায়ের লোকজন। পরদিন রীতিমতো হামলা চালিয়েছিল। দলিতদের বাড়ি বেছে বেছে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।
এটা ১৯৯০ সালের ঘটনা। তখন ভারতীয় রাজনীতিতে রীতিমতো টালমাটাল। কেন্দ্রে সরকার বেশিদিন টিকছে না। প্রধানমন্ত্রীর তখতে কিন্তু তখন উত্তরপ্রদেশেরই এক নেতা। জাতীয় রাজনীতিতে মণ্ডল কমিশন কার্যকর করার কর্ণধার বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং। যা দলিতদের মর্যাদাকে সুরক্ষিত করেছিল। অথচ সেই উত্তরপ্রদেশেই সেই সময় দলিতদের বিরুদ্ধে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন চৌধুরি বাবুলালের নেতৃত্বাধীন জাঠবাহিনী। পরে এনিয়ে মামলা হয়। লড়াই ছাড়েননি আক্রান্ত দলিত জাতভ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ভারত সিং। কিন্তু, চৌধুরি বাবুলাল আজ অবধি গ্রেফতার হননি। ঘটনার পর তিনি মাসখানেক নিখোঁজ ছিলেন। তারপর আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়ে যান।
আর, এই বৃহস্পতিবার তো রীতিমতো পরিহাস ঘটল ৩২ বছর ধরে চলা এই মামলার সঙ্গে। আগ্রার স্থানীয় আদালত চৌধুরি বাবুলালকে এই মামলায় বেকসুর খালাস ঘোষণা করে দিয়েছে। সঙ্গে বেকসুর খালাস ঘোষণা করল আরও সাত অভিযুক্তকে। এই সাত অভিযুক্তই ফতেপুর সিক্রির পানওয়ারি এলাকার বাসিন্দা। এই অভিযুক্তরা হলেন- মুন্না পাল, রামবীর সিং, রূপ সিং, দেবী সিং, শিবরাজ, শ্যামবীর ও সত্যবীর।
তবুও হাল ছাড়তে চান না ভরত সিং। পানওয়ারি এখন তাঁর অতীত। এখন থাকেন সেখান থেকে অনেক দূরে আবাস বিকাশ এলাকায়। পানওয়ারি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের এলাকা। একটা সময় চাষবাস করতেন। নতুন জায়গায় এসে সেই পেশাও বদলে ফেলেছেন। বেসরকারি কারখানায় কাজ করেন। তিন ছেলেও বড় হয়ে গিয়েছে। তাঁরাই এখন সংসারটা চালান। এককথায় সুখী পরিবার। কিন্তু, ৩২ বছর আগে বাবুলালদের কাণ্ড-কারখানা আজও ভুলতে পারেননি ভরত সিং। জোর করে তাঁর বোনের বিয়ের শোভাযাত্রা যেতে দেবে না। আর, সেই জেদ বজায় রাখতে হামলা চালিয়েছিল বিয়ের মণ্ডপে। ১৫টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। তার মধ্যে ভারত সিংয়ের বাড়িও পুড়েছে।
আরও পড়ুন- নীতি আয়োগের বৈঠকে বঞ্চনার অভিযোগে সরব মুখ্যমন্ত্রীরা, প্রতিবাদে গরহাজির কেসিআর
বাবুলাল সেই সময় ব্লকস্তরের নেতা ছিলেন। ওই হামলার পর জাঠদের মধ্যে তাঁর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। ১৯৯৬ সালে ফতেপুর সিক্রি থেকে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিধায়ক হন। ২০০২ সালে রাষ্ট্রীয় লোকদলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও জয়ী হয়েছেন ফতেপুর সিক্রি থেকে। ২০১৪ সালে বিজেপির হয়ে ফতেপুর সিক্রি লোকসভা আসনে জয়ী হন। চলতি বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে আবার ফতেপুর সিক্রি থেকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বিগুণ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
ভরত সিংয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, মামলা চলাকালীন তিন দলিত প্রত্যক্ষদর্শী বিপক্ষে চলে গিয়েছেন। কেস ডায়েরি হারিয়ে গিয়েছে। আর, সেই সবেরই ফায়দা তুলেছেন বাবুলালরা। আর, খোদ বাবুলাল বলছেন সবই তাঁর বিরুদ্ধে স্রেফ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আদালতের ওপর তাঁর ভরসা আছে। সেটা ফের প্রমাণ হয়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে সুবিচারের জন্য নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভরত সিং।
Read full story in English