কথিত আছে, মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের ভারতভুক্তির জন্য অনেক আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি পণ্ডিত নেহরু। এই ঘটনার জন্য সংঘ পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই পণ্ডিত নেহরুর বিরুদ্ধে সরব। শোনা যায়, মহারাজার প্রশাসনের প্রতি জনসমর্থন নিশ্চিত করতে নেহেরু ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা শেখ আবদুল্লাহকে প্রস্তাবিত সরকারে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু, মহারাজা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি এই প্রস্তাবে রাজি নন।
আর, এসব কারণেই দীর্ঘদিন ধরে সংঘ পরিবারের সমালোচনায় বিদ্ধ হন নেহরু। কারণ, মহারাজা যখন নেহরুকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেই সময় কাশ্মীরে পাক হানাদাররা প্রবেশ করেনি। বিশ্বের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে বহু বিখ্যাত রাজনীতিবিদ জীবনে বহু ভুল করেছেন। নেহরুও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। যদিও, খুঁটিয়ে বিচার করলে দেখা যাবে যে নেহরু এক্ষেত্রে কোনও ভুলও করেননি।
আসলে জম্মু-কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ছিলেন পরাধীন ভারতের সেই সব রাজাদের অন্যতম, যাঁরা ব্রিটিশ ভারত ভাগের সময় ভারত ও পাকিস্তান, কোনও দেশেই যোগ দিতে চাননি। ১৯৪৭ সালের জুনে, দেশভাগের কয়েক মাস আগে ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন, মহারাজার কাছে ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে শ্রীনগরে গিয়েছিলেন। মহারাজা তাঁর অতিথিকে রাজকীয় কায়দায় আপ্যায়ন করেছিলেন। কিন্তু, পেটের অসুখের অজুহাতে যাবতীয় আলোচনা এড়িয়ে যান। আসলে হরি সিং আশা করেছিলেন যে, ব্রিটিশদের ক্ষমতার অবসান ঘটিয়ে তিনি একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রের শাসক হবেন।
কিন্তু, মহারাজা হরি সিংয়ের আশা শীঘ্রই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ, পাকিস্তানের সহায়তায় শীঘ্রই পুঞ্চে বিদ্রোহ হয়। পাশাপাশি, পাকিস্তান একটি অঘোষিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যেহেতু তখনকার দিনে কাশ্মীরের প্রধান বাণিজ্য চলত পাকিস্তানের সঙ্গেই, অঘোষিত এই নিষেধাজ্ঞার ফলে মহারাজার রাজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। পরিস্থিতি দেখে মহারাজা তাঁর সিদ্ধান্ত বদলেছিলেন। তিনি তাঁর মনোনীত প্রধানমন্ত্রী তথা বিচারপতি মেহেরচাঁদ মহাজনকে নেহরুর কাছে বোঝানোর জন্য পাঠান। মহারাজা চেয়েছিলেন শর্তাধীনে ভারতে যোগ দিতে।
আরও পড়ুন- গুজরাট গণধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের মুক্তির বিরুদ্ধে মামলা, কারণ না-জানিয়ে সরলেন বিচারপতি
এই পরিস্থিতিতে হরি সিংয়ের প্রশাসনের প্রতি জনসমর্থন নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন নেহেরু। তিনি মহারাজাকে ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা শেখ আবদুল্লাকে যাতে কাশ্মীর সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সেই অনুরোধ করেছিলেন। মহারাজা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি অন্তত এই পর্যায়ে তা করতে প্রস্তুত নন। এই পরিস্থিতিতে মেহের চাঁদ মহাজন যখন নেহেরুর কাছে হরি সিংয়ের শর্তগুলি জানিয়েছিলেন, তখন জওহরলাল পালটা জানিয়েছিলেন যে শেখ আবদুল্লাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে কাশ্মীর প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। নেহরু বলেছিলেন যে, জনসমর্থন আছে, এমন একটি সরকারই কেবলমাত্র কাশ্মীরের দায়িত্বে থাকা উচিত।
Read full story in English