কয়েক ঘন্টার ব্যবধান। তার মধ্যেই 'বিদ্রোহী' তকমা ঘুচিয়ে ফের 'দিদি পন্থী' জিতেন্দ্র তিওয়ারি। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় তৃণমূলের তাকছেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক। ফের তাঁকে দেখা যেতে পারে আসানসোলের পুর প্রশাসকের ভূমিকায়।
দিন কয়েক আগে স্মার্ট সিটি প্রকল্পে আসানসোল পুরসভার টাকা না পাওয়াকে কেন্দ্র করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি লিখে রাজ্যের প্রতি উন্নয়ন বিরোধী রাজনীতির অভিযোগ করেছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তারপরই দলের নেতৃত্বের তরফে জিতেন্দ্রকে 'বিদ্রোহী' বলে দেগে দেওয়া হয়। গর্জে ওঠেন ফিরহাদ হাকিম। পাল্টা তোপ দাগেন আসানসোলের পুর প্রশাসকও।
এর মধ্যেই গত বুধবার দলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসাও শোনা যায় জিতেন্দ্র তিওয়ারির মুখে। নিন্দায় ভরিয়ে দেন পুরমন্ত্রীকে। ওই দিনই সন্ধ্যায় তাঁকে দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খোলা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ সুনীল মণ্ডলদের সঙ্গে বহৈঠক করতেও দেখা যায়।
জানা যায় এসবের পরই, মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে জিতেন্দ্রকে রাগ না করে দলে থেকে যাওয়ার কথা বলেন।
যদিও এতে চিঁড়ে ভেজেনি। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার আসানসোলের পুর প্রশাসকের পদ থেকে ইস্তফা দেন জিতেন্দ্র। তৃণমূল ত্যাগেরও ঘোষণা করেন। জল্পনা বাড়ে তাঁর বিজেপি যোগ নিয়ে।
কিন্তু, তৃণমূলের 'অত্যাচারের প্রতীক' জিতেন্দ্রকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রী প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ো। ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পালও। ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে যে জোড়া-ফুল ছেড়ে পদ্ম শিবিরের পা বাড়িয়ে থাকা জিতেন্দ্রর বিজেপিতে যোগ খুব একটা মসৃণ হবে না।
শুক্রবার সকালে পরিবার নিয়ে কলকাতায় আসেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। সন্ধ্যায় সুরুচি সঙ্ঘের অফিসে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রশান্ত কিশোরও। তারপরই ডিগবাজি খান তিনি। বলেন, 'আমি তৃণমূলেই থাকছি। আমি আমার ইস্তফা গ্রহণ না করতে অনুরোধ করবো। অরূপ বিশ্বাস আমাকে বলেছেন, মমতা দি আমার আচরণে আঘাত পেয়েছেন। মমতাদিকে আমি আঘাত দিতে চাই না। আমি দিদির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো। দল ছাড়ার কথা বলা ভুল হয়েছিল। আমি যেমন দলের কাজ করছিলাম তেমনই করব।'
পুর মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও যাবতীয় অসন্তোষ ভুলে তাঁকে 'বড় দাদা' বলে সম্বোধন করেন।
মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও জানান, 'জিতেন্দ্র তিওয়ারি তৃণমূলে ছিলেন- আছেন-থাকবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বেন। পরিবারে নানা বিষয়ে মতবিরোধ হয়। তাই বলে কেউ মাকে ছেড়ে চলে যায় না।'
বিজেপির দরজা না খোলাতেই কি ফের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন? শুক্রবার রাতের জিতেন্দ্র তিওয়ারির ভোলবদলের পর সেই প্রশ্নটা অবশ্য উঠেই গেল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন