Advertisment

জেএনইউ হামলার প্রতিবাদে সরগরম কোচি থেকে কলকাতা

গেটওয়ের বিক্ষোভকারীরা জানান তাঁরা শাহিন বাগের ধরনে অনির্দিষ্টকাল আন্দোলন চালাতে চান। দিল্লিতে যেভাবে সিএএ, এনআরসি ও এনপিআর বিরোধী বিক্ষোভের উদাহরণ দেন তাঁরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
JNU

জেএনইউ হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ

মহারাষ্ট্র

Advertisment

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রবিবার রাতের সন্ত্রাসের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেদিন মাঝরাতে গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়। সামান্য কয়েকজনকে নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলেও প্রতি ঘণ্টায় জমায়েত বাড়তে থাকে। সোমবার সন্ধের মধ্যে সেখানে অন্তত ১০০০ বিক্ষোভকারী জড়ো হন জেএনইউয়ের সমর্থনে। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া, হুতাতমা চক এবং পরে বান্দ্রার কার্টার রোডে বিক্ষোভে জমা হন ছাত্রছাত্রী, পেশাকর্মী, শিক্ষকশিক্ষিকা, ফিল্ম ও থিয়েটারের মানুষরা। গেটওয়ের বিক্ষোভকারীরা জানান তাঁরা শাহিন বাগের ধরনে অনির্দিষ্টকাল আন্দোলন চালাতে চান। দিল্লিতে যেভাবে সিএএ, এনআরসি ও এনপিআর বিরোধী বিক্ষোভের উদাহরণ দেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীরা রাজনৈতিক নেতাদের সেখানে ভাষণ দিতে দেননি। তাঁরা এ আন্দোলনের নাম দিয়েছেন "গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া দখল"।

সারা দিন বিক্ষোভকারীরা রোদের মধ্যেই বসে ছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রী জিতেন্দ্র আওহাদ বিক্ষোভে যোগ দেন। তিনি এই বিক্ষোভস্থল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে বিক্ষোভকারীরা সে অনুরোধ সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন।

সোমবার আইআইটি বম্বে ফ্যাকাল্টির তরফ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে এই হামলার নিন্দা করা হয়। সোমবার রাতের মধ্যে তাতে সমর্থন জানান ১৪১ জন ফ্যাকাল্টি মেম্বার। তাঁরা স্থির করেছেন আগামী ১০ দিন সন্ধে ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কিত বিষয়ে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন।

টাটা ইনস্টিট্যুট অফ সোশাল সায়েন্সেসের টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন জেএনইউয়ের ফ্যাকাল্টি, ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদের উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছেন।

পুনেতে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টটিট্যুটের ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন মঙ্গলবার তাঁরা মিছিল করবেন। ঔরঙ্গাবাদে ছাত্ররা জেএনইউ সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বাবা সাহেব আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে হাত ধরে মানবশৃঙ্খল রচনা করেন। তাঁরা বিজেপি, এবিভিপি ও সংঘপরিবারের বিরুদ্ধে শ্লোগান তোলেন।

পশ্চিম বঙ্গ

এসএফআই সদস্য, ছাত্রছাত্রী, নাগরিক সমাজের সদস্য ও রাজনৈতিক দলগুলি সোমবার সারা কলকাতা জুড়ে অজস্র মিছিল করেন।  কলকাতায় এসএফআই সব মিলিয়ে ১৪টি মিছিল করে। তাদের দাবি ছিল জেএনইউ হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল বের করেন। তাঁরাও জেএনইউ হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ তুলে এবিভিপির বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন।

এসএফআইয়ের সবচেয়ে বড় মিছিল হয় উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে জোড়াসাঁকো পর্যন্ত। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি থেকে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে মধ্য কলকাতায় বিজেপি সদর দফতরে যান। পুলিশ মাঝরাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে দেয়।

সন্ধেবেলা বিজেপি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের অভিযোগ, যাদবপুরে তাদের পার্টি অফিসে বাম ছাত্রছাত্রীরা হামলা করেছে। ডিএসও, সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেস ও যুব কংগ্রেসও শহরে মিছিল করে।

পাঞ্জাব

পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সোমবার বিকেলে ছাত্রকেন্দ্রে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বাম ও মধ্যপন্থী ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করার আগে এবিভিপির সদস্যরা অল্প সময়ের জন্য জেএনইউ-য়ে বাম সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেন। বহু সংখ্যায় বামপন্থী ছাত্রছাত্রী ও অন্যান্যরা চত্বরে ঢুকে পড়ার পর এবিভিপি-র বিক্ষোভ তলিয়ে যায়।

লুধিয়ানা বাস স্ট্যান্ডেও বিক্ষোভ আয়োজিত হয়।

উত্তর প্রদেশ

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা জেএনইউ হামলার বিরুদ্ধে তিরঙ্গা যাত্রা আয়োজন করেন। মিছিলের আয়োজন করেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা, তাতে সমর্থন ছিল এএমইউ কো অর্ডিনেশন কমিটির। এসএসপির হাতে ভারেতর রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে লেখা একটি স্মারকলিপি তুলে দেন তাঁরা।

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছাত্রছাত্রী, তফশিলি জাতি, জনজাতি ও ওবিসিদ শিক্ষকদের সংগঠন এবং কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন জেএনইউয়ের সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সমাজবাদী ছাত্র সভা, এনএসইউআই, আইসা এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে। এবিভিপি ছাত্রছাত্রীরাও একটি মিছিলও সংগঠিত করে। সেখানে হামলার দায় চাপানো হয় বামপন্থীদের উপর।

কেরালা

রবিবারের হামলার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই কেরালায় বিক্ষোভ শুরু হয়। সোমবারও তা চলতে থাকে।  কোঝিকোড় ছাড়া সব জেলাতেই এসএফআই বিক্ষোভ দেখায়। কোঝিকোড়ে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএমের ছাত্র সংগঠন ডিওয়াইএফআই। কোচিতে ছাত্র ও সাধারণ নাগরিকরা দু কিলোমিটার জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

রাজস্থান

এনএসইউআই এবং এবিভিপির সমর্থক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জয়পুরের রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সংঘর্ষ বাধে। এরা একে অপরকে জেএনইউ হামলার জন্য দায়ী করতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল জ্বালানো হয়। এবিভিপির সমর্থকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দু পক্ষই শ্লোগান দিতে শুরু করে। পুলিশ গিয়ে মধ্যস্থতা করে।

তেলেঙ্গানা

হায়দরাবাদ ও ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে। হোস্টেলবাসী ছাত্ররা বাইরে এসে হামলার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে শুরু করেন। সোমবার বেশ কিছু ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ দেখায় ও হামলাবাজদের শাস্তির দাবি করে। ট্যাঙ্ক বুন্ডে আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান।

গুজরাট

আমেদাবাদ আইআইএমের বাইরে সোমবার ব্যাপক সংখ্যক নাগরিক সমাজের সদস্য, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকরা জড়ো হন। ভডগামের নির্দল বিধায়ক জিগনেশ মেহবানিও বিক্ষোভে যোগ দেন। পুলিশ আইআইএম আহমেদাবাদের বাইরে থেকে তিন এবিভিপি সমর্থককে আটক করে। অভিযোগ, এরা ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছিল।

আসাম

গুয়াহাটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী ও কিছু জেএনইউ প্রাক্তনী গুয়াহাটির নেহরু পার্কে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেন। এঁদের অভিযোগ হামলার পিছনে রয়েছে এবিভিপি। উজান আসামের জোড়হাট শহরেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়। আইআইটি গুয়াহাটিতে একদল ছাত্র বিক্ষোভ দেখান। আসুও এই হামলার নিন্দা করেছে।

হরিয়ানা

হরিয়ানা ফেডারেশন অফ ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন জেএনইউ সন্ত্রাসের নিন্দা করেছে। মঙ্গলবার সারা রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকরা কালো ব্যাজ পরবেন বলে জানানো হয়েছে।

JNU
Advertisment