Advertisment

‘জেপিসি নয়, ইচ্ছে হলে সুপ্রিম কোর্টে যান’, আদনি ইস্যুতে বিরোধীদের নিশানা বিজেপি নেতার

বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপি নেতা সুশীল মোদী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Adani, Adani hidenburg report, JPC on Adani, Adani stock manipulation, parliament session, Sushil modi, indian express political pulse" />

জেপিসি নয়, ইচ্ছে হলে সুপ্রিম কোর্টে যান। অযথা সংসদের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না, বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপি নেতা সুশীল মোদী। তিনি এদিন আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং স্টক ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ তদন্তকারী একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

Advertisment

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সবকিছুতে জেপিসি গঠন করা যায় না। শিশুসুলভ আবদার করবেন না, বিবিসি ডকুমেন্টারি, রাফালের মত বিষয় নিয়ে বিরোধী দল সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন, এক্ষেত্রেও আপনার মনে কোন সংশয় থাকলে আপনি শীর্ষ আদালত বা উচ্চ আদালতে মামলা করতেই পারেন, গণতন্ত্র আপনাকে সেই অধিকার দিয়েছে। এটা বাজেট অধিবেশন, বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করুন, দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করুন। তিনি আরও বলেন, “আমি বিরোধীদের কাছে অনুরোধ করব সোমবার থেকে হাউসের কাজকর্ম যাতে সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হয় তার জন্য সহযোগিতা করুন”।

আদানি ইস্যুতে উত্তাল রাজনীতি। গত ২ দিন ধরে বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে কেন্দ্র। এর মাঝেই আদানি ইস্যু নিয়ে নিরবতা ভাঙলেন কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এই প্রথম আদানি ইস্যু নিয়ে দেশের মানুষকে ভরসা জোগালেন। আশার কথা শোনালেন তিনি। কী বলেছেন অর্থমন্ত্রী? নির্মলা সীতারমণ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘এখনও আদানিতে পয়সা ঢেলে লাভ করছে SBI, LIC’।

দিনের পর দিন আদানি গ্রুপের শেয়ার দর নিন্মমুখী। কপালে চিন্তার ভাঁজ আমজনতার। কারণ অনেকেই যে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) এবং জীবন বিমা নিগমে (এলসিআই) টাকা গচ্ছিত রাখেন, সেই দুই সংস্থার সঙ্গে আদানির যোগ আছে। আদানি গ্রুপকে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। আবার আদানি গ্রুপে বিনিয়োগ আছে এলআইসির। সেই উদ্বেগের মধ্যেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আশ্বাস দিলেন, এখনও আদানি গ্রুপে টাকা ঢেলে লাভ করছে এলআইসি এবং এসবিআই।

এদিকে বিতর্কের মুখে পড়ে বিতর্কের মুখে বড় সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী, বাজার থেকে তুলে নেওয়া হল ২০ হাজার কোটির এফপিও। বুধবার সংস্থার পরিচালন পর্ষদ এক বৈঠকে গ্রাহকদের স্বার্থে তাদের সম্পূর্ণরূপে সাবস্ক্রাইবড, ২০ হাজার কোটি টাকা ইকুইটি শেয়ারের এফপিও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামন বলেন, ‘আদানি নিয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) এবং জীবন বিমা নিগম (এলআইসি) বিস্তারিত বিবৃতি জারি করেছে। এসবিআই এবং এলআইসি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে অনুমোদিত সীমার মধ্যেই আদানি গ্রুপে টাকা ঢেলেছে এই দুই সংস্থা এবং উভয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনও লাভজনক অবস্থায় রয়েছে।’ যদিও শুক্রবার ভারতের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান দীনেশ খারা দাবি করেছেন, আদানি গ্রুপে সার্বিকভাবে ২৭,০০০ কোটি টাকা ঢেলেছে এসবিআই। যা রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কের মোট মূলধনের ০.৮৮ শতাংশ।

একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, আদানি গ্রুপের শেয়ারে ধস নামার ফলে জোরদার ধাক্কা খেয়েছে এলআইসি। গত ৩০ জানুয়ারি এলআইসির তরফে বিবৃতিতে দাবি করা হয়, আদানি গ্রুপে যে পরিমাণ টাকা ঢেলেছে এলআইসি, তা মোট বিনিয়োগের এক শতাংশেরও কম। যে অঙ্কটা ৩৬,৪৭৪.৭৮ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি দায়িত্বের সঙ্গে বলতে চাই যে ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টর খুব ভাল অবস্থায় রয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির এনপিএ কমেছে। ধারাবাহিকভাবে ঋণ আদায় হচ্ছে এবং ব্যাংকগুলোর অবস্থান খুবই শক্তিশালী। আর এর প্রমাণ আন্দাজ করা যায় যে তারা এখন স্বাচ্ছন্দ্যে টাকা জোগাড় করছে’।

একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আদানি গোষ্ঠীতে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ স্থগিত করার প্রশ্নে, অর্থমন্ত্রী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘ভারতের প্রশাসনিক ব্যবস্থা খুব শক্তিশালী। এখানে একটি স্থিতিশীল সরকারের পাশাপাশি একটি সুনিয়ন্ত্রিত আর্থিক বাজার রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ভারতে বিনিয়োগকারীদের আগে যে আস্থা ছিল তা ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে’।

বাজেট পেশের দিন আদানি গ্রুপের কারণে শেয়ারবাজারে পতন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শেয়ারবাজার বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে যে কারণেই বাজার পতন হোক না কেন, আমি নিশ্চিত বাজেটে ভালো ফল হবে। আগামী দিনেও এর প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়বে’। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকে আদানি গ্রুপের শেয়ারের পতন অব্যাহত রয়েছে। রিপোর্ট সামনে আসার আগে গৌতম আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২০ বিলিয়ন।

যদিও সরকারের এমন ঘোষণার পরেও আদানি ইস্যুতে কেন্দ্রকে কোণঠাসা করতে ছাড়েনি বিরোধী দলগুলি। ‘মোদি-ঘনিষ্ঠ’ আদানির বিরুদ্ধে সংসদে তদন্তের দাবি। বাজেট অধিবেশন চতুর্থ দিনেও আদানি ইস্যুতে উত্তাল সংসদ। নিশানায় মোদী সরকার। আদানি অস্ত্রেই জোট কৌশল বিরোধীদের।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বৃহস্পতিবার জীবন বীমা কর্পোরেশন, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং আদানি গ্রুপের অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলির দ্বারা জোরপূর্বক বিনিয়োগের তদন্তের দাবি করেছেন। বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে জানান, যৌথ সংসদীয় কমিটি বা ভারতের প্রধান বিচারপতি দ্বারা গঠিত একটি দল দ্বারা এই সমস্যাটি খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে মোদি-ঘনিষ্ঠ’ আদানির বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগের তদন্তের দাবি করেছেন বিরোধী শিবির, সেই সঙ্গে সরকারকে এই নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবিও জানানো হয়েছে।

বিজেপি বিরোধী সমমনস্ক সবদল- কংগ্রেস, ডিএমকে, টিএমসি, এসপি, জেডি(ইউ), শিবসেনা, সিপিআই(এম), সিপিআই, এনসিপি, আইইউএমএল, এনসি, আপ এবং কেরল কংগ্রেসের নেতারা সংসদে বৈঠক করেন বৈঠক করেন। চলতি বাজেট অধিবেশন চলাকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আদানি গ্রুপ বিতর্ককে ইস্যু করেছে বিরোধী  দলগুলি।কংগ্রেসের এক সিনিয়ার নেতা বলেন, “যদি বাজারে পতন অব্যাহত থাকে এবং সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করে, তবে তা ভারতের অর্থনীতির পক্ষে একটি  কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে”। দলের এক অন্য নেতা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন,  আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভারতের সম্মান, গণতন্ত্র, প্রতিরক্ষার ওপর আক্রমণ। অবিলম্বে এর তদন্ত হওয়া উচিত”। 

CONGRESS Mallikarjun Kharge BJP Leader Goutam Adani Sushil Modi
Advertisment