Bharat Ratna LK Advani: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি, দেশের সর্বোচ্চ রাজনীতি- লালকৃষ্ণ আদবানির দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রায় একাধিকবার বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী। শনিবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে আদবানিকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন দেওয়া হবে। সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি পোস্টে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'তাঁকে (লালকৃষ্ণ আদবানি) ভারতরত্ন প্রদান করা আমার জন্য খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত। জনজীবনে আদবানিজি-র দশক-ব্যাপী সেবা, স্বচ্ছতা এবং সততার প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি দ্বারা চিহ্নিত, রাজনৈতিতে যা একটি অনুকরণীয় মান স্থাপন করেছে।'
জীবনের প্রথমার্ধ
১৯২৭ সালের ৪ নভেম্বর করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন লালকৃষ্ণ আদবানি। আরএসএস-এ যোগ দেন ১৯৪২ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সিন্ধ থেকে দিল্লিতে চলে আসেন লালকৃষ্ণ। ১৯৫৭ সালের প্রথমদিকে অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং অন্যান্য নবনির্বাচিত জনসংঘের সাংসদদের সংসদীয় কাজে সহায়তার সময় আদবানি মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেন।
১৯৫৮ সালে, আদবানি জনসংঘের দিল্লির সম্পাদক হন। এই ভূমিকার পাশাপাশি, ১৯৬০ সালে তিনি একজন সাংবাদিক হিসাবে তাঁর জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। তবে, তাঁর এই দায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, কারণ তিনি ১৯৬৭ সালে পূর্ণসময়ের রাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭০ সালের এপ্রিলে, ইন্দরকুমার গুজরালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে রাজ্যসভার একটি আসন শূন্য হয়েছিল। গুজরাল ১৯৯৭ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ১৯৯৮ সালের পর্যন্ত ভারতের ত্রয়োদশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গুজরালের জায়গায় জনসংঘ আদবানিকে প্রার্থী করে এবং কাউন্সিলে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে নির্বাচিত হন। এই সময়েই তিনি দিল্লির নাগরিক পরিষদ থেকে সংসদে যান।
রাজনৈতিক জীবন
তারপরের প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিং ১৯৯০ সালের ৭ আগাস্ট অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীগুলিকে (ওবিসি) সংরক্ষণের জন্য মণ্ডল কমিশনের সুপারিশগুলি বাস্তবায়নের ঘোষণা করেছিলেন, যা হিন্দুদের ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল। মণ্ডল ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ পরে, ভিএইচপি যাতে অযোধ্যায় মন্দির আন্দোলনকে সমর্থন করে তার জন্য আরএসএস ১৯৯০ সালের ২৬ অগাস্ট একটি সভা আহ্বান করেছিল। সেই বৈঠকে উপস্থিত আডবাণী আন্দোলনের সম্ভাব্যতা অনুভব করেছিলেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, তিনি একটি বিশাল রামমন্দিরের জন্য সমর্থন জোগাড়ে সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রার ঘোষণা করেছিলেন। যাত্রাটি ১৯৯০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল, আদবানি প্রতীকীভাবে সোমনাথ মন্দিরে প্রার্থনা করেছিলেন যা স্বাধীনতার ঠিক পরে কেন্দ্র দ্বারা পুনর্নির্মিত হয়েছিল এবং "মধ্যযুগীয় হানাদারদের" দ্বারা অতীত ধ্বংসের "স্মৃতি" ভাগ করে নিয়েছিল। যা অযোধ্যায় রামমন্দিরের দাবিকে উস্কে দিয়েছিল। সেই সময় নরেন্দ্র মোদী গুজরাট যাত্রার আয়োজনে সাহায্য করেছিলেন।
যাত্রাটি ব্যাপকভাবে জনসাধারণের মধ্যে সাড়া ফেলেছিল, তবে কিছু জায়গায় দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। যাইহোক, এটি আদবানিকে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে উন্নীত করে। বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, যদি আদবানিকে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে তারা ভিপি সিং সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করবে। গ্রেপ্তারের ঘটনাটি বিহারের সমস্তিপুরে ঘটেছিল ৯১৯০ সালের ২২ অক্টোবর। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদের সরকার রাতে আদবানিকে গ্রেপ্তার করে এবং তাঁকে দুমকার (বর্তমানে যা ঝাড়খণ্ডে) একটি গেস্ট হাউসে নিয়ে যায়। এরপরই বিজেপি ভি পি সিং সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়, ফলে ওই সরকারের পতন ঘটে।
সারা দেশে আদবানির রথযাত্রা চর্চায় আসে। এর কয়েক মাস পর, আদবানি অযোধ্যায় কর সেবা করতে প্রবেশ করেন উত্তরপ্রদেশে। যা শেষপর্যন্ত ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসে পরিণত হয়।
১৯৮৪ সালে দু'টি সংসদীয় আসন থেকে বিজেপিকে ১৫ বছরে সরকার গঠন করার জন্য প্রায়শই আদবানিকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি বাজপেয়ীর অধীনে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদে উন্নীত হন এবং ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের পরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন।
আদবানিকে ঘিরে বিতর্ক
আদবানি নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। ১৯৯১ সালে কাশ্মীরে জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের ফলে হাওয়ালা দালালদের উপর অভিযান চালানো হয়েছিল যা আদবানি সহ জাতীয় নেতাদের একটি বড় আকারের অর্থপ্রদানের সিরিজ প্রকাশ করে। যদিও পরে প্রমাণের অভাবে মামলাটি নিষ্পত্তি করে সুপ্রিম কোর্ট।
২০০৫ সালে পাকিস্তান সফরের সময়, আদবানি মহম্মদ আলী জিন্নাকে ধর্মনিরপেক্ষ নেতা হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। যা বিজেপি এবং সংঘ উভয়কেই হতবাক করেছিল। পাক সফর সেরে ফিরে আসার পর তিনি বিজেপি সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপি প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে নরেন্দ্র মোদীকে অভিষিক্ত করার পর, আদবানি সংবাদের কেন্দ্রে ছিলেন। তারপরই তিনি সমস্ত দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।