দল থেকে সাময়িক বরখাস্তের পরেই বিস্ফোরক জয়প্রকাশ মজুমদার। দলেরই রাজ্য নেতৃত্বকে তুলোধনা করে সোচ্চার বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। দলের বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি চূড়ান্ত অনাস্থা জ্ঞাপন করে তাঁদের রাজনৈতিক জ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন পোড়খাওয়া এই রাজনীতিবিদ। সুকান্ত মজুমদার ও অমিতাভ চক্রবর্তীর কড়া সমালোচনায় জয়প্রকাশ মজুমদার। জয়প্রকাশের পাশাপাশি দলের রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব বরখাস্ত আর এক নেতা রীতেশ তিওয়ারিও।
একুশের বিধানসভা ভোটে কর্মীদের মনে আশা জাগিয়েও তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। বাংলা দখলের লক্ষ্য অধরাই থেকে গিয়েছে মোদী-শাহ-নাড্ডাদের। এদিকে, একুশের ভোটের বিপর্যয়ের কয়েক মাস পরেই পদ যায় দিলীপ ঘোষের। সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদার, রীতেশ তিওয়ারি-সহ বেশ কয়েকজনকে। কয়েক বছর হল রাজনীতির আঙিনায় পা দেওয়া বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের কাঁধে ভর করেই বাংলায় এগোচ্ছে গেরুয়া শিবির। বর্তমানে সুকান্ত মজুমদার ও দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বেই চলছে রাজ্য বিজেপি।
তবে তাঁদের নেতৃত্বে বিন্দুমাত্র খুশি নন জয়প্রকাশ, রীতেশ তিওয়ারিরা। গতকাল বরখাস্তের পর আজ রীতিমতো সরব তাঁরা। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে শুরু থেকেই জয়প্রকাশ মজুমদার নিশানা করতে থাকেন দলের রাজ্য নেতৃত্বকে। তিনি বলেন, ''একুশের ভোটে হারের পর পর্যালোচনা বৈঠকই করেনি বিজেপি। বিধানসভা ভোটে কেন এমন ফলাফল হল, তা নিয়ে পর্যালোচনা হয়নি। কীভাবে ভুল-ত্রুটি শুধরে নেব, তা নিয়েও কোনও আলোচনা হয়নি।''
সুকান্ত মজুমদারকে নিশানা করে জয়প্রকাশের তোপ, ''বর্তমান রাজ্য সভাপতি মাত্র আড়াই বছর রাজনীতি করেছেন। দলের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদকের মাত্র ২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দিলীপ ঘোষের সভাপতি পদে থাকার মেয়াদ আরও এক বছর ছিল। এক বছরের জন্য নতুন সভাপতি করা হল। রাজ্য বিজেপি নাকি চালাচ্ছে এবিভিপি। ৪২টির মধ্যে ৩২টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিকে জেলার লোক চেনেই না। সর্বভারতীয় সভাপতি বলে যাওয়ার পরেও কোনও জেলা কমিটি হয়নি।''
একুশের ভোটে বিজেপির ভালো ফল করার একটা আশা ছিল বলে উল্লেখ করে এদিন তিনি আরও বলেন, ''বাংলায় বিজেপি আসতে চলেছে ভেবে অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তবে বিজেপির এই উত্থান কয়েকজন নেতা মেনে নিতে পারেননি। তখনই বাইরে থেকে বঙ্গে বিজেপিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। যাঁরা বিজেপিকে একসময় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের অগ্রাহ্য করা শুরু হয়। বিজেপির সেই চেষ্টাকেই অন্য দলগুলি বহিরাগত বলে আক্রমণ শুরু করে।''
আরও পড়ুন- ‘মাননীয়া কূশলী নেত্রী’, তৃণমূলের ‘বহিরাগত’ তত্বে সিলমোহর দিয়ে মমতার প্রশংসায় ‘বরখাস্ত’ জয়প্রকাশ
নেতৃত্ব নির্বাচনে ভুলের 'মাশুল' দিচ্ছেন বাংলার বিজেপি কর্মীরা, এদিন এই ইঙ্গিত দিয়ে জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ''বাংলায় বিজেপি কর্মীরা ভালো নেই। কোণে গিয়ে বাংলার বিজেপি কর্মীরা বসে আছেন। তাঁদের উৎসাহ দেবে কে? কর্মীদের কষ্ট প্রকাশ করলেই দলবিরোধী? তৃণমূলকে ভয় না পেলে নেতৃত্বকেও নয়। বাংলায় স্কুল-কলেজ খোলার দাবি উঠছে। কোনও আন্দোলন নেই। নেতারা বলছেন আমরা এবিবিপি করে এসেছি। অনভিজ্ঞ লোককে সংগঠনে আনা হয়েছে। এটা বড় ভুল। চাদর ঢাকা দিয়ে রোগ সারানো সম্ভব নয়। আমার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। বলা হল শৃঙ্খলাভঙ্গের জবাব দাও।''
জয়প্রকাশ মজুমদারের পাশাপাশি এদিন দলীয় নেতৃত্বকে দুষে সোচ্চার আর এক বরখাস্ত হওয়া বিজেপি নেতা রীতেশ তিওয়ারিও। তিনি এদিন বলেন, ''যা অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুল। ২২ জানুয়ারি সংবাদমাধ্যম জানল, ২৩ জানুয়ারি বরখাস্ত হওয়ার খবর পেলাম। শোকজের চিঠির মধ্যে কোনও সময়সীমা নেই। আমরাই বোধ হয় প্রথম রাজনৈতিক কর্মী যাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হল। যাঁরা চিঠি লিখতে পারেন না তাঁদের কাছ থেকে সার্টিফিকেটের দরকার নেই।''