সোমবার বিজেপি সভাপতি পদে দায়িত্ব নিলেন জে পি নাড্ডা।
অমিত শাহ নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদীর পছন্দ হিসাবেই বিজেপির মসনদে জে পি নাড্ডা।
Advertisment
সোমবারই আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন নাড্ডা। সেখানেই হাসিমুখে নাড্ডা ও শাহকে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে। গত ৬ মাস ধরে দলে অমিত শাহের ডেপুটি হিসাবেই কাজ করেছেন নাড্ডা। পৃথক ভরকেন্দ্রের বদলে দলের সভাপতির দেখানো পথেই দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এতেই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে জগৎ প্রকাশের মাথায় রয়েছে অমিতের আশীর্বাদ।
কিন্তু, দলের অন্দরে কান পাতলেই ভেস আসছে অন্য কথা। শাহ নয়, বিজেপি সভাপতি হিসাবে নাড্ডার নির্বাচনের পিছনে রয়েছে মোদীর সম্মতি। ছাত্র রাজনীতি থেকে দলের প্রয়োজনে যেকোনও দায়িত্বই তিনি পালন করেছেন অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে। ক্ষমতা লোভী নন, উল্টে আনুগত্য প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে সংগঠনের কাজ সামলেছেন হাসিমুখে। 'কিং মেকার' হিসাবেও নাড্ডার খ্যাতি রয়েছে দলে। অন্যদিকে আরএসএসের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে জগৎ প্রকাশের। তাই পদ্মের পাপড়ি মেলতে মিতভাষী এই মানুষইটিকেই বেছে নেন বিজেপির 'পোস্টার বয়' মোদী।
Advertisment
শাহের আমলে বিজেপির চূড়ান্ত বিকাশ হয়েছে। দল সাফল্যের মধ্য-গগনে। ১৯শের লোকসভাতে জয় হাসিল হলেও অবশ্য হরিয়ানা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডে পরাজয়ের মুখ দেখেছে গেরুয়া শিবির।। সামনেই দিল্লির ভোট। গতবার রাজধানীর ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ হয় বিজেপি। আগামী বছর ভোট বাংলা ও বিহারে। বিজেপির আগমীর পথ বেশ কন্টকাকীর্ণ। এই অবস্থায় সংগঠন পরিচালনায় আগ্রাসী ব্যক্তিত্বের থেকেও প্রয়োজন দূরদর্শী, মিতভাষী মানুষের। অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরেও পৃথক শক্তির ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম নাড্ডার। তাই মোদীর স্বাভাবিক পছন্দ হিসাবে বিজেপি সভাপতি পদে জে পি নাড্ডাতেই সিলমোহর পড়ে বলে মনে করছেন দীনদয়াল উপাধ্যায় ভবনের নেতারা।
সংগঠন থেকে প্রশাসন, সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন নাড্ডা। ছবি: রেণুকা পুরী।
নাড্ডার দায়িত্ব গ্রহণের পরই ভাষণে তাঁকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছিলেন, 'আগামী দিনে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে বিজেপি, সেজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে', দলের নতুন সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে জে পি নাড্ডার অভিষেক মঞ্চে দাঁড়িয়ে একথাই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপরই নাড্ডার প্রশংসা করে মোদী বললেন, 'আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নাড্ডাজির নেতৃত্বে দলের আরও অগ্রগতি হবে।'
গত ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিজেপির কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন জে পি নাড্ডা। অমিত শাহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তার জায়গায় নতুন সভাপতি আনার কথা শুরু হয়। গত নির্বাচনে নাড্ডা রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির মহাজোটের বিরুদ্ধে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েও সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। তার ছকেই উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৬২টিতে জয়লাভ করে বিজেপি। এছাড়াও মোদি সরকারের প্রথম মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন নাড্ডা এবং বিজেপির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী শীর্ষ সংসদীয় বোর্ডের সদস্যও ছিলেন। প্রথম মোদি সরকারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।
পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন এবিভিপির ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি নাড্ডার। পরে হিমাচলে আইন পড়ার সময় ১৯৮৫ সালে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। ১৯৯১-৯৩ পর্যন্ত সংগঠনের সভাপতি হিসাবে কাজ করেন জেপি। পরে আরএসএসের যুব দলেরও নেতা হযেছিলেন তিনি। ৯৩তে হিমাচল প্রদেশ থেকে বিজেপি বিধায়ক নির্বাচিত হন। দলের পরিষদীয় নেতার পদ সামলান মিত ভাষী এই মানুষটা। ৯৮তে রাজ্যের ক্ষমতায় বিজেপি এলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী হন জে পি নাড্ডা। মুখ্যমন্ত্রী হন ধুমাল। এই বছরের ভোটেই হিমাচলে বিজেপির সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই থেকেই মোদী-নাড্ডা আলাপ। সেই আলাপের জেরেই মোদীর বিচারে দেশের শাসক দলের প্রধান হিসাবে ক্রমশ প্রথম সারিতে চলে আসেন জে পি নাড্ডা।