চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনের পর 'বাস্তবতা' বুঝে ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) শরণ নিয়েছিল তৃণমূল। পেশাদার সংস্থা আইপ্যাকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। দায়িত্ব হাতে নিয়েই তৃণমূলকে একাধিক বিষয়ে পাঠ দিয়েছে একদা মোদীর জয়ের অন্যতম কারিগর পিকে। পেশাদারি ভঙ্গিতে 'দিদিকে বলো'-সহ নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করেছে আইপ্যাক। আর এরপরই কালিয়াগঞ্জ, খড়্গপুর ও করিমপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে জয় পেল ঘাসফুল শিবির। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আপাতত প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে প্রশান্ত কিশোরের ভোট কৌশল। তবে আসল পরীক্ষা এখনও বাকি রয়েছে। সামনে রাজ্যের পুরভোট। তারপর ২০২১ সালে বিধানসভার মহারণেই আসল শক্তি যাচাই হবে।
খড়্গপুর, কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুরে তৃণমূল প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর নয়, আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে আইপ্যাক। সূত্রের খবর, এই তিন কেন্দ্রে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আইপ্যাকের বিশেষ মতামত মেনে চলেছে দল তৃণমূল। প্রতি কেন্দ্রেই আইপ্যাকের একাধিক কর্মীরা দিন-রাত এক করে কাজও করেছেন। উল্লেখ্য, এদিনের সবচেয়ে 'কঠিন জয়' এসেছে মালদার কালিয়াগঞ্জে। গত লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভায় প্রায় ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। অথচ তা ঢেকে দিয়ে এবার ২ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয় হাসিল করেছে তৃণমূল। আর এরপরই জয়ী তৃণমূল প্রার্থী তপনদেব সিংহ আইপ্যাক কর্মীদের ভূমিকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। জানা যাচ্ছে, প্রতি কেন্দ্রেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে জনসংযোগ করে সাধারণ ভোটারদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। কোনও ভুল বোঝাবুঝি হলে তা সমাধানেরও চেষ্টা করেছেন।
আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের চুক্তি হওয়ার পর জনসংযোগ বৃদ্ধির জন্য় নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাজ্য জুড়ে 'দিদিকে বলো' কর্মসূচি এরমধ্যে অন্যতম। সাধারণ মানুষ থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের সমস্যা জানানো থেকে নানা পরামর্শ দিতে শুরু করেছে 'দিদিকে বলো'-র মাধ্যমে। একইসঙ্গে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বকে গ্রাম ও শহরে কর্মী-সাধারণের বাড়িতে রাত্রি যাপনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন করে জনসংযোগ স্থাপন শুরু হয়। এমন নানা কর্মসূচির মাধ্য়মে লোকসভা নির্বাচনের হারানো জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূল। আর বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনের ফলাফল বলছে, একশোয় একশো পেয়ে সফল হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
প্রসঙ্গত, আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের চুক্তি নিয়ে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। এমনকী তৃণমূলের একাংশ এই চুক্তিকে ভাল মনে গ্রহণও করতে পারেনি। তবু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রশান্ত কিশোরের উপর ভরসা রেখেছেন। তিন বিধানসভার উপনির্বাচনে ঘাসফুল শিবিরের জয়ের একাধিক কারণের মধ্যে রাজনীতির কারবারিরা পিকের ভূমিকাও দেখছেন। অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য়, প্রথম রাউন্ডে আপাতত পিকে বাহিনী সমালোকদের মুখ বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু আসল খেলা এখনও বাকি রয়েছে। সবাই তাকিয়ে সেই শেষ ফলাফলের দিকেই।