জিতলে যাবতীয় কৃতিত্ব গান্ধী পরিবারের। হারলে, দায় প্রদেশ সভাপতির। কংগ্রেসের এই সংস্কৃতির বলি কি এবার মধ্যপ্রদেশের কমল নাথ? ইন্দিরা জমানায় সঞ্জয় গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা এই নেতা একসময় সর্বভারতীয় রাজনীতিতে পরিচিত ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর তৃতীয় ছেলে হিসেবে। ১৯৮০ সালে কানপুরের এই নেতাকে কার্যত মধ্যপ্রদেশে উড়িয়ে এনেছিলেন কংগ্রেস হাইকমান্ড। সেই সময়ে জরুরি অবস্থার কালো মেঘ কাটিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরেছিল কংগ্রেস। সেই থেকে কমলনাথ ছিন্দওয়াড়ায়। কিন্তু, আজও তিনি মধ্যপ্রদেশে বহিরাগত। হাইকমান্ডের ঘরের ছেলে, ওয়ার ক্রাইসিসে ম্যানেজার হিসেবে দারুণ। এই সবই আজও প্রদেশ রাজনীতিতে ৭৭ বছর বয়সি কমল নাথের পরিচয়। মোদ্দা কথা, তিনি 'জলের বাইরের মাছ'। এবারে মধ্য়প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কমল প্রতীক বা বিজেপির কাছে কংগ্রেস গোহারান হেরেছে। গত ২০ বছরে যা মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। মাত্র ৬৬ আসন পেয়েছে। আর, তারপরই কমল নাথের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ফের চরমে উঠেছে। যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে 'জয় জয় কমল নাথ' স্লোগান ভোট মিটতেই চলে গিয়েছে আঁস্তাকুড়ে।
২০১৮-য় হাইকমান্ড, মধ্যপ্রদেশের ঘরের ছেলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দাবি উড়িয়ে কমলনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল। ফলও পেয়েছিল হাতেনাতে। জ্যোতিরাদিত্য ২২ বিধায়ককে নিয়ে ২০২০ সালের মার্চে বিজেপিতে যোগ দেন। তাতে প্রদেশ কংগ্রেসে কমলনাথের কাঁটা সরলেও মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতায় আসে বিজেপি। এবারের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর তাই মুচকি হাসছেন জ্যোতিরাদিত্য ও তাঁর অনুগামীরা। গোয়ালিয়রের রাজার অনুগামীরা এখন বলছেন, গোয়ালিয়র-চম্বলে কংগ্রেসের দুর্গ তার মহারাজার সঙ্গেই কংগ্রেস ছেড়েছে। কমলনাথ নয় বারের সাংসদ। মধ্যপ্রদেশ সামলাতে তিনি ২০১৮ সালে তিনি প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ছিন্দোয়ারা ছেড়ে দেন ছেলে নকুল নাথকে।
রবিবারের ফল প্রকাশের পর মধ্যপ্রদেশের এক কংগ্রেস নেতা এখন বলছেন, 'সমীক্ষায় কংগ্রেসের বেশিরভাগ নেতাই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু, প্রার্থী তালিকা নিয়ে সমস্যা ছিল। মালওয়া অঞ্চল ছিল আক্ষরিক অর্থেই বিজেপির কাছে ওয়াকওভার। দল কমপক্ষে ২০-২৫টি আসন হারিয়েছে।' শুধু এই সমস্যাই নয়। ভোটের আগে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল। সেই ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, কমলনাথ তাঁর অনুগামীদের বলছেন, প্রার্থী সমস্যা নিয়ে দিগ্বিজয় সিং ও তাঁর ছেলে জয়বর্ধনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে। তাঁদের পোশাক ছিঁড়ে ফেলতে। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে দিগ্বিজয় এবং কমল নাথ যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে নিজেদের বলিউডি সিনেমা 'শোলে'-এর জয়-বীরু বলে দাবি করেন।
আরও পড়ুন- শুভেন্দুরা যাই বলুন, সাফল্যের চার সূত্রেই ‘হিন্দি হার্টল্যান্ড’-এ গেরুয়া ঝড়? বলছেন বিজেপি নেতারাই