হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেমন তোল্লাই দিচ্ছেন, তেমনই মুসলিমদের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দুই বিপদ সম্পর্কেই বাংলাবাসীকে সচেতন হতে হবে। বুধবার সিপিআইয়ের ডাকা সমাবেশে উপস্থিত হয়ে এ কথা বললেন কানহাইয়া কুমার।
সিপিআইয়ের ৯৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল রানি রাসমণি রোডে। সেখানে প্রায় সব পূর্ববর্তী সিপিআইয়ের প্রতিষ্ঠিত নেতারা নিজেদের বক্তব্যের মেয়াদ খাটো রেখেছিলেন। মঙ্গলবার দলের রাজ্য সম্পাদক দাবি করেছিলেন, কানহাইয়া কুমার-জিগনেশ মেভানিদের "অতিরিক্ত বক্তা" হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে কার্যকালে দেখা গেল, সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বক্তব্য রাখলেন কানহাইয়া কুমার, এবং সময়ের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে জিগনেশ। এমনকী জিগনেশকে সভামঞ্চে বক্তব্য রাখার জন্য আহ্বান করার সময়ে তাঁকে "দলিতদের সেরা সন্তান" বলেও উল্লেখ করলেন সিপিআইয়ের প্রবীণ নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত।
আরও পড়ুন: কলকাতায় কানহাইয়ার সভা, ডাক পেল না এসএফআই
কানহাইয়া এদিনের বক্তব্যে বিজেপি-র প্রস্তাবিত রথ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, এ রথ রামের নয়, নাথুরামের। তিনি মনে করিয়ে দেন, "দেশভাগের সময়ে ধর্মভিত্তিক দুই রাষ্ট্রের প্রবক্তা জিন্না এবং সাভারকর, কেউই ধর্মাচারী ছিলেন না।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে "মুসলিম সম্প্রদায়ের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করছেন", তাকে "বিপজ্জনক" আখ্যা দেন জেএনইউ-এর এই প্রাক্তন ছাত্র নেতা।
দেশের কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান দিয়ে কানহাইয়া কুমার ফড়ে পদ্ধতি নিকেশের ডাক দেন। মুকেশ আম্বানিকে ফড়ে হিসেবে চিহ্নিত করে কানহাইয়া বলেন, "এই মধ্যবর্তী লুঠেরারাই দেশের মানুষের সর্বনাশের কারণ, এঁদের পিঠেই হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।"
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ যে নিজে 'নাথ' সম্প্রদায়ভুক্ত, এবং এই নাথ মঠ যে নির্গুণ ব্রহ্মের পূজারী, সে কথা এদিনের ভাষণে ব্যাখ্যা করেন কানহাইয়া কুমার। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "নাথ সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সগুণ ব্রহ্মের রূপ রামচন্দ্রের মন্দির গড়ার জন্য বারবার কেন অযোধ্যায় জিগির তুলছেন আদিত্যনাথ?"
অন্যদিকে, জিগনেশ মেভানি সিপিআইয়ের মঞ্চ থেকে ডাক দিয়ে দিলেন মহাজোটের। যে জোটে তিনি বামেদের সঙ্গে দেখতে চান মমতাকেও। নিজের ভাষণে এই দলিত নেতা বলেন, গুজরাটের প্যাটেল সম্প্রদায় স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়ে চলেছে। নিজেদের রাজ্যে জমির মালিকানা থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোটার, সব হিসেবেই ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে তারা। সেই প্যাটেলদের সঙ্গে যদি দলিতরা জোট বাঁধতে পারেন, তাহলে মমতার সঙ্গে বামেরা জোট বাঁধবেন না কেন, এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিজেপি-র রথযাত্রা নিয়ে জিগনেশের বক্তব্য, "উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের সঙ্গে একই মঞ্চে থেকে গেরুয়া বাহিনীর নেতারা কবর থেকে তুলে এনে মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণ করার কথা বলেছেন। সেই গেরুয়া বাহিনীর একটিই অ্যাজেন্ডা - দাঙ্গা। ফলে আইনের শাসনের স্বার্থেই এই রথ না বের করতে দেওয়া উচিত।"
Dalit Leader @jigneshmevani80 joins @kanhaiyakumar in Azadi Slogan at Kolkata CPI Rally pic.twitter.com/jRaoJRbCEh
— IE Bangla (@ieBangla) December 26, 2018
জোটের প্রশ্নে "অহং ছেড়ে" সব পক্ষকে এগোনো উচিত বলে মত প্রকাশ করেন জিগনেশ। এদিন সিপিআইয়ের তরফে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নারায়ণন, রাজ্য নেতা সন্তোষ রাণা প্রমুখ।