ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) লিবারেশনের সমস্ত পদ ও দায়িত্ব ত্যাগ করলেন সিপিআই (এমএল)-এর পলিট ব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, পার্টির মহিলা শাখা অল ইন্ডিয়া প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সেক্রেটারি এবং পার্টির জার্নাল 'লিবারেশন'-এর সম্পাদক - কবিতা কৃষ্ণান। তিনি বলেছেন, এমন বেশ 'কিছু প্রশ্নের উত্তর চান', যা দলীয় পদে থেকে তাঁর পক্ষে 'চাওয়া সম্ভব নয়।'
কৃষ্ণান, একজন বিশিষ্ট মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণের নারীবাদী এবং নাগরিক স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী। তাঁর প্রশ্নগুলো, 'ফ্যাসিবাদ এবং ক্রমবর্ধমান সর্বগ্রাসীবাদ'-এর বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা সংক্রান্ত জোরালো এবং ধারাবাহিক লড়াই নিয়ে। পাশাপাশি, ভারতীয় কমিউনিস্টদের ব্যর্থতার সঙ্গেও সম্পর্কিত। চিন এবং স্ট্যালিনের ইউএসএসআর-এর মতো, 'সর্বগ্রাসী সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা'-র মত বিদ্রোহের পতাকা তুলে ধরার জন্য। একইসঙ্গে, চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সঙ্গেও সম্পর্কিত।
এই প্রসঙ্গে কৃষ্ণান বলেন, 'খুব সহজ এই প্রশ্নটি গণতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমার সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে আমরা যে কাজ করেছি, তা হল মুক্ত চিন্তা এবং জনগণের পক্ষে। বাস্তব হল যে সরকার গণতন্ত্রকে সম্মান করে না। রাষ্ট্র জনগণের সাংবিধানিক অধিকারকে সম্মান করে না। এটা পুলিশের নির্বিচারে গ্রেফতার-সহ নৃশংসতার মধ্যেই দেখা যায়।'
কৃষ্ণান আরও বলেন, 'আমরা এটা ক্রমশ দেখতে পাচ্ছি যে রাষ্ট্রের আগ্রাসন থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। এটা যদি আমরা একবার স্পষ্টভাবে স্বীকার করি, তবেই আমরা জনগণের অধিকার রক্ষা করতে পারব। এরকমই এমন কিছু আমি দীর্ঘদিন ধরে ভাবছি। ২০১৪ সাল থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কিন্তু, তার আগেও নাগরিকদের অধিকারকে সেভাবে সম্মান করা হয়নি।'
ছত্তিশগড়ের ভিলাইতে বেড়ে ওঠা কৃষ্ণান তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ)। ১৯৯৫ সালে তিনি জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়নের (জেএনইউএসইউ) সেক্রেটারি হন। অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (AISA)-এর সভাপতিও হয়েছিলেন।
১৯৯০-এর দশক থেকে, কৃষ্ণান বাম কর্মীদের একজন হিসেবে লিঙ্গ অধিকার নিয়ে সরব। দিল্লিতে ২০১২ সালের নির্ভয়া গণধর্ষণ-কাণ্ডের পর তিনি দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন। নারী অধিকার এবং নিরাপত্তার নিয়ে রীতিমতো সরব হন। ২০২০ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম বই 'ফিয়ারলেস ফ্রিডম', মহিলাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার আড়ালে মহিলাদের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি এবং দেশে পাবলিক স্পেস থেকে মহিলাদের অন্তর্ধান নিয়ে অভিযোগ তোলা শুরু করেন।
আরও পড়ুন- মোদী সরকারের স্বপ্ন পূরণ, আর্থিক বহরে ব্রিটেনকেও হারিয়ে দিল ভারত
কৃষ্ণান বলেন, '২০১৪ সাল থেকে আমরা সর্বগ্রাসীতা এবং মোদীর কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে একটি ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি। এটা এমন এক ধরনের রাষ্ট্র, যেখানে শুধুমাত্র নাগরিকদের কর্তব্যের ওপর জোর দেওয়া হয়। তাঁদের অধিকার বাতিল করা হয়।' কৃষ্ণান অভিযোগ করেন, 'একেবারে পুতিনের রাশিয়ার মতনই ভারতের গণতন্ত্রকে এখন কেবল মহান নেতার পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিরোধী-মুক্ত ভারত গঠনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।'
কৃষ্ণান বলেন, 'আর, এই সব কারণেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে আলোচনা জরুরি। রাশিয়ায় গণতন্ত্রের কোনও ধারণাই নেই। সেখানে কেবল একটি কথিত হিতৈষী রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু, তার নাগরিকের কাছে কোনও ক্ষমতা নেই। আমাদের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকাতে হবে- যেমন রাশিয়া এবং চিন। যেখানে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একক দলীয় সরকারের ধারণা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।'
কৃষ্ণান বলেন, 'আমরা ক্রমাগত চাই যে ভারতে অতি ডানপন্থী সমর্থকরা এই শাসনের বাস্তবতা স্বীকার করুক। মেনে নিক যে এই সরকার বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি সৃষ্টিকারী এবং বিভাজনকারী। আমরা পুরাণ নিয়ে নানা অভিযোগ করি। কিন্তু, স্ট্যালিন কী করেছিলেন, তা-ও আমাদের দেখতে হবে। চিনে কোনও নাগরিক স্বাধীনতা নেই। সেই সত্য আমাদের স্বীকার করতে হবে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে কী বোঝায়, তা আমাদের বিবেচনা করা প্রয়োজন। সাম্যবাদী আকাঙ্খার জন্য শুধু রাষ্ট্রীয় রাজনীতি এবং অর্থনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট?'
Read full story in English