তিনিই ঘোষণা করেছিলেন, আবার তিনিই ইউ-টার্ন নিলেন। কেরলে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ‘মেট্রো ম্যান’ ই শ্রীধরণ। দিন কয়েক আগে এই ঘোষণা করেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি কে সুরেন্দ্রণ। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটতেই সুর বদল তাঁর। শুক্রবার তিনি বলেছেন, ‘ফল ঘোষণার পর আলোচনার সাপেক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেরলে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন স্থির করবে।‘ আগের দাবির স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া করে তিনি বলেন, ‘বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা শ্রীধরণের মতো নেতা চান। এতে কোনও সন্দেহ নেই, কেরলে বিজেপি সরকার গড়বে। যার নেতৃত্বে থাকবেন শ্রীধরণের মতো ব্যক্তিত্ব।‘
তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য সভাপতির ভোলবদলে কেরল বিজেপির দেউলিয়া অবস্থা দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। কারণ বিরোধীরা ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করেছেন, কেরলে গেরুয়া শিবিরে নেতার এতই অভাব যে অশীতিপর একজনকে মুখ্যমন্ত্রী প্রজেক্ট করতে হচ্ছে। আর তাতেই খানিকটা রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন প্রকাশ্যে এই ঘোষণা। সুরেন্দ্রণকে কটাক্ষও করেছেণ শাহ-নাড্ডারা।
এদিকে, দিনকয়েক আগে জল্পনা সত্যি করেই কেরলে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ই শ্রীধরণকে তুলে ধরা হয়েছিল। গোটা দেশ তাঁকে চেনে মেট্রো ম্যান হিসেবে। অশীতিপর শ্রীধরণ গত মাসে পদ্ম শিবিরে নাম লেখান। বৃহস্পতিবার কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মেট্রো ম্যানের নাম ঘোষণা করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি কে সুরেন্দ্রন। ভোট প্রচারে রাজ্যব্যাপী বিজয় যাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন সুরেন্দ্রন। সেই প্রচারের ফাঁকে তিনি শ্রীধরণ প্রসঙ্গ তোলেন। আগামি কয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্যের সবক’টি বিধানসভা আসনের প্রার্থী ঘোষণা করবে বিজেপি। এদিন জানান ওই রাজ্য নেতা।
দিল্লি মেট্রোকে জনপ্রিয় গণপরিবহণ হিসেবে তুলে ধরে ইতিমধ্যে কেন্দ্র-রাজ্যের গুড বুকে নাম তুলেছেন ই শ্রীধরণ। গত সপ্তাহে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কেরলের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন লড়তে তিনি রাজি।‘ তবে কোন আসন থেকে তিনি প্রার্থী হবেন? এখনও স্থির করতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। যদিও মেট্রো ম্যানের দাবি, ‘আমি নিশ্চিত রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। তাই যেকোনও আসনে আমি প্রার্থী হতে রাজি। কারণ জানি আমি জিতবই। তবে মল্লপুরমের পোন্নানির কাছকাছি কোনও আসন হলে সেটা ভাল।‘
কোচি মেট্রোর অন্যতম স্থপতি শ্রীধরণ। তিনি বলেছেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে আমি বিশ্বাসী নই। তবে আমার বার্তা ভোটার পর্যন্ত পৌঁছে দেব।‘ এদিকে, ভারতীয় মেট্রোর খোলনলচে বদলে দেওয়া এই স্থপতি যে গেরুয়া শিবিরেই নাম লেখাবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পরের দিনই কেরালার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা বললেন মেট্রোম্যান ই শ্রীধরণ। রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী হতে চান বলে দাবি করেছিলেন প্রবীণ পদ্মবিভূষণ প্রাপক। দল চাইলে তিনি ভোট দাঁড়াতে চান, এবং মুখ্যমন্ত্রী হতেও তাঁর আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন শ্রীধরণ। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্যকে ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত করা এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি এও জানিয়েছেন, রাজ্যপাল হওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই। কারণ রাজ্যপালরা সেভাবে অবদান রাখতে পারেন না বলে মত তাঁর। রাজ্যপাল এমন একটা সাংবিধানিক পদ যাঁর কোনও ক্ষমতা নেই বলে দাবি শ্রীধরণের। প্রসঙ্গত, ২১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন শ্রীধরণ।
কেন বিজেপিতেই যোগ দিতে চান, তার উত্তরে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে শ্রীধরণ বলেছিলেন, “একমাত্র বিজেপিই রাজ্যের জন্য কিছু করতে পারবে।” একইসঙ্গে বাম জোট এলডিএফ এবং কংগ্রেস নেতৃত্বধীন ইউডিএফ জোটকে আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, “দুই পক্ষই নিজেদের স্বার্থে কাজ করে। মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা বড় বড় বিজ্ঞাপন দেন নিজেদের ছবি দিয়ে, যেন কত উন্নয়ন করছেন। কিন্তু বাস্তবের জমিতে ফল শূন্য।”
তাঁর মতে, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজের সমালোচনা করা, কেন্দ্রের বিরোধিতা করা একটা ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের জন্য যদি কোনও দল করতে পারে, সেটা বিজেপিই।”
উল্লেখ্য, ১৭ বছর ধরে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের মাথায় ছিলেন ভারতের অন্যতম গুণী এই ইঞ্জিনিয়ার। রাজধানী দিল্লিতে মেট্রো রেলের জনক বলা চলে তাঁকে। শ্রীধরণ ১৯৯৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ডিএমআরসির এমডি ছিলেন। পদ্মশ্রী এবং পরে পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করেছে কেন্দ্র। ভারতের পশ্চিম উপকূলে দূর্গম এলাকায় কোঙ্কন রেলওয়ের উন্নয়নে অনেক অবদান রয়েছে শ্রীধরণের।