দ্বিতীয় বিজয়ন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি কে কে শৈলজার। যা ঘিরে বিতর্ক চরমে পৌঁছেছিল। এবার দফতর বন্টনেও চমক দিলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর নিজের হাতেই রেখেছেন তিনি। যা অত্যন্ত কৌশলী সিদ্ধান্ত বলেই মনে করা হচ্ছে। এর আগের মেয়াদে সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ ঘিরে কেরালার বাম সরকারের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, দুর্নীতির ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছিল। আড়াআড়ি ভিভক্ত হয়ে যায় মুসলিম ও খ্রিষ্টানরা। সেই ক্ষোভ সামাল দিতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই কৌশলী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
এলডিএফ বা ইউডিএফ, কেরালায় এর আগে সংখ্যালধু উন্নয়ন দফতর মুখ্যমন্ত্রীর হাতে রাখার নজির নেই। মূলত সংখ্যালঘু কোনও মন্ত্রীকেই এই দফতরের ভার দেওয়া হত। এর আগে বিজয়ন মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বে ছিলেন কেটি জলিল। ম্র্দল প্রার্থী হিসাবে সিপিআইএম-র সমর্থনে মল্লপূরম থেকে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। তবে, স্কলারশিপ বন্টন ঘিরে বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়াও স্বজনপোষণ ও ক্ষমতা অপব্যবহারেরও অভিযোগ ছিল। ফলে ক্ষোভ ছড়ায় খ্রিষ্টানদের মধ্যে। তারা বঞ্চিত বলে দাবি করা হয়। কেরালায় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের একাংশ।
যদিও, ইভিএম-এ এর তেমন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে ভোটে অনায়াসে জয় হাসিল করেছে এলডিএফ। মুখরক্ষা হয়েছে বামেদের। দেশের একমাত্র বাম শাসিত রাজ্য আপাতত কেরালাই। কেন ক্ষোভের আগুন ইভিএমে লক্ষ করা যায়নি? এবার ভোটে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ান মুসলিম লীগের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। ক্ষমতায় এলে এই দলের জয়ী প্রার্থীকেই সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বে আনা হবে বলে কার্যত স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। যা ভালোভাবে নেয়নি খ্রিষ্টানরা। কারণ, ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের ইউডিএফ সরকারের সময় ইন্ডিয়ান ইউনিয়ান মুসলিম লীগের মাল্লাঝামুকজী আলি ছিলেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বে। সেই সময়ও খ্রিষ্টানদের তরফে বঞ্চনার অভিযোগ উঠেছিল। ফলে ক্ষোভ সত্ত্বেও খ্রিষ্টান ভোটের বেশিরভাগটাই যায় বামেদের ঝুলিতে। আর তাতেই বাজিমাত করেন পিনারাই বিজয়ন।
পুনরায় ক্ষমতার আসার পরই খ্রিষ্টান গোষ্ঠীগুলোর তরফে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। জানানো হয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর যেন বিজয়ন নিজেই দেখভাল করেন। বিতর্ক এড়াতে খ্রিষ্টানদের সেই দাবিতেই সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সংখ্যালঘুদের ক্ষোভ প্রশমনের সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন কৌশলে বিরোধী বিজেপিরও সমালোচনার মুখ বন্ধে সক্ষম হবেন বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বিজেপি ভোটের আগে থেকেই এই ইস্যুতে সরব ছিল। বঞ্চনার ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে খ্রিষ্টানদের সমর্থন আদায়ের আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল গেরুয়া শিবির। যদিও ভোটবাক্সে তার প্রভাব চোখে পড়েনি।
২০০৮ সালে এলডিএফ সরকারের আমলেই সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর গঠন করা হয়। এই দফতর বর্তমানে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের ৮টি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। ৮০:২০ অনুপাতে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে এই স্কলারশিপ ভাগ করা হয়ে থাকে। খ্রিষ্টানদের দাবি, জনসমখ্যার অনুপাতে এই স্কলারশিপ বন্টন করা হোক। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে কেরালায় ২৬ শতাংশ মুসলিম ও ১৮ শতাংশ খ্রিষ্টান রয়েছেন। খ্রিষ্টানদের অভিযোগ, স্কলারশিপ থেকে সংরক্ষিত চাকরির অধিকাংশটাই পাচ্ছেন মুসলিমরা। বঞ্চিত হচ্ছেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা। বিজয়নের হাতে এবার সংখ্য়ালঘু দফতর থাকায় এবার কী খ্রিষ্টানদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার ক্ষতে প্রলেপ পরবে? সেদিকেই এখন নজর।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন