সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে আসন ভাগাভাগি নিয়ে ফের জোটে জট। এবার প্রশ্নের মুখে রাহুল গান্ধীর সংসদীয় এলাকা ওয়ানাড। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই), কেরলে ক্ষমতাসীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের দ্বিতীয় বৃহত্তম জোটের অংশীদার। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে চারটি আসনের জন্য তার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। প্রার্থীদের মধ্যে, দলের সিনিয়র নেতা অ্যানি রাজা ওয়ানাড লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
বর্তমানে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সংসদীয় এলাকা ওয়ানাড। এতেই যাবতীয় বিপত্তি দানা বেঁধেছে। সিপিআই প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাহুলের লড়াই সাধারণ মানুষের মনে বিরুপ প্রভাব ফেলবে না তো? প্রশ্ন তুলেছে বাম নেতৃত্ব। ২০০৪ রাহুল গান্ধী লোকসভা নির্বাচনে আমেঠি থেকে লড়াই করলেও বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে তিনি ২০১৯-এ লোকসভা ভোটে পরাজিত হন তিনি। পাশাপাশি রাহুল গান্ধী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওয়েনাড থেকে জিতেছিলেন। এটি ছিল গান্ধীর দ্বিতীয় আসন যেখান থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবার আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধীর ওয়ানাড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।
বৃন্দা কারাত কংগ্রেসকে এই বিষয়ে বিবেচনার অনুরোধও জানিয়েছেন। প্রাক্তন দলীয় প্রধান এই আসন থেকে ফের একবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষকে কী বার্তা দেবে। ওয়ানাড থেকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) অ্যানি রাজার প্রার্থিপদ ফের একবার বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কাছে এখন এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন তিনি জোট সঙ্গীর বিরুদ্ধেই কি নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন? নাকি আসলে তাঁর লড়াইটা বিজেপির সঙ্গে?
সিপিআই(এম) পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাত এই "বার্তা" নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, 'ওয়ানাডে এই ধরনের একটি প্রতিযোগিতা মানুষের কাছে এক নেতিবাচক বার্তা দেবে। যখন সমস্ত বিরোধী দল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপি-বিরোধী প্রচারে কাজ করছে'।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা শশী থারুর এই প্রশ্নে বল বামেদের কোর্টে ছুঁড়ে প্রশ্ন তোলেন, 'কেন বামরা কেরলের এমন কিছু আসনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে যেখানে বিজেপি শক্তিশালী'। থারুর বলেন, "উদাহরণস্বরূপ, আমার নিজের নির্বাচনী এলাকায়, বিজেপি গত দুটি নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। তবুও বিজেপি বিরোধী ভোটের একটি বড় অংশ যায় তৃতীয় স্থানে থাকা কমিউনিস্ট প্রার্থী। যদি তিরুবনন্তপুরমে আমার বিরোধিতা করা বামেদের পক্ষে ঠিক হয়, তাহলে রাহুল গান্ধী কেন ওয়ানাডে তাদের বিরোধিতা করতে পারবেন না?
তিনি আরও বলেছেন, “কেরলে বামপন্থীরা আমাদের সঙ্গে কোনভাবেই সহযোগিতার মনোভাব দেখাচ্ছে না। যখন তামিলনাড়ুতে সিপিআই(এম), সিপিআই, মুসলিম লীগ, কংগ্রেস এবং ডিএমকে সকলেই আন্তরিকভাবে জোটের সঙ্গে রয়েছে'।
ভারতের অন্যান্য দলগুলো এ বিষয়ে অনেকাংশেই নীরব। অন্তত পাঁচটি ভারতীয় দলের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। মিসেস রাজা, কংগ্রেসকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থেকে বলেন, “কোথা থেকে কাকে প্রার্থী করতে চায় তা কংগ্রেসেরই সিদ্ধান্ত। স্বাধীন দল হিসেবে আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই প্রথমবার নয় যে রাহুল গান্ধী সিপিআই প্রার্থীর মুখোমুখি হবেন, তিনি ২০১৯ সালেও একই কাজ করেছিলেন। এটি বিজেপির বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া ব্লকের প্রচারে বিরূপ প্রভাব ফেলছে কিনা, তার উত্তর কংগ্রেসের, আমাদের নয়।"
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যানি রাজা বলেছেন, “কেরল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস বা রাহুল গান্ধীর লাভ কী? … কংগ্রেসের নেতৃত্বের জন্য নিরাপদ অনেক বিকল্প রয়েছে। তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক …।"
কংগ্রেস বুধবার ঘোষণা করেছে যে ইউডিএফ জোটের অংশ হিসাবে কেরাল থেকে ১৬ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দল। যদিও এখনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি কংগ্রেস। কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য বলেছে যে তারা চায় রাহুল আবার ওয়ানাড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। ২০১৯ সালে, এই একটাই আসন কংগ্রেসীদের মুখ রক্ষা করেছিল। যেহেতু রাহুল গান্ধী উত্তরপ্রদেশের আমেঠি থেকে বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে যান।