বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জাল নোটচক্রে ধৃতদের সঙ্গে জেলা তৃণমূল নেতাদের ছবি ভাইরাল হতেই রাজনৈতিক মহল তোলপাড়। রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে ঘাসফুল শিবির। এর আগে খাগড়াগড়ে জেমবি জঙ্গিদের ঘাঁটি ধরা পড়েছিল। তখন সেই বাড়িতে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় থাকা নিয়ে বিতর্ক দানা বেধেছিল। এবার নোটচক্রের মূল পান্ডার সঙ্গে ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল শুরু হয়েছে। আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপিও।
গত বৃহস্পতিবার খাগড়াগড়ের পূর্ব মাঠপাড়ার একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয় নকল নোট, নোট ছাপার মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম। এই বেআইনি কারবারের সঙ্গে যুক্ত ৩জনকে গ্রেফতার করে বর্ধমান থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে গোপাল সিং এবং বিপুল সরকার বর্ধমান শহরের বাসিন্দা। তৃতীয় অভিযুক্ত দীপঙ্কর চক্রবর্তী দক্ষিণ ২৪পরগনার বাসিন্দা। ধৃতদের কাছ থেকে ১২হাজার ৫০০টাকা জাল নোট এবং নোট তৈরীর ডাইস ও পাউডার, কেমিক্যাল-সহ নানা সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। ধৃতদের শুক্রবার বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। তিনজনকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত দেয় আদালত।
পুলিশ জানিয়েছে, ৪-৫ মাস আগে খাগড়াগড়ের পূর্ব পাড়ায় সিরাজুল ইসলামের বাড়ি ভাড়া নেয় গোপাল সিং। তার স্ত্রী, শাশুড়ি ও একজন পরিচারিকা সেখানে থাকতো। নিজেকে পরিচয় দিয়েছিল মানবাধিকার কর্মী বলে। তবে ফের খাগড়াগড় কাণ্ডের পর এই ধরনের ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয়রা। এরইমধ্যে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ছবি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়েছে।
প্রকাশ্যে আসা ছবিতে দেখা যাচ্ছে বর্ধমান শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে একটি খো খো খেলার মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে জাল নোট তৈরি কাণ্ডের পান্ডা গোপাল সিং। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস, তৃণমূল নেতা আইনুল হক ও প্রাক্তন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের যুবসভাপতি তথা বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলর রাসবিহারী হালদারের পাশে আছে ধৃত গোপাল সিং।
বিজেপি নেতৃত্ব ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তোপ দেগেছেন। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, 'আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আছে। এখন সেটাই সত্যি হল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডেও তৃণমূলের যোগ পাওয়া গিয়েছিল।' তাঁর দাবি, 'তৃণমূলের মদতেই জালনোট তৈরির কারখানা চলছিল তা প্রমাণ হল।'
এদিকে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, 'ছবিটা অনেক দিন আগেকার ছবি। সেখানে একটা অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ করেছিল। মঞ্চে নেতৃত্ব ছিল। পিছনে কে দাঁড়িয়েছিল তা নেতৃত্বের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলার প্রবণতা থাকে। তিনি খোখো খেলা আয়োজক কমিটির সদস্য কীনা জানা যায়নি। সুতরাং ছবি দেখা যেতেই পারে। সে অন্যায় করেছে। তাঁর উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। ছবি নিয়ে প্রচার করা ঠিক নয়।' পাশাপাশি প্রসেনজিৎ দাসের বক্তব্য, 'মিথ্যা অভিযোগ করাই বিজেপির কাজ। পুলিশ তদন্ত করছে। সব সত্যি বের হবে।'