তখন বেলা আড়াইটে। দিল্লির মন্দির মার্গ এলাকার কালীবাড়ি গেস্ট হাউস থেকে গেরুয়া এবং সাদা কুর্তা পরিহিত যুবক বেরিয়ে আসছেন একে একে, গন্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। কারা এঁরা? উত্তরে গেস্ট হাউসের মালিক সন্তোষ কুমার জানালেন, "আরএসএস এবং বিজেপির কর্মী।" উল্লেখ্য, এই কালীবাড়ি গেস্ট হাউসে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা ৩২জন বিজেপি কর্মীর পরিবার, গত দু বছরে যাঁদের পরিবারের প্রধানরা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে প্রাণ খুইয়েছেন বলে অভিযোগ।
প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা উত্তর ২৪ পরগণার কৃষক সাধা মিধা (৪৭) ছেঁড়া জামাকাপড় পরে গেস্ট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়ি খেতে খেতে বলেন, "আমার বড় ভাই হারাধন মিধা বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে (তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রর কাছে পরাজিত কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী) কল্যান চৌবের হয়ে প্রচারও করেছিলেন। ২০ মে নয়জনের একটি দল বাড়িতে এসে ওর উপর চড়াও হয়ে মারধর করে। তারপর একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে যায়।" বলতে বলতে চোখ জলে ভরে ওঠে তাঁর। "দিল্লিতে মোদীজি নিয়ে এসেছেন, তাই এসেছি। ওঁকে একবার চোখের দেখা না দেখে আমি যাচ্ছি না। তবে বড্ড গরম, আর সহ্য করা যাচ্ছে না।" তারপর মিধা তাঁর ভাইপোর দিকে তাকিয়ে বলেন, "বেকার হয়ে বসে আছে, কে আমাদের দায়িত্ব নেবে এখন বলুন?"
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় মোদী সরকারে কোন মন্ত্রী কোন দফতরে? দেখুন পূর্ণাঙ্গ তালিকা
তাঁর পাশেই গেরুয়া কুর্তা এবং নীল জিনস পরে দাঁড়িয়ে কোচবিহারের সুকুমার মন্ডল। বছর তিরিশের এই স্নাতক কোচবিহার জেলায় দর্শন পড়ান কলেজ পড়ুয়াদের। মৃত দাদার ছেলে সঞ্জয় মণ্ডলের (২০) সঙ্গে শপথগ্রহণে এসেছেন তিনি। "২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মোদীজি কোচবিহারে জনসভা করেছিলেন। সেখান থেকে ফেরার সময় কিছু তৃণমূলকর্মী আমাদের বাসের পেছনে তাড়া করে। সেসময়ই আমার ভাই প্রভাত মণ্ডল বাস থেকে পড়ে মারা যায়," বলেন সুকুমার। "তবে ভাইয়ের মৃত্যুর পর বিজেপির হয়ে কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বাড়িতে এসে চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে যান। তবে আমরা খুব গরীব, কীভাবে চালাব জানি না। যদি পার্টির তরফ থেকে সঞ্জয়ের একটা চাকরি হয়।"
কথায় কথায় বেলা তিনটে গড়াতেই বাংলা থেকে যাওয়া বিজেপির কর্মীদের একটি বাসে করে নিয়ে যাওয়া হলো বিজেপির সদর দপ্তরে। ২০ বছরের ছেলেকে পাশে নিয়ে ঝাঁ চকচকে অফিসঘরের মেঝেতে বসেই উৎকণ্ঠার সুরে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের ঝর্না প্রান্তি বলেন, "আমার স্বামী (খেতমজুর জয়দেব প্রান্তি) একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন আমাদের সংসারে, ভোটের সময় তৃণমূলের লোকেরা ওকে খুন করে। আমার একটা দশ বছরের মেয়েও আছে। কীভাবে সংসার চালাবো জানি না। আমি চাই নরেন্দ্র মোদীজি আমার স্বামীর খুনিদের ফাঁসি দিক।"
পাশে বসা দাড়িভিট গ্রামের মঞ্জু বর্মন (৩৭) এবং ঝর্ণা সরকার (৩৮) এখনও পুত্রশোকে বিহ্বল। ২০১৮ সালে দাড়িভিট হাইস্কুলে হিংসার ঘটনায় হারিয়েছেন ছেলেদের। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মঞ্জু বলেন, "আমার ছেলে তাপস প্রতিবাদ করছিল। তখনই মমতার পুলিশ ওদের গুলি করে মেরেছে। আমরা চাই সিবিআই এর তদন্ত করুক, এবং স্কুলের সামনে ওদের দুজনের মূর্তি বসুক।" দুজনের স্বামীই গত বছর দশ দিনের সফরে দিল্লি আসেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করতে। ঝর্নার স্বামী নীলকমল সরকার বলেন, "রাষ্ট্রপতিকে আমি বলেছিলাম কীভাবে পুলিশ আমার ২১ বছরের ছেলে রাজেশকে মেরেছে। উনি বলেছিলেন বিস্তারিত তদন্ত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু করেন নি উনি।"
মঞ্জু যোগ করেন, "বিজেপি নেতারা আমাদের বলেছিলেন যে যদি ওঁরা জেতেন, তাহলে তদন্ত শুরু করবেন। দেবশ্রী চৌধুরী (তৃণমূলের কানহাইয়ালাল আগরওয়াল কে হারিয়ে) জেতার পর এবার ওঁদের কথা রাখতে হবে।
Read the full story in English