রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ছিলেন। ছিলেন 'চাণক্য' মুকুল রায়, পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। কিন্তু সেলফি-চাহিদায় তাঁদের সবাইকেই টেক্কা দিলেন ব্যারাকপুর কেন্দ্রের সদ্য নির্বাচিত সাংসদ অর্জুন সিং এবং বীরভূম কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার থেকে বিজেপি-র লালবাজার অভিযান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মিছিল শুরু হয় বেলা দেড়টা নাগাদ। সাড়ে ১২টা থেকে জমায়েত হতে থাকেন কর্মী-সমর্থকেরা। অনুগামীদের নিয়ে দুধকুমার আসতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন বিজেপি কর্মীরা। একের পর এক সেলফি'র আবদার মেটাতে থাকেন বীরভূমের প্রাক্তন জেলা সভাপতি। এক সময় কার্যত 'মবড' হয়ে যান দুধকুমার। স্লোগান ওঠে - "তৃণমূলের যম দুধকুমার মণ্ডল জিন্দাবাদ।" দুধকুমার অবশ্য নিজেই ওই স্লোগান দিতে নিষেধ করেন সমর্থকদের। এরপরও কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অসংখ্যবার সেলফির আবদার মেটাতে দেখা যায় দুধকুমারকে।
বিজেপি-র পক্ষে রাজ্যজোড়া ঢেউ থাকলেও নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন। তারপরও এহেন জনপ্রিয়তার কারণ কী? দুধকুমার বলেন, "আমি দলের সামান্য কর্মী। দল যা দায়িত্ব দেয়, তা পালন করার চেষ্টা করি। বীরভূম কঠিন মাটি। সেখানে জিততে পারি নি ঠিকই, কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করেছি। এখনও করছি। তাই হয়তো সহযোদ্ধারা ভালবাসেন।"
তবে সেলফি-চাহিদায় দুধকুমারকেও এদিন টেক্কা দিয়েছেন অর্জুন। ব্যারাকপুরের সাংসদ এদিন বেলা একটা নাগাদ দেহরক্ষী পরিবৃত হয়ে সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যারের সামনে আসতেই তাঁকে ঘিরে বিজেপি সমর্থকদের আগ্রহ তুঙ্গে ওঠে। অর্জুনের নামে স্লোগান দিতে থাকেন গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা। তৃণমূলকে সর্বত্র "ভাটপাড়া দাওয়াই" দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। একের পর এক সেলফির আবদারে কিঞ্চিত বিরক্ত অর্জুন দেহরক্ষীকে বলেন, ভিড় সরিয়ে দিতে। কিন্তু তাতে লাভ হয় নি।
মিছিলের শেষপর্বে যখন পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছে বিজেপি-র, তখনও আগ্রহের কেন্দ্রে অর্জুন। বেলা দু-টো নাগাদ সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ মোড় অবরোধ শুরু করে বিজেপি। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে থাকেন দিলীপ, কৈলাশেরা। সেখানে যত জমায়েত, তার চেয়ে বেশি লোক কয়েকশো গজ দূরে অনুগামী ও দেহরক্ষীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অর্জুনকে ঘিরে। ব্যারাকপুরের সাংসদের কথায়, "মানুষ আমাকে ভালবাসেন কিনা তা তো ভোটের ফলেই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু যাঁরা আমার সঙ্গে সেলফি তুলছেন, তাঁদের বুঝতে হবে আসল কাজ রাজ্যের সরকার থেকে তৃণমূলকে সরানো। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার মতো অনেককে অপমান করেছেন। ওঁর জীবন নরক করে দেব। লড়াই চলবে।"
বড় নেতারা ছিলেন ঠিকই, কিন্তু লালবাজার অভিযানে সেলফি-চুম্বক এই দুই নেতাই।