কলকাতা পুরসভা তৃণমূলের। তৃতীয়বারের জন্য ছোট লালবাড়ি দখলের লড়াইয়ে কলকাতার বেশ কিছু ওয়ার্ডে এবারও দলের পরবর্তী প্রজন্মের বেশ কয়েকজনকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। প্রত্যেকেই জিতেছেন। ভোটের ফলই বলছে জোড়ফুলের শীর্ষ নেতৃত্বের সেই সিদ্ধান্তে কোনও ভুল ছিল না।
এবারের পুরভোটে রাজ্যের তিন মন্ত্রী শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, জাভেদ খানের সন্তানদের প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। প্রার্থী হয়েছিলেন প্রয়াত বাম নেতা ক্ষিতি গোস্বামীর মেয়েও। শসাকদলের বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার ছেলেকেও প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। জোড়াফুলের টিকিট পেয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক ইকবাল আহমেদের মেয়ে। তৃণমূলের পরবর্তী প্রজন্মের প্রত্যেক তরুণ-তরুণীই এবারের ভোটে জয় পেয়েছেন।
কলকাতার শ্যামপুকুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। এবারের পুরভোটে শ্যামপুকুর কেন্দ্রের অন্তর্গত ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শশী পাঁজার মেয়ে পূজা পাঁজাকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। প্রথমবার ভোটে লড়েই সাফল্যের মুখ দেখেছেন মন্ত্রী-কন্যা। একইভাবে রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৮৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাজ্যের আর এক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ছেলে সৌরভকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। এই ওয়ার্ডটিতে গতবারের ভোটে জয়ী হয়েছিলেন প্রয়াত বিজেপি নেত্রী তিস্তা দাস। এই ওয়ার্ডটি দখলের চেষ্টা শুরু থেকেই ছিল শাসকদলের। শেষমেশ সৌরভকে প্রার্থী করে ওয়ার্ডটি গেরুয়া দলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল জোড়াফুল। অন্যদিকে, কসবার বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাভেদ খানের ছেলে ফৈয়াজ আহমেদ ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন।
কলকাতার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে এবারও প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদের ভাইঝি ও প্রাক্তন বিধায়ক ইকবাল আহমেদের কন্যা সানাকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। এই ওয়ার্ডেও জয় পেয়েছেন ইকবাল-কন্যা সানা। বিদায়ী পুরবোর্ডেও ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন এন্টালির তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার ছেলে সন্দীপন। এবার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দল তাঁকে প্রার্থী করেছিল। সেই ওয়ার্ডেও জয় পেয়েছেন সন্দীপন।
অন্যদিকে, প্রয়াত বাম নেতা ক্ষিতি গোস্বীমার কন্যা বসুন্ধরা গোস্বামীকে কলকাতার ৯৬ নং ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের সেই ভরসা রেখেছেন প্রয়াত প্রাক্তন আরএসপি নেতার কন্যা বসুন্ধরা। প্রথমবার ভোটে লড়েই জয় পেয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, কলকাতা পুরনিগমের মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ১৪৪। আজ ফল প্রকাশে দেখা গিযেছে, তৃণমূল পেয়েছে ১৩৪টি আসন। যা গতবারের থেকে ২০টি বেশি। এবার শতাংশের বিচারে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৭২ শতাংশ। যা আট মাস আগের বিধানসভা ভোটে কলকাতায় প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। ২০১৫ সালে কলকাতায় তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট। দেড় বছর পর পুরভোটে যা ২২ শতাংশ বেড়েছে। যে ১০টি ওয়ার্ডে বিরোধীরা জিতেছে, তার সব কটিতেই দ্বিতীয় স্থানে শাসক দলের প্রার্থীরা।
আরও পড়ুন- ঘাসফুলের দৌড় থমকে গেল ৪৫-এ, সন্তোষের শক্ত কাঁধে ভর রেখে গড় রক্ষা কংগ্রেসের
অন্যদিকে, এবার ভোট কমেছে বিজেপির। ২০১৫ সলের ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ৭টি আসন। পরে দুই বিজেপি কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে আসন সংখ্যা ছিল ৫টি। এবার সেই সংখ্যা আরও কমে হল ৩। প্রাপ্ত ভোট প্রায় ৯ শতাংশ। একুশের বিধানসভার নিরিখে কলকাতায় বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ২৯ শতংশ। যা এবার প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেল। ২০১৫-তে কলকাতা পুরসভা ভোটে শতাংশের বিচারে পদ্ম শিবিরের ভোট ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। তার থেকে প্রায় ৬ শতাংশ ভোট কমেছে এবার। ২০২১ কলকাতা পুরসভার ভোটে ৪৮ ওয়ার্ডে দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে বিজেপি। পুরভোটে শতাংশের বিচারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল সিপিআইএম।
বামেদের বড় শরিকের প্রাপ্ত ভোট শতাংশ প্রায় ৯.৭ শতাংশ। এবার বামেদের আসন সংখ্যা ২। ২০১৫ সালে কলকাতার ভোটে বামেরা পেয়েছিল ১৫ আসন এবং প্রাপ্ত ভোট ছিল ১১.৭ শতাংশ। বামফ্রন্ট সেই ভোট ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। পরিসংখ্যানের বিচারে, একুশের বিধানসভার তুলনায় কলকাতায় বামেদের ভোট বেড়়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। তবে ২০১৫ সালের নিরিখে তা কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। ১৪৪টির মধ্যে ৬৫টিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাম প্রার্থীরা। ২টি আসন পেয়ে কংগ্রেসের প্রাপ্ত বোটের হার সাড়ে ৪ শতাংশের সামান্য বেশি। ১৬টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয়স্থানে কংগ্রেস প্রার্থীরা।
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন