"অবাঙালি সমাজের লোকেরা প্রিয়জনের সম্পর্কে বলে থাকেন, 'ঘর কা ছোরো'। এখানকার মানুষ আমার সম্পর্কেও তাই বলেন। মেয়র হয়ে আমি জন্মাইনি। মেযর পদে যদি না-ও থাকি, এখানকার 'ঘর কা ছোরো' (ঘরের ছেলে) হয়ে থাকতে পারলেই আমি খুশি।"
বক্তা বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত, যাঁর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানের জল্পনায় বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে বঙ্গ রাজনীতি সরগরম। সেই জল্পনায় নতুন করে ইন্ধন জুগিয়েছে দোলের দিন বিধাননগরের সিএফ পার্কে সংস্কৃতি সংসদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সব্যসাচীর মন্তব্য।
আয়োজক সংগঠন সংস্কৃতি সংসদ বিধাননগরে মূলত অবাঙালিদের সংগঠন বলেই পরিচিত, যেখানে মাড়োয়ারি সমাজের নাগরিকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত সব্যসাচী বক্তব্য পেশ করতে উঠেই বলেন, "সঞ্চালক আমাকে চিফ গেস্ট বলছিলেন, বিধাননগরের মেয়র বলছিলেন, কিন্তু আমি আপনাদের 'ঘর কা ছোরো' হয়েই থাকতে চাই। তাতেই আমি খুশি, কারণ মেয়র হিসেবে আমি জন্মাইনি, 'মারো ঘর কা ছোরো হ্যায়' হয়ে থাকতে চাই শুধু।"
আরও পড়ুন: অর্জুন সিংয়ের পর মুকুলের লক্ষ্য কি সব্যসাচী?
এখানেই না থেমে সব্যসাচী বিতর্ক আরও এক প্রস্থ উসকে দিয়ে বক্তব্যের শেষে 'ভারতমাতা কি জয়' স্লোগান তোলেন। সঙ্গে সঙ্গেই শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে, গেরুয়া শিবিরের পথে কি আরও এক পা বাড়ালেন সব্যসাচী, যাঁর বাড়িতে সপ্তাহকয়েক আগে হঠাৎই 'সৌজন্য সফর'-এ এসে মুকুল রায় লুচি-আলুর দম খাওয়ার 'আবদার' করেছিলেন?
তৃণমূলের তরফে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, সব্যসাচীর 'ভারতমাতা কি জয়' স্লোগান এবং অন্যান্য বক্তব্য নিয়ে জবাবদিহি চাইবে দল। জ্যোতিপ্রিয় বলেছেন, "ভারতমাতা কি জয় তো কোনও খারাপ স্লোগান নয়। তবে ইদানিং বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদী এই স্লোগানটিকে হাইজ্যাক করে প্রায় দলীয় স্লোগানে পরিণত করেছেন। সব্যসাচী যা যা বলেছে ওই অনুষ্ঠানে, সে ব্যাপারে ওর থেকে ব্যাখ্যা চাইবে দল।"
জ্যোতিপ্রিয় যা-ই বলুন, ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে সব্যসাচীর দলত্যাগের জল্পনা। বিজেপি-র তরফে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮টি কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত আসনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে নেই বারাসাতের নাম, বিজেপি-তে যোগ দিলে যে কেন্দ্র থেকে সব্যসাচীর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
'ঘর কা ছোরো' সব্যসাচী কি রাজনৈতিক 'ঘর' ছাড়ার পথে?