/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/07/krishna-new-759.png)
কৃষ্ণা চক্রবর্তী।
সব্যসাচী দত্তের ইস্তফার পর বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র করা হচ্ছে কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে। বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারপার্সন পদে ছিলেন কৃষ্ণা। মেয়র পদ থেকে সব্যসাচী দত্তের ইস্তফার পরই বিধাননগরের মেয়র কে হবেন, তা নিয়ে রীতিমতো জল্পনা ছড়ায়। শেষপর্যন্ত আশির দশক থেকে মমতার সঙ্গী কৃষ্ণার নামই মেয়র হিসেবে চূড়ান্ত করা হল বলে সূত্রের খবর। দলের পুরনো সৈনিকদের উপরে আস্থা রাখতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কারণেই কৃষ্ণাকে মেয়র করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার এ নিয়ে নবান্নে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে, বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র পদে থাকছেন তাপস চট্টোপাধ্যায়ই। পুরনিগমের নয়া চেয়ারপার্সন করা হচ্ছে অনীতা মণ্ডলকে। আগামী ১০ অগাস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে বিধাননগরের মেয়র হিসেবে কৃষ্ণার নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানা যাচ্ছে।
বিধাননগরের মেয়র পদে কেন কৃষ্ণা চক্রবর্তী?
রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হল, দলের পুরনো নেতাদের ব্রাত্য করে রাখা। দলের পুরনো সৈনিকদের জায়গা না দেওয়ার ক্ষোভ তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়। সে কারণেই একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের পুরনো নেতাদের সামনে এনে দলকে আরও সংঘবদ্ধ করার কৌশল নিচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী। আর তাই বিধাননগরের মেয়র পদে বাছা হল কৃষ্ণাকে। উল্লেখ্য, পূর্বতন বিধাননগর পুরসভার মেয়র ছিলেন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। পরবর্তীকালে রাজারহাট-গোপালপুর পুরনিগম ভেঙে যখন বিধাননগর পুরনিগম করা হল। সে সময় মেয়র হিসেবে সব্যসাচী দত্তের নাম ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক সূত্রে খবর, সব্যসাচীর নাম মেয়র হিসেবে ঘোষণার সময় সেদিন কৃষ্ণার চোখে জল দেখা গিয়েছিল। অন্যদিকে, মুকুল ঘনিষ্ঠ সব্যসাচীকে দলে ধরে রাখতে বিধাননগরের মেয়র করার কৌশলী পদক্ষেপ করেছিল মমতার দল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই সব্যসাচীই দলের ‘কাঁটা’ হয়ে রইল। এদিকে, আশির দশক থেকে দলের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে কাজ করে আসছেন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। সব্যসাচীকে নিয়ে বিধাননগরে টালবাহানার সময়ও কৃষ্ণা প্রথমে মেয়র হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘মেয়র হওয়ার ইচ্ছে তাঁর নেই’’। কৃষ্ণা এও বলেছিলেন, ‘‘দল যাঁকে মেয়র করবে, তাঁকেই সকলে মেনে নেবেন’’।
আরও পড়ুন: শোভন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন, স্বীকার মুকুলের
অন্যদিকে, সব্যসাচীকে ঘিরে টানাপোড়েন পর্বের মধ্যেই বিধাননগর পুরনিগমের কয়েকজন কাউন্সিলর গেরুয়াবাহিনীর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। দলের সেই কাউন্সিলরদের ধরে রাখতেই চেয়ারপার্সন হিসেবে অনীতা মণ্ডলকে বাছা হল বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারীদের একাংশ। এদিকে, বিধাননগরের মেয়র কে হবেন, এ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর নির্মল দত্তের বক্তব্য, ‘‘দলের সঙ্গে যিনি থাকবেন, এমন কারও নামই দল ঘোষণা করুক। সেটাই সকলে মেনে নেবেন’’। উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে বিধাননগর এলাকায় ব্যাপক ভাবে পিছিয়ে ছিল শাসক শিবির। শুধুমাত্র নির্মল দত্তের ৩৮নং ওয়ার্ডেই লিড পেয়েছিল তৃণমূল। সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে যেভাবে দিনের পর দিন দলবিরোধী কাজের অভিযোগ উঠেছিল, সেই প্রেক্ষিতে নির্মল দত্তের বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
আরও পড়ুন: অনেক তৃণমূল নেতাই এবার দুর্গাপুজো দেখতে পাবেন না: রাহুল সিনহা
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন ধরেই নিজের দল তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সব্যসাচীর সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছিল। কয়েকদিন আগে বিদ্যুৎভবনে সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে দলেরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সব্যসাচী। এরপরই সব্যসাচীকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু করে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধাননগরের মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন ৩৫ জন কাউন্সিলর। অনাস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন সব্যসাচী। সেই মামলায় সব্যসাচীকে স্বস্তি দিয়ে হাইকোর্ট বিধাননগর পুরনিগমে আস্থা ভোট বাতিল করার নির্দেশ দেয়। তার পরের দিনই মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত
নেন সব্যসাচী।