Former Jharkhand BJP leader Kunal Sarangi: বাহরাগোড়ার প্রাক্তন বিধায়ক কুণাল সারঙ্গী। একসময় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-এর মধ্যে উদীয়মান তারকা ছিলেন। জামশেদপুরের এনআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক সারঙ্গীকে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন জেএমএমে এনেছিলেন। ২০১৯ বিধানসভা নির্বাচনের আগে পূর্ব সিংভূম জেলায় সামাজিক কাজ করে রাজনৈতিক খ্যাতি অর্জনকারী সেই সারঙ্গী জেএমএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।
বিজেপি সারঙ্গীকে মুখপাত্র করেছিল। ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছিল। তবে, তিনি হেরে যান। গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে আর টিকিট দেওয়া হয়নি। দুই মাস আগে সারঙ্গী বিজেপি মুখপাত্রের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ৭ জুলাই ঘোষণা করেন যে তিনি বিজেপি ত্যাগ করছেন। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখনও জানা যায়নি। ৪৩ বছর বয়সি রাজনীতিবিদ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন কেন তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। আর, এবার ছেড়েও দিলেন।
আপনি জেএমএম-এর একজন উঠতি রাজনীতিবিদ ছিলেন। কেন আপনি ২০১৮ সালে জেএমএম ছেড়েছিলেন, আর এখনই বা কেন বিজেপি ছাড়লেন?
আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ভেবেছিলাম বিজেপিতে সেটা করতে পারব। সর্বভারতীয় প্ল্যাটফর্ম পাব। এখন মনে হচ্ছে, আমি বিভ্রান্ত হয়েছি। রাজনীতির সূক্ষ্মতা বুঝতে পারিনি। আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করার পরে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব আমার বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। একজন বিজেপি সাংসদ, যাঁর নাম আমি বলতে চাই না, তিনি আমার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এবং ক্যাডারদের উসকানি দিয়েছেন। তৎকালীন জেলা সভাপতি রাজ্য নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিজেপি ছাড়ার আগে, আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে দলীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আমি মোটিভেশন হারিয়েছি বলেই ছেড়ে দিলাম।
আপনি কি জেএমএম এবং বিজেপির কাজের ধরনে পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন?
বিজেপি একটি বহুজাতিক কোম্পানির মত কাজ করে। যেখানে উদ্ভাবনের সুযোগ সীমিত এবং লোকেরা দিল্লির নির্দেশ অনুসারে একই পদ্ধতিতে কাজ করে। এছাড়াও, বিজেপিতে দলাদলি খুব বেশি। আর, জেএমএম একটা পরিবারের মতো। আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু জেএমএম-এর একটা অপূর্ণতা হল ভালো জনসংযোগ থাকা সত্ত্বেও দলটি বিজেপির মতো ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারেনি।
আপনি কি ঝাড়খণ্ড বিজেপির বাবুলাল মারান্ডি সমর্থক ও বিরোধী দলগুলোর কথা বলছেন?
দলে, বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী রয়েছে। তাই নিয়ে দলাদলি রয়েছে। দলাদলিতে সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যেমন, যদি কেউ তিন জন বিজেপি নেতাকে কোনও অনুষ্ঠানে ফুলের তোড়া দেয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিন্তু একটাই ছবি পোস্ট করে আনুগত্যের প্রমাণ দেয়।
আপনি তাহলে বলছেন, শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রম করে বিজেপিতে উচ্চপদে ওঠা সম্ভব নয়?
একজন মুখপাত্র হিসেবে গত সাড়ে চার বছর ধরে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে (হেমন্ত) সোরেনকে আক্রমণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, আমি রাজি হইনি। এতে কিছু নেতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুবসমাজের উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনও যুবককে লোকসভার টিকিট দেওয়া হয়নি। বিজেপি যে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ করেনি। ঝাড়খণ্ড বিজেপিতে মেধা বা কঠোর পরিশ্রমের কোনও স্থান নেই। এখানে উত্থান ধান্দাবাজির ওপর নির্ভরশীল। যা মোটিভেশন নষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট।
কিন্তু বিজেপি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর মত, একজন আদিবাসী নেতার উত্থানে সাহায্য করেছে, অমর বাউরির মত একজন দলিতকে ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা করেছে৷
এগুলো ভালো চেষ্টা। তবে, কাজের মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিত। শুধুমাত্র একটি বার্তা পাঠানোই সব নয়। ভালো কাজের মানসিকতা তৃণমূলস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। বিজেপি সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য পরিচিত। কিন্তু নতুন ফল্ট লাইন তৈরি করছে। আমাদের সভাপতি ছাড়াও, বিজেপি ঝাড়খণ্ডের সমীর ওরাওঁকে জাতীয় এসটি মোর্চার প্রধান করেছে। অর্জুন মুন্ডাকে মন্ত্রী করেছে। এত কিছু করার পরেও, বিজেপি ঝাড়খণ্ডে পাঁচটি উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় আসন হারিয়েছে। এখানে মৌলিকভাবে কিছু ভুল আছে। অর্থাৎ, বিজেপি ফেল। যার অর্থ হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না।
আপনার পদত্যাগে বিজেপির প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
আমি মুখপাত্র পদ থেকে পদত্যাগ করার পর দলের নেতৃত্বের কাছ থেকে একটিও ফোন পাইনি। আমি হতাশ এবং প্রতারিত। আমি যোগাযোগের রাস্তা তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু, রাজ্য বিজেপি আমাকে সাহায্য করেনি। আমি দল ছাড়ার পরই শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে বরং ফোন পেয়েছি।
আপনি জেএমএমে যোগ দেবেন বলে জল্পনা ছিল।
এটা ভিত্তিহীন। আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলাম যে এই বিষয়ে কোনও জল্পনা-কল্পনা চালালে আইনি নোটিশ পাঠানো হবে।
সোরেনের সাথে আপনার সমীকরণ কেমন?
আমি আমার নির্বাচনী রাজনীতির সোরেনের কাছে ঋণী। আমি সবেমাত্র ব্রিটেন থেকে ফিরে এসে কিছু সামাজিক কাজ করতে শুরু করেছি, সেই সময় সোরেন আমাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন।
আপনি কি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভাবছেন?
আমি আমার অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব। তবে শিগগিরই নির্বাচনী রাজনীতি ছাড়ছি না।