একদা সিপিএমের ডাকাবুকো নেতা। সিপিএম থেকে বহিষ্কারের পর পত্তন করেছিলেন নিজের দলের। এরপর সেই দল-সহ যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। কিন্তু, টিকতে পারেননি গেরুয়া শিবিরে। সূত্রের খবর, যোগ দিতে চাইছেন কংগ্রেসে। কিন্তু আসলে না কি কংগ্রেসের নাম করে সময় কিনতে চাইছেন তিনি। আর এই সময় কেনার কারণ, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার চেষ্টা। তিনি লক্ষণ শেঠ। হলদিয়ার একদা বেতাজ বাদশার অবস্থা এখন এমনই। এই মুহূর্তে কোনও দলেই কল্কে না পাওয়ায় রীতিমতো রাজনৈতিক সংকটে একদা পূর্ব মেদিনীপুরের 'বাঘ'।
রাজনীতিতে জার্সি বদল এখন নিত্যকার বিষয়। একেবারে ময়দানি খেলোয়াড়দের মতো অবস্থা বাংলার রাজনীতির কারবারিদের। নির্বাচিত হচ্ছেন একদলে, পরদিন সকালেই হয়ত দেখা যাচ্ছে অন্য দলের পতাকা বইতে। বামেদের ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার পর সিপিএমের তাবড় নেতা তথা ন'বারের বিধায়ক তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হয়েছেন। কংগ্রেস, সিপিএম-এর বেশ কয়েকজন নির্বাচিত বিধায়ক যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। কিন্তু লক্ষ্মণ শেঠ পদ্মশিবিরে গিয়ে ভিড়েছিলেন। সেই দল ছা়ড়ার পর নতুন কোনও দলে যোগ দেননি।
আরও পড়ুন: কংগ্রেসের কল্যাণে লক্ষণের বনবাসের অবসান?
কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য কথা বলেছেন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে। লক্ষ্মণ শেঠ কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন, তা নিয়ে বাজার সরগরমও হয়েছে। কিন্তু তাঁর যোগদান নিয়ে রাজ্য কংগ্রেসে মতবিরোধ হওয়ায় সেখানে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাহলে কি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চাইছেন? সমানভাবে এই গুঞ্জনও ছিল রাজ্য রাজনীতিতে। লক্ষ্মণবাবু এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, "তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা হয়নি।" অর্থাৎ তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। তাহলে আপাতত কোনও দলেই জায়গা হচ্ছে না লক্ষ্মণের। তবে মেদিনীপুরে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দিতে গেলে "বিশেষ ক্ষেত্রের" অনুমতির প্রয়োজন বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। সেই অনুমতি পাওয়াও কঠিন বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য।
সোমেবাবু স্পষ্ট বলেন, "লক্ষ্মণ শেঠ কংগ্রেসে যোগ দিতে চাইছেন। কিন্তু তাঁর যোগ দেওয়া নিয়ে দলের মধ্যে মতবিরোধ আছে। মতবিরোধ কাটাতে পারলে তিনি যোগ দেবেন। আর মতবিরোধ থাকলে এই অবস্থায় আমরা তাঁকে দলে নিতে পারব না।" প্রদেশ সভাপতি হিসাবে কি তাঁকে দলে চাইছেন?সোমেনবাবুর জবাব, "আমি দলের সকলের মত নিয়েই চলব। উনি নিজেই ফোন করেছিলেন। তা নিয়েই দলের মধ্যে আলোচনা করেছিলাম। সেই একই অবস্থা রয়ে গিয়েছে"।
বেতাজ বাদশা নিজে অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তিনি বলেন, "সোমেন মিত্র যখন অসুস্থ হয়েছিলেন তখন দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাঁর সঙ্গে ফোনেও কথা হয়েছে।" তৃণমূল কংগ্রেসের কারও সঙ্গে আপনার কোনও কথা হয়েছে? লক্ষ্মণবাবুর জবাব, "কারও সঙ্গে দেখা হয়নি।" তবে তৃণমূলের কোন নেতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তা খোলসা করেননি তিনি। তাই এখনকার মত লক্ষ্মণবাবুর জন্য কংগ্রেস, তৃণমূলের দরজা বন্ধ। অপেক্ষা করা ছাড়া তাঁর এখন কোনও গতি নেই।