কংগ্রেসের কল্যাণে লক্ষণের বনবাসের অবসান?

বাম, বিজেপি হয়ে তৃণমূলে ঢোকার ব্যর্থ প্রয়াসের পর এবার কি কংগ্রেসে ঘাঁটি স্থাপন করতে চলেছেন নন্দীগ্রাম 'খ্যাত', একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ লক্ষণ শেঠ?

বাম, বিজেপি হয়ে তৃণমূলে ঢোকার ব্যর্থ প্রয়াসের পর এবার কি কংগ্রেসে ঘাঁটি স্থাপন করতে চলেছেন নন্দীগ্রাম 'খ্যাত', একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ লক্ষণ শেঠ?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
laxman_seth

আপাতত কোনও দলেই ঠাঁই হচ্ছে না লক্ষ্মণ শেঠের।

লক্ষ্মণ শেঠ। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একদা বহুল পরিচিত নাম এবং মুখ। তমলুকের এই প্রাক্তন সিপিআইএম সাংসদ তাঁর কেন্দ্রে 'হলদিয়ার বাদশা' নামে পরিচিত ছিলেন। এই নামকরণের মধ্যেই নিহিত ছিল ওই অঞ্চলে তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যের চিত্র।

Advertisment

বাম সংগঠন দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। বাম নেতা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী সুকুমার সেনগুপ্তের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯৭২ সালে প্রথম সুতাহাটা থেকে বিধানসভার প্রার্থী হন, যদিও সে বছর হেরে যান। এরপর সুতাহাটা থেকে টানা তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি, এবং ১৯৯৮ সালের পর পদোন্নতি হয় তাঁর, কারণ ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তমলুক থেকে লোকসভার সাংসদ ছিলেন লক্ষণ শেঠ।

কিন্তু যে অঞ্চলের তিনি ছিলেন মুকুটহীন সম্রাট, সেখান থেকেই পতনেরও শুরু। পতনের মূলে নন্দীগ্রাম, ২০০৭। সাংসদ থাকাকালীন জোর করে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করাতে গিয়ে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েন শেঠ। এবং নন্দীগ্রাম আন্দোলনে যাঁর স্থান ছিল প্রথম সারিতে, সেই লক্ষ্মণ শেঠকে এলাকার মানুষ ভুলতে থাকেন। অবশেষে নন্দীগ্রাম আন্দোলন চলাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের জেরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

দীর্ঘদিন জেল খাটার পর রাজনৈতিক পথ পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন শেঠ। দলের বিরুদ্ধে নানা কুরুচিকর কথাবার্তা বলার কারণে সিপিআইএম থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি, যার পর ভারত নির্মাণ পার্টি বলে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কিন্তু নতুন দলের ঝক্কি যে চাট্টিখানি কথা নয়, সেই বোধোদয় ঘটার অব্যবহিত পরেই দলবল নিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। বিজেপিতে কিছুদিন থাকার পর দলের মধ্যে সেইভাবে দায়িত্ব না পাওয়ার অভিযোগে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ১৬ তারিখে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে বিজেপি ছাড়েন।

Advertisment

আরো পড়ুন: প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল

বিজেপি ছাড়ার পর তাঁর রাজনৈকি চিন্তাভাবনা নিয়ে জল ঘোলা হতে থাকে। শাসকদল তৃণমূলে যোগদান করার কথা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার কারনে তৃণমূল তাঁকে দলে নেয়নি। নানাভাবে চেস্টা করলেও তৃণমূলে ঠাঁই হয়নি, অথচ মনেপ্রাণে পেশাদার রাজনীতিবিদের রাজনীতি ছাড়া সময় কাটতে পারে না। তাই অবশেষে জাতীয় কংগ্রেসে যোগদানের আবেদন জানান। এবং সেই আবেদনে সাড়াও মিলেছে বলে জানাচ্ছেন প্রাক্তন সাংসদ।

তবে তিনি কবে দলে যোগদান করছেন তা এখুনি প্রকাশ করতে চাইছেন না শেঠ। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ অনুসারে চলতি মাসের ৪ কিংবা ৫ তারিখে কলকাতার বিধান ভবনে তিনি কংগ্রেসে যোগদান করবেন। তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেবেন জাতীয় কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসামের সাংসদ গৌরব গগই।

আরো পড়ুন: বিজেপি-তে যোগ দিলেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়

প্রাক্তন সিপিএম নেতা কংগ্রেসে যাবেন, এ নিয়ে রাজ্য রাজনীতির ঘোলা জল কি পরিষ্কার হতে চলেছে? তমলুকের বর্তমান লোকসভা সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী জানান, "লক্ষ্মণ এখন ব্রাত্য। সে কোন দলে গেলো তা নিয়ে ভাববার কিছু নেই। তবে কংগ্রেস যদি ওকে নেয়, তাহলে জাতীয় দল হিসেবে কংগ্রেসের এই রাজ্যে যেটুকু সম্মান ছিল তাও তারা হারাতে বসবে।"

বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস জানান, "আমার রাজনৈতিক জীবনে এই ধরনের মানুষ দেখিনি। তিনি একবার এই দলে, একবার ওই দলে যাচ্ছেন। এখন তিনি কংগ্রেসে যাবেন না এসইউসিতে যাবেন সে বিষয়ে আমরা ভাবছি না। উনি বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। আমাদের দলে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা গ্রহণ করেন নি। করলে ভালো করতেন।"

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি আনোয়ার আলির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে উনি ফোন ধরেন নি।

CONGRESS bjp tmc west bengal politics trinamul