অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আবারও একে অন্যের হাত ধরল বাম-কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের তিন আসনে উপনির্বাচনে জোট করেই লড়তে চলেছে বাম-কংগ্রেস। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র জানিয়েছেন, তাঁরা ‘একসঙ্গে লড়াই করবেন’। কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুর সদর কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে কংগ্রেস। অন্যদিকে, করিমপুর কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে বামেরা। তবে খড়গপুর সদর কেন্দ্রে বামেদের নয়, তৃণমূলকে সমর্থনের দাবি জানিয়ে সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখলেন আব্দুল মান্নান। যা ঘিরে নয়া চর্চা শুরু রাজ্য রাজনীতিতে।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বিমান বসু বলেন, ‘‘এনআরসি, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ, বেকারত্বের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে আমরা একসঙ্গে লড়াই চালাব। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বামেরা তিন আসনে উপনির্বাচনে লড়বে না। শুধুমাত্র করিমপুর কেন্দ্রে লড়ব আমরা। বৃহস্পতিবার ওই কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করব। একইরকম ভাবে কংগ্রেসও দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। উপনির্বাচনে আমরা একসঙ্গে প্রচার চালাব। তৃণমূল ও বিজেপিকে হারানোই আমাদের প্রথম লক্ষ্য’’। বিমান বসুর সুরে সুর মেলান সোমেন মিত্রও।
আরও পড়ুন: শোভন মমতার কাছে ফেরায় মুখ খুললেন রত্না
এদিকে, উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোট নিয়ে কংগ্রেসেই অসন্তোষ সামনে এসেছে। বিশেষত, খড়গপুর সদর কেন্দ্রে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট নিয়ে ‘আপত্তি’ তুলেছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। ওই কেন্দ্রে বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধার কথা জানিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছেন মান্নান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘জ্ঞান সিং সোহনপালের মৃত্যুর পর থেকে খড়গপুর শহরে আমাদের দল দুর্বল। সুতরাং, বিজেপিকে রুখতে হলে সেখানে তৃণমূল প্রার্থীকে সমর্থন করতে হবে। এতে বোঝা যাবে, পশ্চিমবঙ্গে আদৌ তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে কিনা’’।
আরও পড়ুন: প্রয়াত সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে লড়লেও উনিশের লোকসভার আগে আসন রফা নিয়ে চরম নাটকের পরেও শেষ পর্যন্ত পৃথকভাবেই লড়েছে হাত ও লাল পতাকা। এরপর উনিশের নির্বাচনে একটাও আসনে জয়ের মুখ দেখেনি বামেরা। আর কংগ্রেসের ঝুলিতে জুটেছিল ২টি আসন। তবে এই নির্বাচনেই বেনজির সাফল্য পেয়েছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা ভোটের ফলাফলে বিজেপির এই ‘বাড়বাড়ন্তের’ জন্য বাম-কংগ্রেসকেই দুষেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মমতা অভিযোগ করেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনে বামেদের হারানো ভোটের শতাংশ বিজেপির বেড়ে যাওয়া ভোট শতাংশের সমান। এরপর বিধানসভার অন্দর ও বাইরে বাম-কংগ্রেসকে হাতে হাত দিয়ে লড়াইয়ের বার্তাও দিয়েছেন মমতা। তবে শুধু মমতার বার্তাই নয়, এ রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের ফল স্পষ্ট করে দিয়েছে এই দু’দলেরই অস্তিত্বই সংকটের মুখে। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগের সেই অনড় মনোভাব ছেড়ে সম্ভবত নমনীয় হওয়ার বাস্তবতা অনুভব করেছে দু’দলই, এর টের পাওয়া গিয়েছিল, কিছুদিন আগে বিধানভবনে সোমেন মিত্রের সঙ্গে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের চা-চক্রে। যা ঘটেছিল ‘ইতিহাসে প্রথমবার’।
Read the full story in English