Advertisment

রাজ্যে ঘুম ভাঙল বামেদের, কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে পথে

রাজ্য় জুড়ে কেন্দ্রীয় নীতির প্রতিবাদে সামিল হলেন লক্ষাধিক মানুষ, জেল ভরো কর্মসূচী পালন করলেন বামপন্থীরা। আজ ত্রিপুরাতেও আইন অমান্য কর্মসূচীর ফলে প্রায় ২,০০০ বাম কৃষক ট্রেড ইউনিয়নের কর্মী গ্রেফতার বরণ করেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
CITU protest Express Photo Shashi Ghosh

দীর্ঘদিন পর আজ রাজ্যব্যাপী বাম বিক্ষোভের সাক্ষী হলো পশ্চিমবঙ্গ। ছবি: শশী ঘোষ

আজ দীর্ঘ ব্যবধানের পর রাজ্য জুড়ে একযোগে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা গেল বামেদের। পাশাপাশি একই কর্মসূচী অনুযায়ী আরেক প্রাক্তন বাম দুর্গ ত্রিপুরাতেও প্রায় ২,০০০ বাম কর্মী গ্রেফতার বরণ করলেন।

Advertisment

কলকাতায় কলেজে কলেজে তোলাবাজি কান্ডের সময় এসএফআই লালবাজার অভিযান করেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন একদা বিপ্লবী দলগুলিকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। রাজ্যে সিপিএম-সহ বামফ্রণ্টের অন্যান্য শরিক দলগুলিও আন্দোলন বিমুখ হয়ে পড়ছে বলে একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে কেন্দ্রীয় নীতির প্রতিবাদে সামিল হলেন লক্ষাধিক মানুষ, রাজ্য জুড়ে জেল ভরো কর্মসূচী পালন করলেন বামপন্থীরা।

CITU protest Express Photo Shashi Ghosh আজকের বিক্ষোভের শীর্ষে ছিল মূলত সিটু। ছবি: শশী ঘোষ

এদিন কলকাতা, নদিয়া, বারাসত, আলিপুরদুয়ার-সহ বিভিন্ন জায়গায় এই বিক্ষোভ চলে। ধর্মতলায় রাণি রাসমনি রোডে পুলিশের ব্য়ারিকেড এড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের একাংশ রাজ ভবন পৌঁছে যান। তারপর রাজ ভবনের গেটের সামনেও বেশ কিছুক্ষণ স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এদিন ধর্মতলায় বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্য়ান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, অনাদি সাহুরা। বিমানবাবু বলেন, "দেশ ও রাজ্যের সমস্ত আন্দোলন এক সূত্রে গেঁথে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।"

মূলত কেন্দ্রীয় কৃষি নীতির বিরুদ্ধেই এদিন পথে নামে বামেরা। কৃষক আত্মহত্যা, কৃষি ঋণ মুকুব, ফসলের ন্যায্য দামসহ আট দফা দাবির ভিত্তিতে জেল ভরো কর্মসূচি নিয়েছিল সারা ভারত কৃষক সভা। পরে এই কর্মসূচিতে সমস্ত বাম গণসংগঠন অংশ নেয়। কলকাতায় পথে নামে মূলত সিটু। তবে সঙ্গে ছিল ডিওয়াইএফআই, এসএফআইসহ একাধিক বাম সংগঠন। রাণি রাসমণিতে মিছিল পৌঁছলে পুলিশ আটকে দেয়। সেখানে পুলিশের ব্য়ারিকেড ভাঙার চেষ্টা হয়। হৈহৈ কান্ড বেঁধে যায় ধর্মতলায়।

CITU protest Express Photo Shashi Ghosh ধর্মতলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে মিছিলকারীদের। ছবি: শশী ঘোষ

সেখান থেকে ১৯ জনের একটি দল রাজ ভবনের গেটের সামনে চলে যায়, এবং বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাদের গ্রেপ্তার করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাসমণিতে অবস্থিত আন্দোলনকারীরা দাবি জানান, ধৃতদের সেখানে এনে ছাড়তে হবে। শেষমেশ ওই ১৯ জনকে রাসমণিতে এনেই মুক্তি দেয় পুলিশ। কলকাতায় মোট ৫,০০০ জনকে গ্রেফতারের কথা ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে, এদিন ডায়মন্ড হারবারে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং শমিক লাহিড়ী আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূল আশ্রিত কিছু দুষ্কৃতি তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে।

CITU protest Express Photo Shashi Ghosh ধর্মতলায় মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন বিমান বসু সহ অন্যান্য বাম নেতারা। ছবি: শশী ঘোষ

অন্যদিকে আজ ত্রিপুরাতেও রাজ্যব্যাপী আইন অমান্য কর্মসূচীর ফলে প্রায় ২,০০০ বাম কৃষক ট্রেড ইউনিয়নের কর্মী গ্রেফতার বরণ করেন। সব মিলিয়ে রাজ্যে এগারোটি জায়গায় কেন্দ্রীয় সরকারের তথাকথিত কৃষক এবং শ্রমিক বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। রাজ্যের সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল স্মৃতি রঞ্জন দাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডট কম-কে জানান, শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ১,৯৫০ জন গ্রেফতার হয়েছেন, যদিও এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, রাজধানী আগরতলায় বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস এবং জল কামান ব্যবহার করা হয়।

এদিকে সারা ভারত কৃষক সভার (AIKS) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক নারায়ণ কর অভিযোগ করেন, যে বিজেপি কর্মীরা ব্যাপক হারে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, "বিজেপি সমর্থিত গুন্ডারা সভায় আসার পথে কৃষকদের ওপর হামলা করেছে।" নারায়ণবাবু এও বলেন যে পুলিশের টিয়ার গ্যাস এবং জল কামানের নিশানা হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মাণিক সরকার।

agartala water cannon left rally ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় পুলিশের জল কামান মিছিলের ওপর। নিজস্ব চিত্র

বিজেপি মুখপাত্র মৃণাল কান্তি দেব অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, "ওঁরা যে আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে র‍্যালি করতে পারছে, এতেই প্রমাণ হয় যে আমাদের দিক থেকে কোনরকম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেওয়া হয় নি। আমাদের সমর্থকরা কাউকেই আক্রমণ করেন নি। এটি একটি ভিত্তিহীন দাবি, বাম দলগুলির খবরে আসার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।"

Left Movement left front
Advertisment