ফারাক ৫৩ বছরের। ১৯৬৬ সালের পর ২০১৯। বামেদের টানা দুদিনের ধর্মঘট। তখন বনধ ডেকেছিল রাষ্ট্রীয় সংগ্রাম সমিতি ও ১২ জুলাই কমিটি, ইস্যু ছিল কংগ্রেসের নীতি। এবার বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মঘটে বামেদের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সামিল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন। তবে রাজনীতির কারবারিদের মতে, এরাজ্যে বাম সংগঠনগুলি একদিনের ধর্মঘটই পালন করতে সক্ষম কী না সন্দেহ, সেখানে দুদিনের ধর্মঘটের ডাকে স্বভাবতই চিন্তিত বাম শিবিরের একাংশ।
মোদী সরকারের "জনবিরোধী নীতির" বিরুদ্ধে টানা ৪৮ ঘণ্টা দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ১০টি বাম কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। ৮ ও ৯ জানুয়ারির এই ধর্মঘটকে সমর্থন করেছে একাধিক দক্ষিণপন্থী শ্রমিক সংগঠনও। ব্যাঙ্কিং সেক্টরে বড় প্রভাব পড়তে পারে ধর্মঘটের। এদিকে এরাজ্যে এই ধর্মঘটের মোকাবিলায় নবান্ন কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। তবে রাজ্য সিপিএম এবং বাম ছাত্র-যুব সংগঠন ধর্মঘট সফল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, মঙ্গল ও বুধবার রাজ্যের জনজীবনকে অচল করাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হতে পারে বিভিন্ন এলাকা। বর্তমানে তৃণমূল ও বিজেপির লড়াইয়ের মাঝে পড়ে কার্যত উলুখাগড়ার অবস্থা বামেদের। পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে এই ধর্মঘটকে হাতিয়ার করতে চাইবেই তারা।
নীতিগতভাবে রাজ্য সরকার কোনওভাবেই বনধ বা ধর্মঘটকে সমর্থন করে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু মোদী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ধর্মঘট, তাই বামেরা তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন প্রত্যাশা করেছিল। সমর্থন দূরের কথা, ধর্মঘট মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। সরকারি কর্মীরা শুধু ধর্মঘটের দুদিন নয়, তার আগের বা পরের দিনও কোনও ছুটি নিতে পারবেন না। অর্ধদিবস বা পূর্ণ দিবস, কোনও ছুটিই নেওয়া চলবে না। ছুটি নিলেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। জবাবে সন্তুষ্ট না হলে কড়া পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মীর হাসপাতালে ভর্তি বা কোনও মৃত্যু সংক্রান্ত বিষয় থাকলে রেহাই মিলবে।
এদিকে পরিবহণ সূত্রে খবর, গঙ্গাসাগরের মেলা উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সরকারি ও বেসরকারি প্রায় তিন হাজার বাস রুট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। রবিবার থেকেই বেশ কিছু রুটে বাসের সংখ্যা কম ছিল। পরিবহণ দপ্তর জানিয়েছে, ধর্মঘটের দুদিন অতিরিক্ত ৫০০ বাস নামানো হবে। ৩০ শতাংশ বাড়তি ট্রাম ও জলযান চলবে। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হবে। ধর্মঘটের জন্য কোনওরকম জোর জবরদস্তি হলেই গ্রেপ্তার করা হবে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ধর্মঘটের দুদিনই অন্যদিনের মতই স্বাভাবিক থাকবে মেট্রো।
আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডে সমাবেশ করবে সিপিএম। তার আগে এই দুদিনের ধর্মঘট তাদের কাছে বড়সড় পরীক্ষা। অন্যদিকে রাজ্য সিপিএমের একাংশ এই দুদিনের ধর্মঘটকে শিরঃপীড়ার কারণ মনে করছে। ধর্মঘট মোকাবিলায় রাজ্য সরকার সাত বছর ধরেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ধর্মঘট ব্যর্থ করতে তৎপর। সেক্ষেত্রে ধর্মঘট সফল না হলে ব্রিগেডও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এরাজ্যে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে গিয়ে হিতে বিপরীতের আশঙ্কাও করছে বাম মহল।
তবে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ আগামী দুদিন জনজীবন সচল রাখার জন্য রাজ্য সরকারের ওপর আস্থা রেখেছেন। তিনি এদিন জানান, "যে সরকার বনধের বিরোধিতা করে দায়িত্ব পালন করবে সেই সরকারকে সমর্থন জানাব। আমরা চাই না দেশের উন্নয়নের পথে কেউ বাধা হোক।" জীবনযাত্রা সচল রাখার জন্য রাজ্য সরকার সচেষ্ট থাকবে বলে আশা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।