'আমরা পাঁচ বছরে যে কাজ করেছি, তা করতে কংগ্রেসের ২০ বছর লেগেছে', অরুণাচলে চিনের চিন্তা বাড়িয়ে সেলা টানেল উদ্বোধন করে বিরোধীদের কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ উত্তর-পূর্ব রাজ্যে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। সেই সঙ্গে সেলা টানেলেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
জনসাধারণের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, "উত্তর পূর্বের উন্নয়নের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য, পর্যটন এবং অন্যান্য সম্পর্কের একটি শক্তিশালী যোগসূত্র রয়েছে। আজ এখানে ৫৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।” তিনি বলেন, "আজ অরুণাচল প্রদেশের ৩৫ হাজার দরিদ্র পরিবার তাদের স্থায়ী ঘর পেয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ ও ত্রিপুরার হাজার হাজার পরিবার জলের সংযোগ পেয়েছে"।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, "উত্তর পূর্বের কথা মাথায় রেখে আমাদের সরকার বিশেষভাবে 'মিশন পাম অয়েল' শুরু করেছিল। আজ এই মিশনের অধীনে প্রথম তেল মিলের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই মিশন ভারতকে ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। গ্রামকে শুধু স্বনির্ভরই করবে না, এখানকার কৃষকদের আয়ও বাড়বে।"
বিরোধীদের আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, "আপনি জানেন বিজেপি সরকারের এতকিছু প্রচেষ্টার পর কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোট কী করছে ৷ অতীতে, যখন আমাদের সীমান্তে আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করা উচিত ছিল, তখন কংগ্রেস সরকার কেলেঙ্কারীতে জর্জরিত ছিল। আমাদের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলিকে বিশৃঙ্খল করে রেখে কংগ্রেস দেশের নিরাপত্তা নিয়ে খেলছিল কংগ্রেস। উত্তর-পূর্বের উন্নয়নে আমরা গত ৫ বছরে যত কাজ করেছি, যেভাবে বিনিয়োগ করেছি। সেই কাজ করতে কংগ্রেসের ২০ বছর সময় লাগত।"
প্রধানমন্ত্রী মোদী এদিন আরও বলেন, "অরুণাচল মোদীর গ্যারান্টি কী তা আপনারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। মোদীর গ্যারান্টি কীভাবে কাজ করছে তা গোটা উত্তর-পূর্ব দেখছে। বিদ্যুৎ, জল, রাস্তা, রেল, স্কুল, হাসপাতাল, পর্যটনের অগণিত প্রকল্প, উন্নয়ন এখানে এসেছে 'উন্নত উত্তর-পূর্বের গ্যারান্টি' হিসেবে।
সেলা টানেল প্রসঙ্গে মোদী বলেন, "২০১৯ সালে, আমি সেলা টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আজ এটি উদ্বোধন করা হয়েছে। " তিনি বলেন, "আজ উত্তর-পূর্ব, আমাদের অরুণাচল অনেক উন্নয়নমূলক কাজে গোটা দেশকে টপকে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০,০০০ কিমি জাতীয় মহাসড়ক তৈরি হয়েছে উত্তর-পূর্বে। যেখানে গত ১০ বছরে ৬,০০০ কিলোমিটারের বেশি জাতীয় মহাসড়ক তৈরি করা হয়েছে। আমরা এক দশকে প্রায় ততটাই কাজ করেছি যা ৭ দশকে হয়েছিল।"
পূর্ব লাদাখে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের চার বছর পূর্ণ হতে চলেছে। একই সময়ে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ শনিবার (৯ মার্চ) অরুণাচল প্রদেশে চিনের সীমান্তের কাছে কাছে বিশ্বের দীর্ঘতম দুই লেন বিশিষ্ট সেলা টানেলের উদ্বোধন করেছেন। এই টানেলটি ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। আজ চিনের চিন্তা বাড়িয়ে অরুণাচল প্রদেশে তৈরি সেলা টানেলের উদ্বোধন করলেন মোদী। প্রায় ১২ কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গটি হয়ে দ্রুত পৌঁছে যাওয়া যাবে চিন সীমান্ত সংলগ্ন তাওয়াং ও কামেং সেক্টরে। অরুণাচলকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চিন। এই নিয়ে দুদেশের মধ্যে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। লাদাখে থেকে শুরু করে অরুণাচল পর্যন্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চোখ রাঙাচ্ছে ড্রাগনের দেশ। যে কোন সময়ে গালওয়ানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তেমনটা হলে দ্রুত এই টানেল দিয়ে পৌঁছে যাবেন জওয়ানরা।
আরও পড়ুন : < India Maldives Relations: ভারত বয়কটের ডাকে পর্যটন খাতে গভীর প্রভাব, গর্জে উঠেও সুর নরম মালদ্বীপের >
সমুদ্রপৃষ্ঠের ১৩,০০০ ফুটের উপরে সুড়ঙ্গটি তৈরি করা হয়েছে। তাওয়াং ও কামেং সেক্টরে যাওয়ার পাহাড়ি পথ ছিল সংকীর্ণ। ট্যাঙ্ক ও সাজোয়াঁ যান চলাচল কার্যত ছিল অসম্ভব। ফলে দ্রুত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পৌঁছতে বেশ সমস্যায় পড়তে হত সেনাবাহিনীকে। সেলা টানেল হল ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত সুড়ঙ্গ রাস্তা যা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অরুণাচল প্রদেশের দুই দেশের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্তে সংযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
এই টানেলটি শুধু অরুণাচল প্রদেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্যও বিশেষ ভাবে কার্যকর। লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের (LAC) কাছাকাছি হওয়ায় সেলা টানেল ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য কৌশলগতভাবে সহায়ক বলে প্রমাণিত হবে। এই টানেলটি তাওয়াংকে অরুণাচল প্রদেশের সেই অংশগুলির সঙ্গে যুক্ত করবে যেগুলি প্রায়শই তুষারপাত বা ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এটি নির্মাণের পরে, তাওয়াং জেলায় প্রবেশাধিকার অক্ষত থাকবে সেনাবাহিনীর।
আরও পড়ুন : < Premium: অন্ধত্ব থামাতে পারেনি সবিতার লড়াইকে, চলার পথে লাখো মানুষের ভরসা এই দৃষ্টিহীন তরুণী >
সেলা টানেল প্রসঙ্গে একজন কর্মকর্তা বলেন, টানেলের ভেতরে অনেক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারীর কারণে এই টানেল নির্মাণে বিলম্ব হয়। এই টানেল নির্মাণের পর তাওয়াং হয়ে চিন সীমান্তের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার কমে যাবে। পাশাপাশি এদিন সকালে অসমের কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কে যান মোদী। সেখানে হাতির পিঠে সওয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।