Advertisment

উনিশের ভোটে শূন্য হাত কংগ্রেসের?

রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, মালদা ও মুর্শিদাবাদের চার সাংসদদের আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রতীক বদলে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কেউ লড়তে পারেন ঘাসফুল নিয়ে, কারও বা প্রতীক হতে পারে পদ্ম।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
congress Express photo Shashi Ghosh

রাজ্য়ে কংগ্রেসের আন্দোলনে এখন প্রদেশ নেতাদের দেখা মেলাই ভার। Express photo Shashi Ghosh

জয়প্রকাশ দাস

Advertisment

সিপিএম-কংগ্রেস যৌথ লড়াইও এ রাজ্যে বিজেপি-কে দু নম্বর হওয়া থেকে ঠেকাতে পারছে না। এতদিন এরকম একটা হিসেব মুখে মুখে ঘুরছিল, মহেশতলা বিধানসভা উপনির্বাচন সে অঙ্ক স্পষ্ট করে দিয়েছে। সিপিএম তাদের নিচের তলায় বিজেপির সঙ্গে জোটের কথা তীব্রস্বরে মাঝে মাঝে অস্বীকার করছে বটে, তবে গ্রাউন্ড রিয়েলিটি যে কী, তা হয় তাঁরা জানেন না, নয়তো অস্বীকার করছেন। এরই মাঝে ফ্যাসাদে পড়ে আছে কংগ্রেস। ২০১৬-র বিধানসভায় সিপিএমের সঙ্গে তাদের জোট দলকে সাইনবোর্ড হওয়া থেকে ঠেকাতে পারেনি। দল তো বটেই, দলের পুরনো মুখরাও এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছেন। তাঁদের রাজনৈতিক কেরিয়ার যে প্রায় তলানিতে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ অবস্থায় সাংসদ পদ ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে চার কংগ্রেস নেতা-নেত্রীর।

মালদহ দিয়েই শুরু করা যাক! সেই গণি খানের মালদহ, যেখান থেকে কয়েক দশক আগে সিপিএমকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখানো গিয়েছিল। এখন আর সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। তবে কংগ্রেসের এই পড়ন্ত বাজারেও দলের  দু দুজন সাংসদ আছেন এ জেলায়। গণিখান চৌধুরীর ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী, যিনি ডালুবাবু নামেই সমধিক পরিচিত, তিনি রয়েছেন মালদহ দক্ষিণে। মালদহ উত্তরের কংগ্রেস সাংসদ গণিখান চৌধুরীর ভাগ্নি মৌসম বেনজির নূর। মৌসমের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্পর্ক অত্য়ন্ত মধুর। বিশেষ করে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গে বরারবরই ভাল সম্পর্ক রেখে এসেছেন তিনি। বাংলার রাজনীতি নিয়ে তাঁর মুখ থেকে কখনও শাসকবিরোধী বক্তব্য শোনা যায়নি। অন্যদিকে সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে ডালুবাবু তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি  তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের এক তরুণ তুর্কি মন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছেন বলে তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন। কিন্তু তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের বেশি আগ্রহ মৌসমকে নিয়ে। তবে ডালুবাবু নিজে আগ বাড়িয়ে এলে তাঁকে দলে নিতে অসুবিধা নেই। তবে তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে তাঁদের দল ভাল অবস্থাতেই রয়েছে। গণিভ্রাতার দলে যোগ আলাদা করে কোনও লাভ তৃণমূলকে দেবে না। 

বীরভূমের সাংসদ প্রণবপুত্র অভিজিৎ পিতৃপরিচয়েই সাংসদ হয়েছেন, তাঁর কোনও রাজনৈতিক ইতিহাস নেই। কিন্তু সেই পিতার কারণেই ফ্যাসাদের মুখে পড়েছেন তিনি। প্রণবের নাগপুর যাত্রা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই প্রভূত ক্ষোভ রয়েছে। সেখানে গিয়ে যাই বলুন না কেন, তাঁর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র আপত্তির কথা জনসমক্ষেই ব্যক্ত করেছেন অভিজিতের সহোদরা প্রণবকন্যা দিল্লি কংগ্রেসের মহিলা শাখার শীর্ষ নেত্রী শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। ফলে কংগ্রেসের সাংসদপদ জঙ্গিপুর থেকে ধরে রাখা অভিজিতের পক্ষে কিঞ্চিৎ চাপেরই হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে অভিজিতের সম্পর্ক যথেষ্ট আন্তরিক, কারণ মৌসমের মতোই বাংলার রাজনীতিতে বিরোধী কোনও সুর তাঁর গলায় আজও পর্যন্ত শোনা গিয়েছে বলে মনে করা মুশকিল। তবে একই সঙ্গে আরও একটি গুঞ্জন রয়েছে। অনেকেই কানাকানি করছেন, গেরুয়াশিবিরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে প্রণবের নাগপুরযাত্রার সিদ্ধান্ত অনেকটা পুত্রের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। জঙ্গিপুরের সাংসদের বিজেপিতে যোগদান সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন অনেকেই।

বহরমপুরের রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য অধীর চৌধুরীর। এই এলাকায় নিজস্ব ক্যারিশমায় জয়ী হয়ে আসছেন রাজ্য় কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এবং তা ঘটছে দীর্ঘদিন ধরে। পঞ্চায়েতের ফল বহরমপুরে অধীর জয়ের ক্ষেত্রে ইতরবিশেষ হবে না বলেই ধারণা এলাকার মানুষজনের। অধীরের ঘনিষ্ঠসূত্র বলছে তিনি এখনও সিপিএমের সঙ্গে জোট নিয়েই আগ্রহী। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই কানাঘুষো চলছে অধীর পা বাড়িয়ে আছেন বিজেপি-র দিকে। রাজ্য বিজেপি-র নেতারা অধীরকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে যে আগ্রহী, সে কথাও তাঁরা গোপন করেননি। রাজ্য কংগ্রেসের যেসব নেতারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভোকাল, তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে থাকবে অধীরেরই নাম, ফলে বিজেপির তাঁকে নিয়ে আগ্রহ থাকাই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন Anti-BJP Alliance: কংগ্রেসের নেতৃত্বেই সফল হবে বিরোধী জোট, বলছেন সোমনাথ

রাজনৈতিক মহলের খবর, এরাজ্য়ে কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে আর কাউকে নেওয়া হবে না বলে দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্য়ে প্রাথমিক কথা হয়েছে। তবে রাজনীতিতে কথাখেলাপির হাজারো নজির রয়েছে। মুহূর্তে পরিস্থিতির বদল ঘটে যায়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনী ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস এরাজ্য়ের বাইরে অন্য় কোথাও আঁচড় কাটতে পারবে না। সেক্ষেত্রে এখানে আসন বাড়নোই যদি লক্ষ্য় হয়, তাহলে দুই দলের চুক্তি কতটা বাস্তবায়িত হবে সেই সন্দেহ থেকেই যায়। তবে কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেস কোনও পক্ষই এখন একে অপরের বিরুদ্ধে অল আউট লড়াইয়ে যাওয়ার অবস্থায় নেই। ২০১৯-এ অবিজেপি সরকার গঠনের পরিস্থিতি তৈরি হলে রাহুল ও মমতার একে অপরকে প্রয়োজন হবেই।

CONGRESS west bengal politics bjp tmc
Advertisment