সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলছে। আজ শুক্রবার লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে 'ক্যাশ ফর কোয়েরি' কাণ্ডে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হয়। এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশের পরই লোকসভায় তুমুল হট্টোগোলের সৃষ্টি হয়। যার জেরে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয় লোকসভার কার্যক্রম।
'মা দুর্গা এসেছেন, এখন দেখবেন মহাভারতের যুদ্ধ'…! এদিন লোকসভায় রিপোর্ট পেশের আগেই গর্জে উঠলেন মহুয়া মৈত্র। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আজ ৫ম দিন। নগদের বিনিময়ে প্রশ্ন কাণ্ডে আজ এথিক্স প্যানেলের রিপোর্ট লোকসভায় পেশ করা হয়। এদিন রিপোর্ট পেশ করার আগে টিএমসি সাংসদ বলেছেন যে,"মা দুর্গা এসেছেন, এখন আপনি মহাভারতের যুদ্ধ দেখতে পাবেন'। যখন মানবতার ধ্বংস হয়, তখন প্রথমে বুদ্ধির বিনাশ ঘটে। তারা 'বস্ত্রহরণ' শুরু করেছে, এবং আপনারা মহাভারতের যুদ্ধের সাক্ষী থাকবেন"।
শুক্রবার লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ক্যাশ ফর কোয়েরি কাণ্ডে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। নগদ কাণ্ডে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে মহুয়া মৈত্র সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন । দুপুর ২টোয় অধিবেশন শুরু হলে, এই রিপোর্ট দেখেই স্পিকার প্রস্তাবনা আনবেন। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ থাকবে কি না, তা আজই স্থির হয়ে যাবে। অন্যদিকে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এক চিঠিতে রিপোর্টের কপি হাতে পাওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টার সময় চেয়েছেন। তারপর এই নিয়ে আলোচনার দাবি জানানো হয়েছে।
নিশিকান্ত দুবের অভিযোগের পর মহুয়া মৈত্র মানহানির মামলা করেছিলেন। দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। মহুয়া মৈত্র সমস্ত অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মানহানিকর আখ্যা দিয়ে ক্ষতিপূরণেরও দাবি করেন। মহুয়া বলেন, এর ফলে তার মর্যাদা, সুনাম ও সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রের ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার ঘটনায় লোকসভার এথিক্স কমিটি আজ সংসদে তার রিপোর্ট পেশ করে। রিপোর্ট পেশের পর মহুয়ার বিরুদ্ধে সাংসদ পদ বাতিলের প্রস্তাব আনা হতে পারে। রিপোর্টে শুধু মহুয়ার সাংসদ পদ বাতিলের সুপারিশ ছাড়াও তার এই ধরণের কাজকে দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। বিজেপি এই বিষয়ে একটি হুইপ জারি করেছে এবং সকল সাংসদদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন : < Premium: বারুইপুরের অহঙ্কার পেয়ারা! হাজার-হাজার পরিবারের আয়ের দিশা এই চাষে >
লোকসভায় রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার পর, হাউস কমিটির সুপারিশের পক্ষে ভোট দিলে মহুয়া সংসদ পদ বাতিল হয়ে যাবে। বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদরা জোর দিয়ে বলেছেন, মহুয়া মৈত্রর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সুপারিশগুলি নিয়ে আলোচনা করা উচিত। বিএসপি সাংসদ দানিশ আলী বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে রিপোর্টটি লোকসভায় উপস্থাপন করা হলে, কমিটির সভায় আড়াই মিনিটের মধ্যে খসড়াটি গৃহীত হওয়ায় আমরা বিশদ আলোচনার জন্য জোর দেব।
মহুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী হিরানন্দানিকে সুবিধা দিতে ঘুষ নেওয়ার এবং আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ রয়েছে। মহুয়া নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে তিনি সাংসদ আইডি-পাস ওয়ার্ড শেয়ার করেছিলেন। মহুয়াকে ঘুষ দেওয়ার কথা এক হলফনামায় স্বীকার করেন হিরানন্দানিও।
৯ নভেম্বর বৈঠকে, বিজেপি সাংসদ বিনোদ কুমার সোনকারের নেতৃত্বে কমিটি ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে। মহুয়ার বিরুদ্ধে এই রিপোর্ট শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) লোকসভায় পেশ করা হয়। ‘ক্যাশ-ফর-কোয়েরি’ মামলায় মহুয়া মৈত্রকে সংসদ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে, ‘ক্যাশ-ফর-কোয়েরি’ মামলায় মহুয়ার বিরুদ্ধে রিপোর্ট ৪ ডিসেম্বর পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
মহুয়া মৈত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এথিক্স প্যানেলের সুপারিশ নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদ দানিশ আলি বৃহস্পতিবার বলেছেন যে রিপোর্টটি পেশ করা হলে, আড়াই মিনিটের মধ্যে খসড়াটি গৃহীত হওয়ায় আমরা পূর্ণ আলোচনার জন্য জোর দেব। ৯ নভেম্বর একটি বৈঠকে, বিনোদ কুমার সোনকারের নেতৃত্বে এথিক্স কমিটি মহুয়ার বিরুদ্ধে রিপোর্ট গ্রহণ করে। এই রিপোর্টে, ক্যাশ-ফর-কোয়েরি মামলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। ক্যাশ ফর কোয়েরির ক্ষেত্রে তৈরি ৫০০ পাতার রিপোর্ট গত মাসে ৬:৪ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে গৃহীত হয়।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে মহুয়া মৈত্রার বিরুদ্ধে তৈরি করা রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তিনি ২০১৯ এবং ২০২৩ এর মধ্যে চারবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ভ্রমণ করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে, সেখান থেকে তার সংসদ লগইন আইডি বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, মহুয়ার লগইন আইডি দুবাই থেকে ৪৭ ব্যবহার করা হয়েছে। মহুয়া মৈত্রার বিরুদ্ধে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এই চিঠিতে মহুয়ার বিরুদ্ধে উপহারের বিনিময়ে ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির নির্দেশে আদানি গোষ্ঠীকে টার্গেট করতে লোকসভায় প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে।
দানিশ আলি এবং কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী সহ অনেক বিরোধী নেতা এই রিপোর্টের বিরোধিতা করেছেন। বিরোধী সাংসদরা রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিপ্তে প্রশ্ন তুলে বলেছেন যে নিশিকান্ত দুবের দেওয়া অভিযোগের বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। প্যানেলের সুপারিশের পক্ষে হাউস ভোট দিলেই মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কার করা হতে পারে।
এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হল, হাউজে হট্টগোল। দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি লোকসভার কার্যক্রম
মহুয়া নিয়ে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেশের সময় ব্যাপক হট্টগোল হয়, যার জেরে লোকসভা মুলতবি করা হয় দুপুর ২টা পর্যন্ত।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণতা চরমে- সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
এদিকে লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর "ক্যাশ-ফর-কোয়েরি" কাণ্ডে কমিটির বহিষ্কারের সুপারিশকে "রাজনৈতিক প্রতিহিংসা" হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে আদানির ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ।
কী সুপারিশ এথিক্স কমিটির?
শুক্রবার 'ক্যাশ-ফর-কোয়েরি' মামলায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে এথিক্স কমিটির পেশ করা রিপোর্টে তাকে লোকসভার সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
রিপোর্টটি আজ লোকসভায় পেশ করা হয়। ৯ নভেম্বর বৈঠকে, বিনোদ কুমার সোনকারের নেতৃত্বে এথিক্স কমিটি "ক্যাশ-ফর-কোয়েরি" কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে তার রিপোর্ট গ্রহণ করে। কংগ্রেস সাংসদ প্রনীত কৌর সহ প্যানেলের ছয় সদস্য, যাদের আগে দল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, রিপোর্টের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
রিপোর্টটি এর আগে ৪ ডিসেম্বর সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে উত্থাপনের কথা থাকলে সেদিন তা লোকসভায় পেশ করা হয়নি। সূত্রের খবর, রিপোর্ট পেশের পর কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ বাতিলের প্রস্তাবও আনা হবে।
কোন সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি, যারা অভিযোগ করেছে তাদের জেরা করার চেষ্টা করা হয়নি: শশী থারুর
লোকসভায় ক্যাশ ফর কোয়েরি কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ করার পরে, কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেছেন, "কোনও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি, যারা অভিযোগ করেছে তাদের জেরা করার কোন চেষ্টা করা হয়নি এবং একই সঙ্গে একজন সাংসদকে বহিষ্কারের মত একটি বড় শাস্তির উপসংহার - গুরুতর বিবেচনা ছাড়াই, সত্যিই লজ্জাজনক।
এর আগেও একই ধরনের অভিযোগে সাংসদদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে
এর আগে ২০০৫ সালে ঘুষ নেওয়া ও প্রশ্ন করার অভিযোগে ১১ জন সাংসদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন, চলবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যেই মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কী বললেন তৃণমূল সাংসদ?
মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে লোকসভার এথিক্স কমিটির রিপোর্ট নিয়ে লোকসভায় আলোচনা চলছে। এই আলোচনার তীব্র বিরোধিতা করেছে টিএমসি। দলের সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি বলেছেন, সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মহুয়া মৈত্রের কথা বলার সুযোগ পাওয়া উচিত।