অবশেষে মধ্যপ্রদেশে মিটতে চলছে 'আস্থা' সমস্যা। সরকার গঠন করতে হলে আগামিকালই করতে হবে 'আস্থা ভোট', এমনটাই জানিয়ে দিলেন মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল লালজি ট্যান্ডন। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথকে একটি চিঠি লিখে তিনি জানিয়ে দেন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে হলে মঙ্গলবারই আস্থা ভোট করতে হবে কমলনাথের সরকারকে। যদি তা ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হবে বর্তমান সরকারের রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
কমলনাথ সরকারের শক্তি পরীক্ষা হল না। করোনা আতঙ্কের জেরে ২৬ মার্চ পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার অধিবেশন পিছিয়ে দিলেন স্পিকার এন পি প্রজাপতি। এদিন বিধানসভা শুরু হতেই হইহট্টগোল শুরু হয়। তারপরই অধিবেশন ১০ দিন পিছিয়ে দেন স্পিকার।
এরপরই ১০৬ বিধায়ককে নিয়ে রাজভবনে পৌঁছে যান বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। আগামী ১২ ধন্টার মধ্যেই বিধানসভায় আস্থা ভোটের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন চৌহান সহ ৯ বিধায়ক। মঙ্গলবারই সেই আবেদনের শুনানি হবে। তবে, কংগ্রেস সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে বলে এদিনও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ।
রাজ্যপাল নির্দেশ দিলেও সোমবার আস্থা নাও হতে পারে বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্পিকার। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল যে, করোনার কথা বলে আস্থা ভোট স্থগিত করতে চাইছে হাত শিবির। রবিবার রাতে আস্থা ভোট প্রসঙ্গ উঠতেই স্পিকার জানান, 'কাল্পনিক একটি বিষয়। করোনাভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আমি বেশি চিন্তিত। আস্থা ভোট হবে কিনা তা সোমবার রাজ্যপালের নির্দেশের পরই জানাব।'
এদিকে রবিবার রাতে মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার তরফে দেওয়া কার্যসূচিতে আস্থা ভোটের কোনও উল্লেখ না থাকায়ও বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। সেখানে শুধু রাজ্যপালকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। রাজ্যপালের ভাষণের কথা উল্লেখ থাকলেও ছিল না কমলনাথ সরকারের আস্থা ভোট প্রসঙ্গ।
আরও পড়ুন: আস্থা ভোটে চমকের ইঙ্গিত ‘পোড় খাওয়া’ দ্বিগিজয়ের
শনিবার রাতেই মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল লালজি ট্যান্ডন নির্দেশ দেন যে, সোমবার কমলনাথ সরকারের আস্থা ভোট হবে। আজ থেকেই বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শুরু হবে। রাজ্যপাল জানিয়েছেন, তাঁর ভাষণের পরেই আস্থা ভোট হবে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া স্বাধীন ও পেশাদারকে দিয়ে ভিডিও করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাংবিধানিক প্রধানের পক্ষ থেকে।
ধ্যপ্রদেশের কুর্সিই আপাতত পাখির চোখ বিজেপির। গত শুক্রবার রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা কমল নাথের সাক্ষাতের পরই নড়েচড়ে বসে গেরুয়া শিবির। অবিলম্বে মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় আস্থা ভোট করা হোক, শনিবার রাজ্যপাল লালজি ট্যান্ডনের কাছে এমন আর্জিই জানিয়েছিলেন পদ্ম দলের নেতারা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল ওইদিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন।
উল্লেখ্য, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার কংগ্রেস ত্যাগের পর থেকেই বেসামাল কমল নাথ সরকার। ২২ জন কংগ্রেস বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছেন। বিজেপির দাবি, ২২ জন বিধায়কের ইস্তফার জেরে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে কমল নাথ সরকার। ওই ২২ বিধায়কদের প্রলোভন দেখাচ্ছেন কমল নাথ, এমনই অভিযোগ বিজেপির।
২৩০ আসন বিশিষ্ট মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ১১৬। ২০১৮ ভোটের ফলাফল অনুশারে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ১১৪। বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ছিল ১০৭। বিএসপির ২, সমাজবাদী পার্টির ১ এবং বাকি ৪ জন নির্দল। কংগ্রেস এবং বিজেপির একজন করে বিধায়ক এর মধ্যে প্রয়াত হয়েছেন। তাই দুটি আসন ফাঁকা পড়ে আছে।
এদিকে, কমল নাথের অনুরোধে তাঁর সরকারের ৬ মন্ত্রীর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছেন স্পিকার। অর্থাৎ, এই মুহূর্তের বিধানসভার মোট আসন কমে দাঁড়িয়েছে ২২২। ম্যাজিক ফিগার ১১২। ৬ মন্ত্রীর ইস্তফাপত্র গৃহীত হওয়ার পর খাতায় কলমে কংগ্রেসের হাতে বিধায়ক রয়েছেন ১০৮ জন। এছাড়াও নির্দল এবং সপা-বসপার সমর্থনে মোট আসন সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১১২ জন। মুশকিল হল, কংগ্রেসের ১০৮ জনের মধ্যে আবার ১৬ জন ইস্তফা পেশ করেছেন। তাঁদের ইস্তফাপত্র গৃহীত হলে কংগ্রেস কমে দাঁড়াবে ৯২-এ। আর বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ১০৬-এ। সেক্ষেত্রে বিধানসভার মোট কার্যকরী আসন সংখ্যাও কমে দাঁড়াবে ২০৬। ম্যাজিক ফিগার হবে ১০৪। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা কার্যত অসম্ভব।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন