ভারতে জম্মু-কাশ্মীরের যোগদানের সময় মহারাজা হরি সিংয়ের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। সেই হরি সিং-কেই বর্তমানে বিজেপি হিন্দুপ্রধান জম্মুতে হিন্দুত্ব, গর্বিত হিন্দু এবং জম্মুর প্রকৃত রক্ষাকর্তা হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর বক্তব্য। যিনি দাবি করেছেন, ১৯৪৭ সালের অক্টোবরের অনেক আগেই মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, জওহরলাল নেহরুর পক্ষপাতিত্ব ও শেখ আবদুল্লার কারণে তা বিলম্বিত হয়।
শেষপর্যন্ত পাকিস্তানের আক্রমণ ভারতের সঙ্গে মহারাজা হরি সিংয়ের চুক্তিকে ত্বরান্বিত করে। তবে, বিজেপি এই দাবি করলেও মহারাজা হরি সিংয়ের ছেলে করণ সিং জানিয়েছেন, তিনি কখনও এমন কোনও তথ্য পাননি যাতে স্পষ্ট হয় যে মহারাজা হরি সিং স্বাধীনতার আগেই ভারতে যোগদান করতে চেয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ নেহরুর হয়ে মুখ না-খোলার জন্য করণ সিংকে দোষারোপ করেছেন।
হিন্দুত্বের জন্য জম্মু অঞ্চলে বিজেপির একটা প্রভাব রয়েছে। আর, সেই প্রভাবের জন্যই গেরুয়া শিবির ২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে (মোট ৮৭টির মধ্যে) জম্মু থেকে ২৫টি আসন জিতেছিল। যার জেরে শেষ ডোগরা রাজা হরি সিং যেন ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠছেন। ইতিমধ্যেই হরি সিংয়ের নামের সঙ্গে দুটি সরকারি ছুটি যুক্ত হয়েছে। প্রথমটি ২৬ অক্টোবর, ২০১৯-এ ঘোষণা করা হয়েছিল। 'অ্যাকসেসন ডে' উদযাপনের অংশ হিসেবে (মোদি সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার কয়েক মাস পরে)। আর, দ্বিতীয়টি এই বছর ২৩ সেপ্টেম্বর হরি সিংয়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- কপিরাইট ভেঙে ‘ভারত জোড়’-এ বাজছিল গান, ভুল স্বীকারে বাঁচল কংগ্রেসের টুইটার অ্যাকাউন্ট
একইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন তার গেজেটেড ছুটির তালিকা থেকে শহিদ দিবস এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আবদুল্লার জন্মবার্ষিকীকে বাদ দিয়েছে। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত কাশ্মীরের রাজা ছিলেন ডোগরা শাসক হরি সিং। জম্মু-কাশ্মীরে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে অবশ্য হরি সিংকে সামন্ত প্রভু হিসেবে দেখানো হয়েছে কংগ্রেসের জমানায়।
এর আগে হরি সিংয়ের বিরুদ্ধে বক্তৃতার জন্য ১৯৩১ সালে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল তৎকালীন জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। ওই বিক্ষোভকারীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখালে ১২ জুলাই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করেছিল হরি সিংয়ের সেনারা। সেই দিনটিকে আবদুল্লাদের জমানা থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন কাশ্মীরে শহিদ দিবস হিসেবে দেখানো হত। সেটাও বাতিল করেছে বর্তমান প্রশাসন।
Read full story in English