বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, "যত শীঘ্র সম্ভব" মহারাষ্ট্র বিধানসভা এবং পরিষদের মোট ন'টি শূন্য আসনের জন্য নির্বাচন এবং মনোনয়ন ঘোষণা করতে।
যেহেতু শিবসেনা সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বিধানসভা বা বিধান পরিষদ কোনোটিরই সদস্য নন, নিজের কুর্সি টিকিয়ে রাখতে গেলে তাঁকে চলতি বছরের ২৪ মে'র মধ্যে নির্বাচিত বা মনোনীত হতে হবে। গত ২৪ এপ্রিল থেকে খালি পড়ে থাকা এই ন'টি আসন পূর্ণ হলে রাজ্যের বর্তমান সাংবিধানিক সঙ্কট কাটবে।
তাঁর চিঠিতে রাজ্যপাল লিখেছেন যে দেশব্যাপী লকডাউনের ক্ষেত্রে একাধিক ছাড় ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। "এই পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট কিছু বিধি মেনে পরিষদের আসনের নির্বাচন হতে পারে," লিখেছেন তিনি। করোনা সঙ্কটের জেরেই এতদিন এই আসনগুলির জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছিল নির্বাচন কমিশন।
কী এই সাংবিধানিক সঙ্কট?
করোনাভাইরাস মহামারীর জেরে ইতিমধ্যে রাজ্যসভা নির্বাচন, বেশ কিছু উপনির্বাচন, এবং পুরসভা নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। গত বছরের ২৮ নভেম্বর শপথ গ্রহণ করেন ঠাকরে, এবং সংবিধানের ১৬৪ (৪) ধারা অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাস শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত অথবা মনোনীত হতে হবে।
রাজ্যপালের মনোনয়ন ‘কোটা’ থেকে মহারাষ্ট্র বিধানসভার উচ্চকক্ষে ঠাকরের মনোনয়নের সুপারিশ ইতিমধ্যেই করে দিয়েছে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রীগোষ্ঠী, তবে এই মনোনয়ন অনুমোদন করেন নি রাজ্যপাল কোশিয়ারি। কিছু বিজেপি নেতার মতে, এই অনুমোদনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১-র কয়েকটি বিধান।
দুটি ক্ষেত্রে এই শূন্য পদে মনোনয়ন বা নির্বাচন হতে পারবে না - ১) আসনের অবশিষ্ট মেয়াদ এক বছরের কম হলে; ২) কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যদি নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা করা কঠিন। বিধান পরিষদের দুটি আসনের মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে ৬ জুন। ঠাকরে যদি সময়সীমার মধ্যে নির্বাচিত না হতে পারেন, তবে রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়বে তাঁর মহারাষ্ট্র বিকাশ আঘাড়ি সরকার। কারণ সে ক্ষেত্রে সংবিধান মেনে মন্ত্রীগোষ্ঠী সমেত মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।
বুধবার সঙ্কট কাটাতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানান শিবসেনা সুপ্রিমো। এক সূত্রের কথায়, “উনি (ঠাকরে) নিজের মনোনয়ন নিয়ে কথা বলতে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন। সাহায্য চেয়ে বলেন, মনোনীত না হলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।” ওই সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এ ব্যাপারে বিশদ জেনে তিনি খতিয়ে দেখবেন।
কেন মোদীকে ফোন?
মঙ্গলবার রাজ্য ক্যাবিনেটের এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অনুরোধ জানায়, বিধান পরিষদের শূন্য আসনে ঠাকরের মনোনয়নের অনুমোদন করতে। সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্র বিকাশ আঘাড়ি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে "দায়বিমুখ" থাকেন রাজ্যপাল। এর ফলেই সম্ভবত ঠাকরে "বাধ্য" হন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করতে।
রাজ্যের শাসক জোটের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে নিজের সামনে সম্ভাব্য কী পথ খোলা রয়েছে, তা নিয়ে বর্ষীয়ান এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে আলোচনা করেন ঠাকরে। ওই নেতার কথায়, "প্রথম হলো নির্বাচন কমিশনকে পরিষদের নির্বাচন করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লেখা। যেহেতু এক্ষেত্রে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্ন নেই, সেহেতু আমরা চাই, কমিশন নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ২১ দিনের সময়সীমা কমিয়ে দিক। দ্বিতীয়, সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করা যেন কমিশনকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।"
তৃতীয় পন্থা হলো ঠাকরে পদত্যাগ করুন, এবং তিন জোটসঙ্গীর বৈঠক ডেকে তাঁকে নেতা হিসেবে নির্বাচন করিয়ে ফের সরকার গঠন করুন, বলেন ওই নেতা। তবে তিনি এও যোগ করেন, "আমাদের মনে হয় না তার প্রয়োজন হবে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই পরিষদে ঠাকরেকে মনোনয়ন করবেন রাজ্যপাল।"
প্রতিবাদে শিবসেনা, অনমনীয় বিজেপি
প্রত্যাশিতভাবেই রাজ্যপাল কোশিয়ারির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপির একদা জোটসঙ্গী শিবসেনা, কিন্তু স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের মনে সহযোগিতার কোনও ভাবনাই নেই। পূর্বোক্ত বিজেপি নেতার কথায়, “শিবসেনা শুধু যে বিজেপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাই নয়, ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজেপির প্রতি যথেষ্ট শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করেছে। এমনকি COVID সঙ্কটের সময়েও স্থানীয় বিজেপি শাখা বা কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে নি রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের দেওয়া খাদ্যশস্য পর্যন্ত বিতরণ করে নি।”
আরেক রাজ্য বিজেপি নেতার মন্তব্য, “উদ্ধব ঠাকরেকে কেন সাহায্য করবে বিজেপি? তাঁর দল তো আগে আমাদের জিজ্ঞেস করত, আমাদের বিধায়ক কবে মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। এখন ওরা চায় আমরা বলে দিই কখন ওদের মুখ্যমন্ত্রী বিধায়ক হবেন?”
পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে 'আগ্রহী নন' ফড়নবিশ
রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বুধবার বলেন, মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে "পেছনের দরজা" দিয়ে ঢুকতে আগ্রহী নয় বিজেপি।
তিনি বলেন, "আমরা নিশ্চিত যে রাজ্যপাল আইনি এবং সাংবিধানিক পরিধি মেনেই যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন, এবং উদ্ধব ঠাকরেকে পরিষদে মনোনীত করবেন। আমি আরও একবার বলতে চাই যে উদ্ধব ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখলে খুশিই হবে বিজেপি। রাজ্যে অস্থিরতা চাই না আমরা।" বিরোধী পক্ষ ঠাকরের মনোনয়নে বাধা দিচ্ছে, এই অভিযোগ খণ্ডন করে ফড়নবিশ বলেন, "আমরা না অস্থিরতা সৃষ্টি করতে আগ্রহী, না পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন