বাদানুনাদ, উত্তর-প্রতিউত্তরে ক্রমশই জমে উঠছে মহারাষ্ট্রের মহানাটক। জমে উঠছে 'কাকা-ভাইপো'র রসায়ন। রবিবার ভাইপো অজিত পাওয়ারের টুইটের প্রত্যুত্তরে শরদ পাওয়ার বলেন, "বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধার কোনও প্রশ্নই নেই। শিবসেনা ও কংগ্রেসের সঙ্গেই আছে এনসিপি। অজিত পাওয়ারের বিবৃতিটি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। ভুল ধারণা ছড়িয়ে মানুষকে ভুল দিকে চালনা করতে চেষ্টা করছে।" রবিবার সদ্য ফড়নবীশের সঙ্গে হাত মেলানো শরদ পাওয়ার 'ভাইপো' অজিত পাওয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি টুইট করে লিখলেন, "আমি এনসিপিতেই আছি। পাওয়ার সাহেব আমাদের নেতা। আমাদের বিজেপি-এনসিপি জোটই মহারাষ্ট্রে আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গড়তে সমর্থ হবে। মানুষের জন্য এবং রাজ্যের জন্য কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।" প্রসঙ্গত, শরদ পাওয়ারের শক্তি হ্রাস করে পদ্ম শিবিরকে সমর্থনের জেরে শনিবারই পদ খুইয়েছেন অজিত পাওয়ার। এহেন পরিস্থিতিতে অজিত পাওয়ারের মন্তব্য অস্বস্তি বাড়ল এনসিপি অন্দরে।
There is no question of forming an alliance with @BJP4Maharashtra.
NCP has unanimously decided to ally with @ShivSena & @INCMaharashtra to form the government. Shri Ajit Pawar’s statement is false and misleading in order to create confusion and false perception among the people.— Sharad Pawar (@PawarSpeaks) November 24, 2019
I am in the NCP and shall always be in the NCP and @PawarSpeaks Saheb is our leader.
Our BJP-NCP alliance shall provide a stable Government in Maharashtra for the next five years which will work sincerely for the welfare of the State and its people.
— Ajit Pawar (@AjitPawarSpeaks) November 24, 2019
এদিকে, রবিবার সুপ্রিম কোর্টেও মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ইতি হল না। মহারাষ্ট্রের আস্থা ভোট নিয়ে ফের সোমবার সকাল সাড়ে ১০-টায় শুনানি হবে বলে জানাল সর্বোচ্চ আদালত। ফড়নবীশ সরকারকে যে এনসিপি বিধায়করা সমর্থন করেছেন, তার চিঠি চাইলেন সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
বিজেপি আত্মবিশ্বাসী হলে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ সরকার আজই বিধানসভায় আস্থা ভোটে অংশ নিক। সুপ্রিম কোর্টে শুনানির শুরুতেই এই মর্মেই সওয়াল করলেন আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতা কপিল সিবাল ও অভিষেক মনু সিংভি। তারা জানতে চান শনিবার রাতে এনসিপির ৪১ বিধায়কের সমর্থনে অজিত পাওয়ারকে পরিষদীয় দলের নেতা পদ থেকে সরানো হয়েছে। পরিষ্কার যে এনসিপি বিজেপিকে সমর্থন করছে না। তাহলে কীভাবে অজিত পাওয়ারকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা হল? সুপ্রিম কোর্টর তিন সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চও এই সময় জানায়, আস্থা ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন: অজিত পাওয়ার: এনসিপির গলার কাঁটা
এরপরই আদালতে সওয়াল করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল মুকুল রোহতগি। তিনি জানান, 'সরকার গঠনের জন্য সব পক্ষকেই এর আগে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল। আবেদনকারীরা তিন সপ্তাহ ধরে ঘুমোচ্ছিলেন। তারা আস্থা ভোটের জন্য আবেদন করতেই পারেন। এটা তাদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু সব আইন মেনেই হয়েছে। তাই আজই কোনও নির্দেশ দিতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। '
কোর্ট জানায়, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের জন্য রাজ্যপালকে যে চিঠি বিজেপি দিয়েছিল তা আদালতে জমা দিতে হবে সোমবার। একইসঙ্গে এনসিপি-র বিজেপি সমর্থনকারী বিধায়কদের চিঠিও আদালতে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যপাল-বিজেপির চিঠি আদানপ্রদানের সব নথি পেশ করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট।
ফড়নবীশ সরকারের দ্বিতীয়বারের জন্য মহারাষ্ট্রের সরকার গঠনের প্রক্রিয়া অবৈধ। তা বাতিলের দাবিতে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের দায়ের করে সর্বোচ্চ আদালতে। সেই মামলারই শুনানি চলছে বিচারপতি এন ভি রামান্না , বিচারপতি অশোক ভূষণ ও সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চে।
এদিকে ঘর গুছোতে তৎপর এনসিপি নেতৃত্ব। দলের নেতা নবাব মালিক জানিয়েছেন, 'অজিত পাওয়ারের সঙ্গে বিজেপিকে সমর্থনকারী এনসিপি বিধায়করা আজ বিকেলের মধ্যেই দলে ফিরে আসবে। অজিত পাওয়ার ভুল করেছেন। তাঁকে বোঝানো হচ্ছে। তবে এখনও সাড়া মেলেনি। আস্থা ভোট হলে হারবেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। তাই আগেই তিনি পদত্যাগ করুন।' শনিবার রাতেই এনসিপির পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে ভাইপো অজিত পাওয়ারকে সরিয়ে দিয়েছেন শরদ পাওয়ার।
শনিবার নাটকীয় মোড় নেয় মহারাষ্ট্রের রাজনীতি। ভোরে প্রত্যাহার করা হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। সকাল আটটার কিছু পরেই রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী হন এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: কোন কৌশলে মহারাষ্ট্রে অজিত পাওয়ারকে পাশে পেল বিজেপি?
শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে এনসিপি সভাপতি শরদ পাওয়ার জানিয়ে দেন, 'দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন অজিত পাওয়ার। বিজেপিকে সমর্থনকারী এনসিপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে অভিযোগ জানানো হবে।' তবে বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া পাওয়ার জানাতে ভোলেননি, 'মহারাষ্ট্রে সরকার গড়বে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস জোটই।' অজিত পাওয়ারকে চ্যালেঞ্জ করে সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বলেন, 'শিবসেনার বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। মহারাষ্ট্র ঘুমিয়ে থাকবে না।'
শনিবারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন বিধায়ক শনিবার সেনা-এনসিপির সাংবাদিক হাজির ছিলেন। তাঁদের কথায়, 'কোনও কিছু না জানিয়েই তাদের অজিত পাওয়ার রাজভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন।' রবিবারও এই ধারা অব্যাহত। বিধায়ক দৌলাত দোরাদো ভিডিও বার্তায় বলেন, তিনি শরদ পাওয়ারের এনসিপির পক্ষেই রয়েছেন। একই দাবি করেন আমেদপুরের এনসিপি বিধায়ক বাবাসাহেব মোহনরাও পালিত। এরা বিজেপিকে প্রথমে সমর্থন দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
VIDEO | Maharashtra: "I am perfectly safe. Having contested under the clock symbol, there is no question of leaving the NCP," says "missing" MLA Daulat Daroda. For LIVE updates, click here: https://t.co/aHBThPmgb4 pic.twitter.com/X66wxdJfVU
— The Indian Express (@IndianExpress) November 24, 2019
২৮৮ আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোটে এবার কোনও দলই সরকার গড়ার একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি। ভোটের ফলাফলের পর মুখ্যমন্ত্রীত্বের প্রশ্নে বিভেদ ধরে শিবসেনা-বিজেপি জোটে। এবার ভোটে বিজেপি পায় ১০৫ আসন। এনসিপির দখলে রয়েছে ৫৪ আসন। কংগ্রেস ও শিবসেনা পায় যথাক্রমে ৪৪ ও ৫৬ আসন। এক্ষেত্রে সরকার গড়তে বিজেপির প্রয়োজন ১৪৫ বিধায়কের সমর্থন। প্রথম পর্যায়ে তা জোগাড়ে ব্যর্থ হয় গেরুয়া শিবির। শিবসেনার নেতৃত্বে চলে 'বিকল্প' জোট গঠনের তোড়জোড়। রাজ্য রাজনীতির গতি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে রেখেছিল পদ্ম শিবির। এনসিপির অন্দরে বিরোধের গন্ধ পেতেই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন ফড়নবীশরা।
Read the full story in English